International Workers' Day: 1st May: 'ওরা কাজ করে'- আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস , মহান মে দিবস, বিশ্ব শ্রমিক দিবস,
ইতিহাসের পাতা ঘাটলে জানা যায়- "মে দিবসের সঙ্গে শ্রমিক অধিকারের সম্পর্কের সূত্রপাত হয় যুক্তরাষ্ট্রে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে। শিল্প বিপ্লব তখন পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ ও দীর্ঘ কর্মঘণ্টার ফলে প্রতি বছরই অসুস্থ হয়ে পড়ছিল হাজারো পুরুষ, নারী ও শিশু শ্রমিক।"
কর্মস্থলের অমানবিক পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে ১৯৮৪ সালে তৎকালীন দ্য ফেডারেশন অব অর্গানাইজড ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়নস (এফওটিএলইউ) শিকাগোতে একটি কনভেনশনের আয়োজন করে। পরবর্তীতে এফওটিএলইউ নাম বদলে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবারস (এএফএল) নামে পরিচিতি পায়। এফওটিএলইউ কনভেনশনের আয়োজকরা দাবি করেন, ১৮৮৬ সালের ১ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা ধরে আইন পাস করতে হবে।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১৩ হাজার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ প্রত্যাহার করে বের হয়ে যায় ৩ লাখের বেশি শ্রমিক। দুই দিনের মধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও অনেকে। অচিরেই কাজ প্রত্যাহার করা শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়।
৩ মে’র মধ্যে পুরো দেশজুড়ে শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন থেকেই বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। শিকাগোর ম্যাককরমিক রিপার ওয়ার্কস কারখানার সামনে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের হামলায় হতাহত হন অনেকে। এই হামলার প্রতিবাদে পরদিন হেমার্কেট স্কয়ারে এক সমাবেশের আহ্বান জানান শ্রমিক নেতারা।
হেমার্কেট দাঙ্গার পর পুরো দেশজুড়ে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। ১৮৮৬ সালের আগস্টে আট ব্যক্তিকে এক বিতর্কিত বিচারকার্যের মাধ্যমে নৈরাজ্যতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সাত জনকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে দেওয়া হয় ১৫ বছরের কারাদণ্ড। যদিও তাদের কারও বিরুদ্ধে বোমা হামলা চালানোর কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অনেকে দাবি করেন ওই মামলার বিচারকরা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন। এদিকে, সাত জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও, অবশেষে চার জনের ফাঁসি হয় ও একজন আত্মহত্যা করেন। বাকি তিন জনকে ছয় বছর পরে মুক্তি দেওয়া হয়।
হেমার্কেট দাঙ্গা ও ওই বিতর্কিত বিচারকার্য পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল সেসময়। ইউরোপে এ ঘটনার পর ১৮৯০ সালে গড়ে ওঠে সমাজতান্ত্রিক ও লেবার পার্টিগুলোর নতুন জোট- সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল।। হেমার্কেটে ‘শহীদ’দের সম্মানে সমাবেশের ডাক দেয় ওই জোট। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ওই বছর লন্ডনে ১ মে ৩ লাখেরও বেশি লোক এক সমাবেশে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা নিশ্চিতের পক্ষে বিক্ষোভ করে।
পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে বহু সরকার ওই শ্রমিকদের ইতিহাসের প্রতি সম্মান জানায়। তবে মে দিবস আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯০৪ সালে। সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল প্রতিনিধিদের ষষ্ঠ কংগ্রেসের আয়োজন করা হয় ওই বছরের ১৪ থেকে ১৮ আগস্ট। অ্যামস্টারড্যামে অনুষ্ঠিত এই কংগ্রেসটি দ্য ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কংগ্রেস হিসেবে পরিচিতি পায়। এতে অংশগ্রহণ করেন ইউরোপের সকল দেশের সব সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। সেদিনই আইনের মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য একদিনে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানানো হয়। স্বীকৃতি পায় শ্রমিক দিবস।" আরও পড়ুনঃ Jobs Update: মাধ্যমিক পাশ যোগ্যতায় কেন্দ্রের চাকরি, শেষ সুযোগ, এখনি আবেদন করুন
এখনো এই লড়াই অব্যাহত রয়েছে। শুধু স্থান-কাল আর পাত্রের পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। দীর্ঘ দুই বছর করোনা মহামারী এবং সে জন্য হওয়া লকডাউন শ্রমজীবি মানুষকে সর্বশান্ত করেছে। সেই সাথে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় কৃষকরা অসহায়। সবমিলিয়ে শ্রমজীবি মানুষরা আজ এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখে।
তবে অন্ধকার যত গভীর হবে-বুঝতে হবে আলো তত সন্নিকটে। পৃথিবী আবার কর্মমুখর হবে। আবার -
"কলকলরবে বিপুল জনতা চলে
নানা পথে নানা দলে দলে
যুগযুগান্তর হতে মানুষের নিত্য প্রয়োজনে
জীবনে মরণে।"
কারণ এই কমর্জীবী মানুষের কর্মই থেকে যাবে পৃথিবীর শেষ দিনটি পর্যন্ত। করোনা মহামারী আবারও দেখিয়ে দিলো এই কর্মজীবী মানুষেরাই আসলে পৃথিবীর হাল ধরে থাকে। কবিগুরুর ভাষায়-
"শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ 'পরে
ওরা কাজ করে॥"
তথ্য ঋণঃ উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্য ওয়েবসাইট কারণ এই কমর্জীবী মানুষের কর্মই থেকে যাবে পৃথিবীর শেষ দিনটি পর্যন্ত। করোনা মহামারী আবারও দেখিয়ে দিলো এই কর্মজীবী মানুষেরাই আসলে পৃথিবীর হাল ধরে থাকে। কবিগুরুর ভাষায়-
"শত শত সাম্রাজ্যের ভগ্নশেষ 'পরে
ওরা কাজ করে॥"
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊