তৃণমূলের তালিকা প্রকাশ হতেই চরম ক্ষোভ জায়গায় জায়গায়, দলের নীতি নিয়েই উঠছে প্রশ্ন


Tmc



সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান ১৪ জুন – অবশেষে বিতর্ক তুঙ্গে তুলেই বুধবার প্রকাশিত হল তৃণমূল কংগ্রেসের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা। আর এই তালিকা প্রকাশ হতেই শুরু হয়ে গেল তীব্র বিতর্ক এবং ক্ষোভ। বুধবার প্রকাশিত তালিকায় পূর্ব বর্ধমানের জেলা পরিষদের ৬৬টি আসনের মধ্যে ৪৫টি নতুন মুখ নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে আবার ২জন প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্যকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন মেমারী ১নং ব্লকের ৩০নং জেলা পরিষদ আসনে বিমল সোরেনকে এবং ভাতার ব্লকের ৩৮নং জেলা পরিষদ আসনে শান্তনু কোনারকে। 



৬৬টি আসন বিশিষ্ট বর্ধমান জেলা পরিষদের এই প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই মেলেনি একাধিক উল্লেখযোগ্য সদস্যের। যার মধ্যে রয়েছেন জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম, কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল, শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দেবাশীষ নাগ, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্ত সহ জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল হাসান প্রমুখরা। আর এই ঘটনায় রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা জেলা জুড়েই। খোদ দলেরই একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এই প্রার্থী তালিকা তৈরী করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিধায়কের দেওয়া তালিকা অনুসারেই। অভিযোগ উঠেছে, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই দলের ব্লক সভাপতিদের কোনো তালিকাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি খোদ দলের মধ্যেই শুরু হওয়া ক্ষোভের ঘটনায় জায়গায় জায়গায় দল ছেড়ে অন্য দলে যাবার মত প্রবণতাও দেখা দিতে শুরু করেছে। 



জানা গেছে, কেউ কেউ ইতিমধ্যেই কংগ্রেসে যাবার চেষ্টা শুরু করেছেন। অপরদিকে, প্রশ্ন উঠেছে, কিছুদিন আগেই যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় – এক ব্যক্তি এক পদ। এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের তালিকায় তাও মানা হয়নি বলে অভিযোগ। অভিযোগ, রায়নার বিধায়ক শম্পা ধাড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন। তাঁকে ফের টিকিট দেওয়া হয়েছে। আবার ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারীকে ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দেওয়া হয়েছে। এরই পাশাপাশি এক ব্যক্তি এক পদ অনুসারে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহমুদ খানকে সরিয়ে দেওয়ার পর তিনি জামালপুর ব্লক সভাপতি হিসাবে আসীন হন। ফের সেই মেহমুদ খানকেই আবার পঞ্চায়েত সমিতির টিকিট দেওয়া হয়েছে। 




দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেণ্ড ইন কমাণ্ড নবজোয়ারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে যে স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রার্থীর বার্তা দিয়েছিলেন কার্যত তার প্রতিফলন মেলেনি এই তালিকায়। দেখা গেছে সংশ্লিষ্ট এম এল এ-র বিরোধীদের সিংহভাগকেই টিকিট দেওয়া হয়নি। এদিকে, এই প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরই বুধবার মনোনয়ন পেশ করেছেন জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু সহ নারী শিশু কর্মাধ্যক্ষ মিঠু মাঝিও। এদিন জামালপুরের ৩টি আসনের প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন জামালপুরের বিধায়ক অলোক মাঝি। 



অলোক মাঝি জানিয়েছেন, তাঁরা দলের অনুগত সৈনিক। এক ব্যক্তি এক পদ বিষয়টি উপেক্ষা করে কে বা কারা টিকিট পেয়েছেন তা দল বুঝবে। তিনি জানিয়েছেন, দলেই আলোচনা হয়েছিল যাঁরা বিধায়ক তাঁরা আর লড়বেন না। স্বাভাবিকভাবেই তারপরেও দল যখন টিকিট দিয়েছে নিশ্চয়ই ভাল কিছু বুঝেই দিয়েছেন। 



অন্যদিকে, চারবারের জেলা পরিষদের প্রার্থী এবং একবার পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ও ১৩ বছরের অবিভক্ত বর্ধমান জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি নুরুল হাসান জানিয়েছেন, ‘১৯৯৮ সাল থেকে দল করে এসেছি। বহু মার খেয়েছি। দলের দুর্দিনে হেরে যাবো জেনেও দলের সম্মান রাখতে যাতে সিপিএম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না জিততে পারে, তার জন্য পরিবারের সকলকে (বাবা,আমি,আমার স্ত্রী,আমার ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী) দলের দুর্দিনে প্রার্থী করেছি। এখন দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিশ্চয়ই ভালো মনে করেছে। দলের প্রার্থীরা জিতুক তার জন্য শুভকামনা রইল। শুধু একটাই প্রশ্ন থেকে গেল, দলের এক ব্যক্তি এক পদের নীতি এখানেও মানা হলো না। এর কারণ নিশ্চয়ই দলের জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব বিবেচনা করবেন। 



অপরদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, প্রার্থী তালিকা নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই। তৃণমূল দলের কোনো গোষ্ঠীই নেই। দল যাকে ভাল মনে করেছে, উপযুক্ত মনে করেছে তাকেই প্রার্থী করেছে। এক ব্যক্তি এক পদের বিষয়টিও দল নিশ্চিতভাবেই ভেবেচিন্তেই প্রার্থী করেছে। শেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, যাঁরা প্রার্থী হতে পারেননি তাঁরা এদিনই রাতে জায়গায় জায়গায় বৈঠকে বসেছেন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।