পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির নিয়ে কিছু অলৌকিক কাহিনী
কলমে- মৌসোনা ঘোষ
আমাদের দেশ ভারতবর্ষ যা রহস্যে ভরা, এই দেশের সভ্যতা যত পুরানো প্রায় ততটাই পুরানো এই দেশের মন্দিরগুলো। হাজার হাজার বছর ধরে এই মন্দির গুলো নিজেদের মধ্যে অনেক অজানা তথ্য ও রহস্য লুকিয়ে রেখেছে। ভারতে উপস্থিত এমন কোন মন্দির নেই যে যাকে ঘিরে রহস্য, বৈজ্ঞানিক হোক বা সাধারণ মানুষের চর্চার বিষয় হয়ে ওঠে নি।
ভারতে এমন অনেক প্রাচীন মন্দির রয়েছে যেখানে লুকিয়ে আছে বহু রহস্য। পুরির জগন্নাথ মন্দিরও সেই গুলির মধ্যে অন্যতম। এই মন্দির কে নিয়ে এমন কিছু রহস্য লুকিয়ে আছে যা শুনলে সত্যিই আপনি চমকে উঠবেন।
৮০০ বছরের পুরানো ভগবান জগন্নাথের মন্দিরে আজও এমন চমৎকার হয় যার জবাব বিজ্ঞানীদের কাছেও পাওয়া যায় না। আসুন জেনে নেই এমনি কিছু অলৌকিক কাহিনী-
এক) পুরীর মন্দিরের চূড়ায় যে ধ্বজা থাকে তা সর্বদাই হাওয়ার বিপরীত দিকে উড়তে থাকে। এই ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায়নি। ঠিক কি কারনে এই ধ্বজাটি স্বাভাবিকের থেকে অন্যরকম আচরণ করে তা নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা আছে।
দুই) লোক মুখে কথিত আছে, পুরির জগন্নাথ দেবের মন্দিরে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মৃত্যু রহস্য লুকিয়ে আছে। দ্রাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণের অন্ত্যেষ্টির পর তাঁর জ্বলন্ত হৃদপিন্ডটি নদীর জলে ভাসিয়ে দেন পান্ডবরা। সেই হৃদপিন্ড জলে ভেসে ভেসে পৌছায় রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর কাছে। মহারাজ স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই শ্রী ক্ষেত্র পুরীতে তা নীল মাধব রূপে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিন) পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় রয়েছে একটি সুদর্শন চক্র। এই চক্রটির ওজন ২০ কেজি। শহরের যে কোন প্রান্ত থেকে এই চক্রটি দেখা যায়। এবং যে দিক থেকেই দেখুন না কেন, সবসময় মনে হবে আপনি সামনের দিক থেকেই দেখছেন।
চার) জগন্নাথ দেবের মন্দিরে মোট চারটি দ্বার রয়েছে, তাঁর মধ্যে অন্যতম হল সিংহ দ্বার। এই দ্বারের আগে পর্যন্ত সমূদ্রের শব্দ শোনা যায়। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হল, মন্দিরে প্রবেশের সাথে সাথেই সমুদ্রের শব্দ আর শোনা যায় না।
পাঁচ) এই মন্দিরের ছায়া জমিকে স্পর্শ করে না। কখনোই মন্দিরের ছায়া কেউ দেখে নি। এই ঘটনা নিয়ে বাস্তুকারদের মধ্যে বিতর্ক চলেছে যুগ যুগ ধরে।
![]() |
পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দির |
ছয়) আপনি যে মন্দিরেই যাবেন দেখবেন পাখির আনাগোনা। কিন্তু পুরীর মন্দিরের উপর দিয়ে আজ পর্যন্ত কোন পাখী উড়তে বা বসতে দেখা যায়নি। এমনকি মন্দিরের উপর দিয়ে কোন বিমানো যায় নি।
সাত) বিশ্বের যে কোন জায়গায় সকালে সমুদের হাওয়া আসে তীরের দিকে। আর বিকেলে উপকূল থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া যায়। তবে অবাক করার বিষয়, পুরীতে তা হয় ঠিক উল্টো। এটাই পুরীর সমুদ্রের বিশেষ মহিমা।
আট) পুরীর মন্দীরে যে ধ্বজা রয়েছে সেটি প্রত্যেকদিন বদলে নতুন একটি ধ্বজা লাগানো হয়। প্রচলিত যে এই নতুন ধ্বজা যদি না লাগানো হয় বা কোন একদিন তার অন্যথা হয় তবে ১৮ বছরের জন্য পূজা বন্ধ থাকবে এবং ১৮ বছর পর আবার নতুন ধ্বজা লাগিয়ে পূজা শুরু হবে।
নয়) পুরির জগন্নাথ দেবের মন্দিরে সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ঘটনা হলও জগন্নাথ দেবের প্রসাদ। সারা বছর ধরেই সমপরিমানে প্রসাদ রান্না করা হয়। দর্শনার্থী যদি হাজারে হাজারে আসুক কিংবা লাখে লাখে সেই সমপরিমান প্রসাদই কখনো কম বা বেশি হয় না। আবার মন্দির বন্ধ করবার সাথে সাথে সমস্ত প্রসাদ শেষ হয়ে যায়। আর একটি আশ্চর্য্যের বিষয়, পুরীতে পর পর সাতটি মাটির পাত্রে ভোগ রান্না করা হয়। একটি পাত্রের উপরে আর একটি পাত্র , এভাবে মোট সাতটি পাত্র রেখে যে ভোগ রান্না করা হয়, সব থেকে উপরের যেই পাত্রটি থাকে সেই পাত্রের রান্নাই সবথেকে আগে হয়। কথিত আছে যে পুরীর জগন্নাথ দেবের রান্না ঘরের নিচ দিয়ে গঙ্গা নদী বয়ে গেছে । আর এই গঙ্গা নদীর জলেই ভোগ রান্না হয়।
দশ) বারো বছর অন্তর ভগবান জগন্নাথ , সুভদ্রা ও বলরামের কাঠের তৈরি বিগ্রহ নতুন রূপে একটি গোপন রীতি মেনে তৈরি করা হয় এবং তাতে প্রাণ প্রদান করা হয়। একে কলেবর বলা হয়ে থাকে।
এগারো) পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দীরের আর একটি রহস্য হলও গুপ্তধনের চাবীর রহস্য। এই মন্দিরের বার্ষিক আয় প্রায় ৫০ কোটির কাছাকাছি। যেখানে মন্দিরের সম্পত্তি ২৫০ কোটি বা তারও বেশি। স্থানীয় লোকজনের মতে মন্দিরের উচ্চতা যত ঠিক ততটাই এই মন্দিরের গুপ্তধনের পরিমাণ। যা অর্থ ও যহরতে পরিপূর্ন। কথিত আছে এই গুপ্তধনের পাহাড়া দিচ্ছে বিশালাকৃতির বিষাক্ত সাপ।
সমস্ত তথ্য বিভিন্ন পুস্তিকা এবং ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊