পরিসেবা নিয়ে পৌরনিগম বোর্ডকে আক্রমণ বিজেপির, পাল্টা জবাব শাসক দলের

bjp flag, tmc flag



রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী: আসানসোল:-

আসানসোল পৌরনিগমের নতুন বোর্ড গঠন হওয়া ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও অবধি পৌর নিগম এলাকার মানুষের কাছে পৌর পরিসেবা পৌঁছানো যায়নি। জল, সাফাই সহ বিভিন্ন পরিসেবার অভাবে পৌর নিগম এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই হতে চলেছে বাংলার সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজো। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সব ওয়ার্ডে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কথা থাকলেও সেভাবে তা করা হচ্ছে না।

আসানসোল পৌরনিগমের বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তেওয়ারি বুধবার দুপুরে আসানসোলের জিটি রোডের গোধুলি মোড় সংলগ্ন আবাসিক অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এইসব কথার প্রসঙ্গ তুলে আসানসোল পৌর নিগম বোর্ডকে আক্রমণ করলেন।

এদিন চৈতালি তেওয়ারী বলেন আমাদের প্রত্যেক ওয়ার্ড থেকে খবর আসছে জল ঠিক মতন সরবরাহ করা হচ্ছে না সময় মতো জল দেওয়া হচ্ছে না যেখানে দু ঘন্টা জল দেওয়ার কথা ছিল সেখানে পাঁচ থেকে দশ মিনিট জল দেওয়ার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আপনাদের একটা আমি কথা বলতে যাই। আমাদের ওয়ার্ডের যে সমস্ত লাইট গুলো আছে মেইনটেনেন্স এর ব্যাপারে, যেগুলো খুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এবং এক থেকে দেড় মাস পর সেগুলি রিপেয়ারিং করে লাগানো হচ্ছে এতে সাধারণ মানুষের অনেক অসুবিধা হচ্ছে রাস্তা অন্ধকার হয়ে থাকছে। সাফাইয়ের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা আপনারা সবাই জানেন যে চারধারে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে, সেই মতো আসানসোলের ডেঙ্গুর প্রকোপ রয়েছে ঠিক মতন সাফাই কর্মীদেরকে দিয়ে সাফাই করানো হচ্ছে না। কর্পোরেশনে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারে বসে আছেন তারা কি ঠিক করে নিয়েছেন যে পুরো ডেঙ্গু যখন আসানসোলে ছড়িয়ে যাবে লোক যখন মারা যাবে তারপর সাফাইয়ের অভিযানে নামবে। আর একটা কথা মানুষ যে ট্যাক্স দিচ্ছে কর্পোরেশনকে সেই ট্যাক্সের টাকা যাচ্ছে কোথায়। ট্যাক্সের সময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঠিক সময়ে ট্যাক্স নিয়ে নিচ্ছেন কিন্তু পরি সেবা দেওয়ার সময় ঠিক সময় পরিষেবা দিচ্ছেন না। যদি ঠিকমতন পরিষেবা যদি না দিতে পারেন তাহলে ট্যাক্স কিসের জন্য নিচ্ছে। আমাদের ট্যাক্সের পয়সা কলকাতা দেয়া যাচ্ছে, কলকাতাতে চারধারে আলোয় ছইলাফ। বিশেষ করে বলতে চাই যে অনেক গরিব মানুষ জল নিত ট্যাঙ্কার থেকে সেই ট্যাঙ্কার আগে আড়াইশো টাকায় পাওয়া যেত। এখন সেই ট্যাঙ্কার ৪০০ টাকা করে দিয়েছে। আপনারা মানুষের পরিষেবার জন্য বসে আছেন আর আপনারা ঠিকমতো মানুষকে পরিষেবা দেবেন না এটা তো বললে হয় না।

এদিন চৈতালি তিওয়ারি স্পষ্টভাবে বলেন, আসানসোল পুর এলাকার মানুষ যদি দুর্গাপূজা বা উৎসবের মরসুমে নাগরিক সুবিধা পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তাহলে আমরা আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবো।




কাউন্সিলর গৌরব গুপ্ত বলেন- এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি বোর্ড গঠন করা হয়নি এর কারনে যেখানে যেখানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার সেনিটাইজেশন করা দরকার সেগুলো হচ্ছে না। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আগে যদি স্প্রে করা হয় তাও করা হচ্ছে না।

প্রাক্তন কাউন্সিলর মধুমিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন কুলটি জামুরিয়া রানীগঞ্জ যে সমস্ত ওয়াটার প্রজেক্ট এর কাজগুলো হচ্ছিল সেগুলো এখনো পর্যন্ত অসম্পূর্ণভাবে পড়ে আছে যার কারণে জল কষ্ট বেশি দেখা দিচ্ছে।জিতেন্দ্র তিওয়ারি যখন মেয়র ছিলেন তখন আসানসোল, রানিগঞ্জ, জামুরিয়া ও কুলটি এলাকার প্রতিটি বাড়িতে জল সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছিলো। সেই সময়ে এই কাজটি খুব দ্রুত চলছিল। কিন্তু তিনি সরে আসার পর থেকে সেই কাজ থেমে যায়।




এই প্রসঙ্গে আসানসোল পুরনিগমের মেয়র পারিষদ গুরুদাস ওরফে রকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, যে বিজেপির কাউন্সিলররা এমন অভিযোগ করছেন,তারা তো বোর্ড মিটিংয়ে আসেন না। শুধু সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমে ঘরে বসেই রাজনীতি করেন। তিনি আরো বলেন, বিজেপির জেতা ওয়ার্ডের লোকজনেরা পুরনিগমে এসে বলছেন, ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা দেখা যায় না। জনগণ এতটাই ক্ষুব্ধ যে এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে তারা এই কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করবেন। তিনি বলেন, চৈতালি তেওয়ারির স্বামী জিতেন্দ্র তেওয়ারি যখন মেয়র ছিলেন তখন বিরোধী দলের নেতা যিনি ছিলেন তিনিও এই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তখন আসানসোল পুরনিগমে কেউ কথা বলার সাহস পেতো না।




বিজেপি নেত্রী চৈতালি তেওয়ারী ছাড়াও বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর গৌরব গুপ্ত, প্রাক্তন কাউন্সিলর ভৃগু ঠাকুর ও মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়।