রবিবার নয় ছুটি সোমবার, ব্রিটিশ নীতির তোয়াক্কা না করেই ১০০ বছর ধরে চলছে মুক্তকেশী বিদ্যালয়




সঞ্জিত কুড়ি পূর্ব বর্ধমান: 


আঠেরো জনশিক্ষক,সাতজন শিক্ষাকর্মী, এবং বাড়োশো ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে রবিবারও খোলা থাকে বিদ্যালয়। একশো বছর ধরে বয়ে আসছে এই নিয়ম।ব্রিটিশদের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে একি ধারায় বয়ে চলেছে গোপাল পুরের মুক্তকেশী বিদ্যালয়।




১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়েছিল এই দেশ, জন্ম হয়েছিল স্বাধীন ভারতের। নিজের দেশকে ইংরেজদের হাত থেকে রক্ষ্যা করতে অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামী দের মধ্যে ছিলেন ভূষণ চন্দ্র হালদার, অবিনাশ চন্দ্র হালদার,বিজয়কৃষ্ণ কুমার, রাজবল্লভ কুমার রা। ব্রিটিশদের কোনো নিয়ম নীতি না মানার ব্রত নিয়ে ছিলেন গোপালপুর গ্ৰামের বাসিন্দা এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।এলাকার শিশু কিশোর দের শিক্ষার আঙ্গিনায় পৌচ্ছে দিতে গান্ধীজির অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে ১৯২২ সালের ৫ই জানুয়ারি জামাল পুরের গোপাল পুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুক্তকেশী বিদ্যালয়।



তাল, খেজুর গাছের গুড়ি,বাঁসের খুঁটি,খড়ের ছাউনি দিয়ে তৈরী আটচালায় শিক্ষ্যা পাঠ করত স্থানীয় শিশু কিশোররা।তৎকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামী অবিনাশচন্দ্র হালদার সংকল্প গ্রহন করেন নিজের মাতৃভাষা ছাড়া ইংরেজদের ভাষা ব্যবহার করবেন না। এমনকি ব্রিটিশদের ছুটির দিনও তারা পালন করবেন না। তাই ব্রিটিশদের রবিবারের ছুটির দিনের পরিবর্তে সোমবার পূর্ণ দিবস বন্ধ রাখা হয় এই মুক্তকেশী বিদ্যালয়।রবিবার অর্ধদিবস খোলা থাকে এই বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাতার দেশপ্রীতির ভাবনাকে মান্যতা দিয়ে প্রায় একশো বছর ধরে আজও পুরনো নিয়ম মেনেই চলেছে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয় ।



নিজের আরাধ্য দেবী মুক্তকেশী স্মরণে অবিনাশ হালদার তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের নাম রাখেন গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়। অনেক চেষ্টায় স্কুল তৈরি হলেও ইংরেজি পড়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় সেই সময়ে এই স্কুলটিকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাতে দমে যাননি প্রতিষ্ঠাতা। গ্রামের সমমনস্ক মানুষদের নিয়ে প্রচার শুরু করেন। অবশেষে ফলও মেলে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাড়া দিয়ে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের এই স্কুলে পড়াতে পাঠানো শুরু করেন।




বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন সারা দেশব্যাপী ব্রিটিশদের অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী।সেই অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ আঁচড়ে পড়েছিল এই গ্রামে। ইংরেজদের বিরোধিতা ইংরেজি ভাষা বর্জন করে ।দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদান।চরকা সুতো কাটা এইসব ছিল অসহযোগ আন্দোলনের মুল। সেই আদর্শকে সামনে রেখে এই বিদ্যালয় তৈরি হয়। ইংরেজরা যেহেতু রবিবার দিন ছুটি রাখেন সেই কারনেই ইংরেজদের বিরোধিতা করার জন্য বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশদের নিয়ম নীতির না মানার জন্য রবিবারের পরিবর্তে সোমবার ছুটি রাখেন এবং রবিবার অর্থ দিবস পর্যন্ত স্কুল খোলা থাকে। প্রধান শিক্ষক বলেন স্বাধীনতা সংগ্রাম আমরা চোখে দেখিনি তবে এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পেরে নিজেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী সরিক বলে মনেকরি।




বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা বিজয়কৃষ্ণ কুমার, রাজবল্লভ কুমারের বংশধর দেবব্রত কুমার বলেন সেই সময় এখানকার মানুষরা চাষবাষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন। পড়াশোনা করতে না এই এলাকার মানুষদের শিক্ষার কথা ভেবে ১৯২২ সালের ৫ই জানুয়ারি নিজের দায়িত্ব স্কুলটি প্রতিষ্ঠান করেন অবিনাশ চন্দ্র হালদার।



দীর্ঘদিন স্কুল চলানোর পরে ওনার আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে।এরপরে গ্রামবাসীদের মধ্যে রাজ বললভ কুমার এবং বিজয় কৃষ্ণ কুমাররা এই বিদ্যালয়ের দায়িত্বটা তুলে নেন। ১৯২২ সালে যখন স্কুলটি প্রতিষ্টা করা হয় সেই সময় তাল,খেজুর গাছে গুড়ি,বাঁশের খুটি খরের ছাউনি আটচালার মধ্যে পড়ানো হতো।সেই সময় এই এলাকাতে লেখাপড়া মানে একটা গৌণ অবস্থা ছিল চাষবাসের মধ্যেই দিন চালাতেন এই এলাকার মানুষজন এর মধ্যে লেখাপড়া একটা প্রয়োজনীয় সেই চিন্তাভাবনা থেকেই তৈরীকরা হয় এই বিদ্যালয়কে স্থাপন করা হয়।



তবে এই মুক্তকেশী বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান ও শিক্ষাপাঠা করতে পেরে খুশি শিক্ষক থেকে ছাত্র ছাত্রীরা।