Zee Bangla : জি বাংলার সা-রে-গা-মা-পা'র মূল মঞ্চে মেজিয়ার দীপ,উচ্ছসিত এলাকাবাসী

জি বাংলার সা-রে-গা-মা-পা'র মূল মঞ্চে মেজিয়ার দীপ,উচ্ছসিত এলাকাবাসী

a man in designed dress




রঞ্জিত ঘোষ,বাঁকুড়া


ইচ্ছে শক্তি থাকলে মানুষ কত কিছুই না করে দেখাতে পারে, চন্দ্রাভিযান থেকে পাতাল রেল সব ক্ষেত্রেই আবদান রয়েছে মানুষের ইচ্ছে শক্তির। এবার বিখ্যাত টেলিভিশন শো জি বাংলা (Zee Bangla)-র সা-রে-গা-মা-পার (SAREGAMAPA) মূল মঞ্চে গান গেয়ে তেমনিই এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বাঁকুড়ার মেজিয়ার বাসিন্দা দীপ চ্যাটার্জি (Deep Chatterjee)। একেবারে সাধারণ পরিবারের ছেলে দীপের ছোট থেকেই মনে সুপ্ত বাসনা বিখ্যাত কোনো টেলিভিশনের মঞ্চে গান গাওয়ার। সম্প্রতি গ্রামের ছেলে দীপের সেই সুপ্ত বাসনা রূপ পেল বাস্তবের। তার এই স্বপ্ন পূরণে যেমন উচ্ছসিত তার পরিবার-পরিজন তেমনি ওর জন্য আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দিয়েছেন মেজিয়ার বাসিন্দারা। পাশাপাশি উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বুকেও।




বাবা জহর চ্যাটার্জির ছোট্ট চায়ের দোকান রয়েছে মেজিয়ায়। প্রথমে দীপের পরিবার থাকত বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের বাসুদেব পুর গ্রামে । দীপের বাবা বহুদিন আগে মামার বাড়ি মেজিয়ার পার্বতীপুর গ্রামে চলে আসেন । মামারাই মেজিয়ার বাগানগোড়া মোড়ে একটি অডিও ক্যাসেটের দোকান খুলে দেন। কিছুদিন পর মেজিয়ায় বাড়ি করে ফেলেন দীপের বাবা। দীপের মা তৃপ্তি চ্যাটার্জী রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। তিনিও কিছু ছাত্র ছাত্রীকে গান শিখিয়ে সংসারের হাল ধরেন। পাশাপাশি পদাবলী কীর্তনও গান তৃপ্তি দেবী। তারপর দীপের জন্ম হয়। দীপ মায়ের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীত শিখতে থাকেন অন্যদিকে বাবার ক্যাসেটের দোকানের গান শুনে শুনে ইচ্ছে শক্তি জাগে গায়ক হওয়ার। একদিকে বাবার দোকানের ক্যাসেটের গান শোনা সঙ্গে মা তৃপ্তি চ্যাটার্জির কাছে বিভিন্ন রবীন্দ্র সঙ্গীত ও পদাবলী কীর্তন শোনা। কিন্তু তার মন টানে বাউল গানের দিকে। তাদের পৈতৃক বাড়ির ভৌগলিক অবস্থান বাউল গানের পীঠস্থান অজয় তীরের জয়দেব কেন্দুলির অপর পাড়ে পশ্চিম বর্ধমানের বাসুদেবপুর। তাই গ্রামের বাড়ি এলেই দীপ অজয় পেরিয়ে জয়দেবের বাউলের আখড়ায় চলে যেতেন। সেই শুরু বাউল এবং লোকগানের প্রতি টান। সেখানে গুরু হিসেবে পান লক্ষ্মণ দাস বাউল, তারকদাস বাউল ও অনাথ বন্ধু ঘোষকে। বাংলা এবং বাংলার বাইরে যেখানেই বাউলের আখড়া বসত তাদের সঙ্গে চলে যেতেন দীপ। সারেগামা'র মঞ্চে ঢোল খোল সহ যেসব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে তিনি মঞ্চ মাতালেন সেসব বাজনা শিখিয়েছেন তার বাউল সঙ্গীতের গুরুরাই। 




অন্যদিকে বাঁকুড়ার জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত শিল্পী সুভাষ চক্রবর্তী দীপের ছোটো বেলার রোল মডেল। এছাড়াও পুরুলিয়ার লোক গায়েন সুনীল মাহাত, সলাবৎ মাহাতরাও তার গুরুতুল্য বলে মনে করছেন দীপ চ্যাটার্জি। সঙ্গীতের পাশাপাশি চলতে থাকে লেখাপড়াও। মেজিয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে দূর্গাপুর মাইকেল মধুসূদন দত্ত কলেজ থেকে স্নাতক। তারপর আসানসোল কাজী নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন দীপ। বর্তমানে ওখান থেকেই লোক সঙ্গীতের উপর পিএইচডি করছেন তিনি।




গত রবিবার জি বাংলার এপিসোড শেষে দীপ যখন মূল পর্বে গেলেন। তখন গোটা মেজিয়া জুড়ে বাজি পটকা ও ফুলঝুরিতে অকাল দীপাবলি নামিয়ে এনেছিল। দীপের পরিবারের অভাব-অনটন, জীবনসংগ্রামে জড়িয়ে নিষ্প্রভ হয়ে ওঠে দীপের আলো । দীপ এখন কোলকাতায় গ্রুমারদের কাছে তালিম নিচ্ছেন।




দীপের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি এই টুকুতে আকাশে ভাসতে চাইনা ।কষ্ট করে যেমন পড়াশুনা করে বড় হয়েছি তেমনি সঙ্গীত মঞ্চ থেকে যত কষ্টই হোক এক ইঞ্চি লড়াইয়ের ময়দান ছাড়ব না। তার গান শুনে তিন বিচারক রিচা শর্মা, শান্তনু মৈত্র ও শ্রীকান্ত আচার্য ভীষণ ভাবে প্রশংসা করলেও এই সঙ্গীত মঞ্চের মহাগুরু পন্ডিত অজয় চক্রবর্তী বলেছেন, দীপের গলায় মাটির গন্ধ আছে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ঘরানার সঙ্গীত বিশ্ব বিখ্যাত। সেই জেলার ছেলে দীপকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, বাঁকুড়ার ঝুমুর, টুসু, ভাদু গানকে সে যেন বিশ্বময় ছড়িয়ে দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ