dol yatra 2023 : Dol Purnima Date Time-দোল যাত্রা, দোল পূর্ণিমা সময় ও তারিখ
Dol Purnima 2023 Date Time: একটি ঋতুভিত্তিক উৎসব হল দোল। বিশেষ বিশেষ ঋতুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাঙালি মেতে ওঠে নানান ঋতু উৎসবে। বছরের শুরুতেই যেমন নবান্ন ও পৌষ পার্বণ দুটি উৎসব নতুন ফসল কাটার সময় হয়। শীত ঋতুতে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে নানা রকম পিঠেপুলি ও মিষ্টান্ন তৈরি হয়। তেমনি দোলযাত্রাকে কেন্দ্র করে বাঙালিরা মেতে ওঠেন দোল উৎসবে।
দোল আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব। পাতাঝরার সময়, বৈশাখের প্রতীক্ষা। এই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা, তার ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে। পুরনো জঞ্জাল, রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান হচ্ছে এই হোলি।
পুরাণ কাহিনী অনুসারে- ভক্ত প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্ম নিয়েও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাঁকে যখন বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছিল না তখন হিরণ্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ হোলিকা এই বর পেয়েছিল যে আগুনে তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে প্রহ্লাদের কোনো ক্ষতি হয় না কিন্তু হোলিকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 'হোলিক দহন' থেকেই হোলি উৎসব এর সূচনা বলে অনেকে মনে করেন।
তবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে হোলির রীতি ও বিশ্বাস বিভিন্ন। বাংলা অঞ্চলে বৈষ্ণব প্রাধান্য রীতি প্রচলিত। রঙ উৎসবের আগের দিন ‘হোলিকা দহন’ হয় অত্যন্ত ধুমধাম করে। শুকনো গাছের ডাল, কাঠ ইত্যাদি দাহ্যবস্তু অনেক আগে থেকে সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একতা থাম বানিয়ে তাতে অগ্নি সংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ হয়। পরের দিন রঙ খেলা।
অঞ্চল ভেদে হোলি বা দোল উদ্যাপনের ভিন্ন ব্যাখ্যা কিংবা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লোককথার ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু উদ্যাপনের রীতি এক। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন পূর্বভারতে আর্যরা এই উৎসব পালন করতেন। যুগে যুগে এর উদ্যাপন রীতি পরিবর্তিত হয়ে এসেছে। পুরাকালে বিবাহিত নারী তার পরিবারের মঙ্গল কামনায় রাকা পূর্ণিমায় রঙের উৎসব করতেন।
দোল হিন্দু সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন উৎসব। নারদ পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ ও ‘জৈমিনি মীমাংসা’য় রঙ উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। ৭ম শতাব্দীর এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক ‘হোলিকোৎসব’ পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়। হর্ষবর্ধনের নাটক ‘রত্মাবলী’তেও হোলিকোৎসবের উল্লেখ আছে। এমনকি আল বেরুনীর বিবরণে জানা যায় মধ্যযুগে কোন কোন অঞ্চলে মুসলমানরাও হোলিকোৎসবে সংযুক্ত হত।
মধ্যযুগের বিখ্যাত চিত্রশিল্পগুলোর অন্যতম প্রধান বিষয় রাধা-কৃষ্ণের রঙ উৎসব। এই রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে হোলির যে অতি বৈষ্ণবীয় আচার তা অবশ্যই প্রশ্নযুক্ত। কেননা এটি শ্রীকৃষ্ণের জীবন ইতিহাসের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। শ্রীকৃষ্ণ ১২ বছর বয়সে বৃন্দাবন ত্যাগ করার পর সেখানে তাঁর যাওয়াই হয়নি। অন্যদিকে বহু গবেষক রাধার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেছেন। শ্রীকৃষ্ণের ঝুলন থেকে দোল কথার উদ্ভব।
বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, ফাল্গুনী পূর্ণিমা বা দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ আবির ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি হয়। দোলযাত্রার দিন সকালে তাই রাধা ও কৃষ্ণের মূর্তি আবির ও গুলালে স্নাত করে দোলনায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর ভক্তেরা আবির ও গুলাল নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে রং খেলেন। দোল উৎসবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। আবার এই পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।
ফাগুনের আগুন রঙে যখন প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠে, ঠিক তখন বাঙালির মনেও লাগে রঙের ছোঁয়া। সে রং আসলে উৎসবে, আনন্দে, আবেগে মেতে ওঠার এক উপলক্ষ মাত্র। সে কাল থেকে এ কাল চলছে দোল-বিলাস। শুধু বদলেছে সময়টা। ইতিহাসে কান পাতলে শোনা যায় দোলের বিচিত্র গল্পের কথা।
এবছর দোল পূর্নিমা (Dol Purnima 2023 Date Time) শুরু ৬ মার্চ বিকাল ৪ টা ১৫ মিনিটে আর শেষ ৭ মার্চ সন্ধ্যা ৬ টা ৫ মিনিটে।
তথ্যসূত্র:
১- Fairs and Festivals of India by S.P. Sharma.
২- Festival of colours by Kabir Sehgal & Surishtha Sehgal.
৩- "দোল বিলাসে রঙিন পুরনো কলকাতা", বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য্য, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ঠা মার্চ, ২০১৫ সাল।
৪- পুরনো কলকাতার দোল, শ্রী তাপস বসু, বর্তমান পত্রিকা, ২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সাল।
৫- প্রতি দিন তিনি দেবতা, এক দিন শুধু প্রিয়; শ্রী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২১শে মার্চ, ২০১৬।
(লেখাটি সংবাদ একলব্যের সম্পাদিত নয়, সংগৃহীত )
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊