স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা থেকে বঞ্চিত, ডাক্তারির স্বপ্ন তিমিরেই থেমে মাধ্যমিকের কৃতির



রঞ্জিত ঘোষ, বাঁকুড়া: 

অভাব-অনটনকে নিত্যদিনের সাথী করেই এবং কঠোর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে মাধ্যমিকে সাফল্য অর্জন করল সুমন। বাঁকুড়া জেলার গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের লছমনপুর পরমহংস যোগানন্দ বিদ্যাপীঠ এর ছাত্র সুমন দত্ত, এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় তাদের বিদ্যালয় থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে সে। তার প্রাপ্ত নাম্বার ৬৪৭ , যদিও সুমন এই নাম্বার পেয়ে মোটেও খুশি নন, এই ফল তার আশানুরূপ হয়নি বলে আমাদেরকে জানায়।




সুমনের বাবা সমীর দত্ত পেশায় একজন হকার। মা সুলেখা দেবী গৃহকর্তী। বাড়িতে রয়েছে বৃদ্ধা ঠাকুমা। সারাদিন হকারি করে যত্সামান্য উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসারের চাকা ঠেলতে হিমশিম খেতে হয় বাবা সমীর বাবুকে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এর অবস্থা সুমনদের পরিবারের। তবুও সুমনের অদম্য ইচ্ছা আগামী দিনে নিট পরীক্ষা দিয়ে সাফল্য অর্জন করে একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার হাওয়ার। কিন্তু নিত্যদিনের আর্থিক অভাব-অনটন এখন সুমন এবং তার স্বপনের মধ্যে প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠেছে। তার স্বপ্নকে ঠেলে দিচ্ছে গভীর ধোঁয়াশার দিকে ।




ছেলের ইচ্ছেকে পূরণের জন্য বদ্ধপরিকর বাবা সমীর দত্ত। তাই ছেলেকে নিট পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ভর্তি করেছে একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের কথা ভেবে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। বহু ছাত্র-ছাত্রী এখান থেকে লোন নিয়ে পড়াশোনা করছেন। সেই মতো সুমনের স্বপ্নকে বাস্তবের রূপ দিতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড। কিন্তু সুমনকে পড়াশোনার জন্য এই লোন পেতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে। সমস্ত আবেদন করা সত্ত্বেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো মতেই সুমনকে লোন দিচ্ছে না। একাধিকবার ব্যাংকে গেলেও শালতোড়ার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সুমন এবং তার বাবাকে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ।




যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের প্রকল্পে ছাত্র-ছাত্রীদের লোন পাওয়ার কথা একাধিকবার বলছেন সেখানে সুমনের মতো পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা কেন এই লোন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকবেন এ নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন অনেকেই।




তবে কি অভাব-অনটনের জন্যই অচিরেই আঁধারে তলিয়ে যাবে কৃতি ছাত্র সুমন! নাকি মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের ঋণ পেয়ে তার স্বপ্ন পূরণের রাস্তায় এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে সে। সেটায় এখন দেখার বিষয় ।