উত্তরপ্রদেশে দিব্য কলা শিক্ষা প্রতিযোগিতায় উত্তরবঙ্গের একমাত্র নৃত্য প্রতিযোগী রিম্পা রায়
পলাশবাড়ি: নাচের ভিডিও পাঠানোর পর সিলেকশন। তারপর অনলাইনে সাক্ষাৎকার। নাচের ক্ষেত্রে নানাভাবে গাইড করা। এসবের পর উত্তরপ্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন মেজবিলের রিম্পা রায়। বছর একুশের রিম্পা কোনও স্বাভাবিক নৃত্যশিল্পী নন। তিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী। আর এমন বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পীদের নিয়েই উত্তরপ্রদেশের বেনারসে হতে চলেছে দু’দিনব্যাপী দিব্য কলা শিক্ষা প্রতিযোগিতা।
ভারত সরকারের উত্তরপ্রদেশের কম্পোজিট রিজিওনাল সেন্টার(সিআরসি) এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। প্রতিযোগিতায় উত্তরবঙ্গ থেকে একমাত্র আলিপুরদুয়ার জেলার রিম্পাই অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন। এদিন ট্রেনে চেপে অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়েই মা, দাদার সঙ্গে যেতে দেখা গেল তাঁকে।
আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মেজবিল গ্রামে রিম্পার বাড়ি। বাবা প্রসেনচন্দ্র রায় কলকাতা পুলিশে কর্মরত। কলকাতাতেই থাকেন। ছুটিতে বাড়ি আসেন। এদিকে জন্মসূত্রেই রিম্পা শুনতে পায় না। তাঁর কানের ছিদ্র নেই। হিয়ারিং মেশিনও ব্যবহার করতে পারেন না। গ্রামের বাড়িতে মা নীলিমা রায় ছোট থেকেই রিম্পার সঙ্গী। এভাবেই শিলবাড়িহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে রিম্পা এখন পলাশবাড়ির তরাই অ্যান্ড ডুয়ার্স স্পেশাল এডুকেশন ট্রেনিং কলেজে স্পেশাল ডিএলএড করছেন। তবে শ্রবণ প্রতিবন্ধী হলেও ছোট থেকে নাচের প্রতি রিম্পার আগ্রহ অনুভব করতে পারে পরিবার। তাই পলাশবাড়িতে নাচের শিক্ষকের কাছে নাচও শেখানো হয় তাঁকে।
তবে উত্তরপ্রদেশে যে এরকম প্রতিযোগিতা হবে তা কিন্তু রিম্পার পরিবার জানতোই না।বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে কাজ করে পলাশবাড়ির স্বপ্ন সোসাইটি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার মাধ্যমেই দিব্য কলা শক্তি প্রতিযোগিতার খবর পায় রিম্পার পরিবার। তারপর ওই সংস্থার তরফেই বেশ ক’জন বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পীদের নাচের ভিডিও উত্তরপ্রদেশের সিআরসিতে পাঠানো হয়। তারমধ্যে রিম্পার নাচ সিলেকশন হয়। সেখান থেকেই অনলাইনে রিম্পার সাক্ষাৎকার হয়। তারপর স্পেশাল ডিএলএড কলেজে প্রায় রোজ গাইডলাইন মেনে আরও বেশি করে নাচের প্র্যাক্টিস করেন রিম্পা।
এক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা করেন ওই কলেজের শিক্ষিকা শাশ্বতী রায় প্রধান। এসব সম্পন্ন করে রিম্পা উত্তরপ্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হন। আগামী ২৬ ও ২৭ মে বেনারসে প্রতিযোগিতা হবে।
জানা গিয়েছে, এই প্রতিযোগিতার জন্য দেশের নানা রাজ্যের বিশেষভাবে সক্ষম শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাতজন শিল্পী সুযোগ পেয়েছেন। আর এই সাতজনের মধ্যে উত্তরবঙ্গ থেকে একমাত্র রিম্পাই রয়েছেন। কানে শুনতে না পারলেও রিম্পা কথা বলতে পারেন।
এদিন যাওয়ার আগে রিম্পা বলেন, ‘অনেক প্রত্যাশা নিয়ে যাচ্ছি। রাজ্যের বাইরে এরকম প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এটাই জীবনে প্রথম। নিজের ভালোটা উজার করে দেওয়ার চেষ্টা করব।’ এই সফরে রিম্পার সঙ্গী মা নীলিমা রায়, পিসতুতো দাদা গৌতম বর্মন ও স্পেশাল ডিএলড কলেজের শিক্ষক হরিহর বর্মন। মা নীলিমার কথায়, ‘মেয়ের জন্যই এখন গর্ব হচ্ছে। অনেক আশা নিয়ে যাচ্ছি। দেখা যাক কী হয়।’
স্বপ্ন সোসাইটির কর্ণধর তাপস বর্মন বলেন, ‘আমরা বহুদিন ধরে বিশেষভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করি। কিন্তু আগে কখনও ওই প্রতিযোগিতায় কাউকে পাঠাতে পারিনি। রিম্পাই প্রথম আমাদের এখান থেকে যাচ্ছেন। আর এবার রিম্পাই উত্তরবঙ্গের একমাত্র প্রতিযোগী। আশাকরি তাঁর পারফরম্যান্স ভালো হবে।’
0 মন্তব্যসমূহ
thanks