আজ থেকে এক মাস ব্যাপি শুরু হচ্ছে নাটাই ব্রত (Natai Puja) Natai Chandi 


natai puja




উৎসব প্রিয় বাঙালি-সুযোগ পেলেই মেতে উঠে উৎসবে। তার উপর যখন গ্রামবাংলায় সোনালি ফসল উঠার মরশুম শুরু হয়, নতুন ফসলের আগমনের আনন্দে মেতে ওঠে গ্রামবাংলা। অগ্রহায়ণ মাসের শীতের মরশুম তাই গ্রামবাংলায় এক আনন্দের বাতাবরণ তৈরি করে। 


কবি জীবনানন্দ দাশের অঘ্রাণ কবিতায় এই সময়কালের গ্রামবাংলার বাস্তব চিত্র ধরা পড়েছে। তিনি লিখেছেন- " এখন অঘ্রাণ এসে পৃথিবীর ধরেছে হৃদয়" । 


পৃথিবীর হৃদয় যে সময়ে এসে এমন উদ্বেলিত হয় সেই মরশুমে এক অলৌকিক পরিবেশ তৈরি হবে এটাই স্বাভাবিক। শীতকালে নতুন ফসল ওঠার পর অগ্রহায়ণ মাস থেকে শুরু হয় নানারকম পিঠেপুলির ব্রত অনুষ্ঠান, চলে মাসভর। এই সময়কার একটি ব্রত অনুষ্ঠান নাটাই ব্রত বা নাটাই পূজা। বলা হয় যারা এই ব্রত পালন করে থাকে তাদের সব অভাব দূর হয়ে সংসার ধন-রত্নে ভরে উঠে।



‘নাটাই পূজা’ বিশেষ করে কায়স্থ, নমঃশূদ্র ও অন্যান্য বাঙালি সম্প্রদায়ের একটি ব্রতধর্মী পূজা । অগ্রহায়ণ মাস জুরে এই ব্রতটি করা হয় । মাসের প্রথম রবিবার থেকে শেষ রবিবার অর্থাৎ প্রতি রবিবার সন্ধ্যাবেলা নাটাই চণ্ডীর পূজা করা হয় । 




পূজার উপকরণঃ কমলি ফুল ৭ টা, কচুপাতা ৭ টা, তুলসিপাতা ৭ টা , ধান-দূর্বা , চিতোই পিঠা, গুর –এই নাটাই চন্ডি পূজায় অবশ্যক ।




পূজা পদ্ধতিঃ সমস্ত উপকরণ সাজিয়ে বাড়ির মেয়ে বা বৌ বা বাড়ির যে কোন সধবা মহিলা পূজা করতে বসে । তুলসিতলায় একটা ছোট চৌক পুকুর কাটতে হয় । পূজার সময় এখানে জল ঢালে পূজারী । পূজার শুরু করে প্রার্থনা দিয়ে – 
‘সর্বমঙ্গলা মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ সাধিকে 
স্মরন্যে অম্বিক্যে গোউরি নারায়নী নমস্তুতে । 
জয় মা নাটাই চন্ডী স্মরি মা তোমায় । 
তোমার পূজার কথা কহি মা হেথায় ।। 
তুমি জারে দয়া কর সেই ধন্য হয় । 
সরল ভক্তিতে প্রিয় হও মা সদয় ।।
পূজাবিধি জানিনা মা , প্রানভরা ডাকে । 
পূজার খেলা খেলিমা তুষিতে তোমাকে ।। 
ভুলিয়া ধুলার খেলা, তুলিয়াছি ফুল । 
আজ যে তুমি মা মোর ভক্তির পুতুল ।।’ 




এই প্রার্থনার পর থাকে সদাগরের কাহিনী। পাঁচালির সুরে যখন সেই কাহিনী পাঠ হয় তখন পূজারির পাশে সেই কাহিনী শোনার জন্য মানুষের একাগ্রতা লক্ষ্য করার মতন । এই কাহিনী পাঠের মধ্যে দিয়ে নাটাই পূজার সমাপ্তি হয় । এর পর হয় প্রসাদ বিতরণ । প্রসাদ বিতরনে লবন যুক্ত এবং লবন ছাড়া ‘চিতোই পিঠা’ এক অন্যমাত্রা দান করে ।