Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Vijaya Dashami : বিজয়ায় বিসর্জন মানে মাকে ত্যাগ করা? জানুন আসল সত্য

Vijaya Dashami : বিজয়ায় বিসর্জন মাকে ত্যাগ নয়, বিশেষরূপে অর্জন

শুভ বিজয়া



Vijaya Dashami : বিসর্জনের বেদনা কাটতে না কাটতেই বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা- ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে। যদিও সাক্ষাৎ করে মিষ্টি মুখ করেই শুভেচ্ছা জানানোর প্রথা ছিল এবং বর্তমানে কমে গেলেও দেখা যায়। কিন্তু মায়ের বিসর্জনের করুন আবহেই কেন বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানোর আনন্দে মেতে ওঠে বাঙালি?



সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা অন্তরে সর্বদা একটা সংগ্রাম অনুভব করি। এ সংগ্রাম শুভ ও অশুভের। রজঃ ও তমঃ থেকে দম্ভ, দর্প, অভিমান, ক্রোধ প্রভৃতি অজ্ঞানবাচক গুণ উৎপন্ন। অপরদিকে সত্ত্বগুণ থেকে উৎপন্ন তপস্যা, স্বাধ্যায়, দম, শৌচ, তিতিক্ষা, অহিংসা, সত্য, ত্যাগ, ক্ষমা, ধৃতি, দয়া ইত্যাদি জ্ঞানলাভের সহায়ক। মহাদেবী দুর্গার পূজায় আমাদের একমাত্র প্রার্থনা হবে আসুরিক ও পাশবিক বৃত্তিগুলোকে পরাভূত করে আমাদের অন্তরদেবতাকে জাগ্রত ও সংগ্রামমুখী করে তোলা।







দশমী তিথিকে বিজয়া দশমী বলে। এ দিন দেবী সপরিবারে ফিরে যান কৈলাসে। মাকে প্রদক্ষিণ করা সন্তানের স্বাভাবিক রীতি। মা আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। এই আমাদের আকাঙ্ক্ষা। 

মাকে প্রদক্ষিণ করে ভক্তরা স্তব করতে থাকে, ‘হে জননী, পুত্র-আয়ু-ধন বৃদ্ধির জন্য তোমার পূজা হলো। আজ দশমীতে পূজাশেষে যেখানে নিরাকার পরমব্রহ্ম আছেন সেখানে তুমি যাও। আমাদের সুখ দান করার জন্য আবার এসো, শত্রুর দর্প বিনাশ করার জন্য পুনরায় আগমন কোরো। আমাদের পূজায় সন্তুষ্ট হয়ে তুমি নিজের স্থানে যাও। এক বছর গেলে তুমি আবার এসো। জয়ন্তী বৃক্ষে তোমার পূজা হলো, তুমি সর্বত্র আমাদের জয়ী করো। তুমি সংসার-বন্ধনমুক্তির জন্য কৃপা করো। অশোক বৃক্ষে তুমি ছিলে। তুমি আমাদের শোকরহিত করো। মানবৃক্ষে তোমার পূজা হলো, তুমি আমাদের সর্বত্র মান ও সুখ দাও। ধানরূপে তোমার পূজা হলো, তুমি লোকের প্রাণ ধারণ কর, আমাদের প্রাণে শান্তি দিয়ে প্রাণ ধারণ করাও। হে পরমেশ্বরী, আমরা তোমার দাস। জ্ঞানভক্তি বৃদ্ধির জন্য তোমাকে জলে স্থাপন করা হলো।’



দশমীতে তাই বিসর্জন। প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে ভক্তের হৃদয়ে। ভক্তের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি তাদের অসুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবেন। মাকে হৃদয়ে অনুভব করে আনন্দে ভক্তরা পরস্পর কোলাকুলি করে। পরস্পর আপন বোধ করে। এত দিন অন্তরে হিংসা, গর্ব, নিন্দা, ক্রোধ নামক অসুর থাকায় সকলকে আপন বোধ করতে পারেনি। এবার সেসব অসুর ধ্বংস হলো মায়ের কৃপায়। সমস্ত ভেদ উঠে গেল।


শ্রীরামকৃষ্ণ যেমন বলতেন, ‘ভক্তিতে সব জাতিভেদ উঠে যায়। ভক্তের কোনো জাত নেই।’ তাই সকলেই আমরা আপন। বিজয় হলো আসুরিক শক্তির ওপর দৈব শক্তির। মা দুর্গার নামও তাই বিজয়া।


বিসর্জন ও বিজয়ার তাত্পর্য বুঝে ভক্তের মনের শোক কেটে যায়। মায়ের পূজার বিসর্জনমন্ত্রেও বলা হয়, ‘ওঁ গচ্ছ দেবি পরং স্থানং যত্র দেব নিরঞ্জনঃ। অস্মাকং তু সুখং দত্তা পুনরেস্যসি সর্বদা।’ তুমি নিরাকার স্বরূপে ফিরে যাও। সব সময় তুমি অবশ্য আসবে আমাদের আনন্দ দিতে। কাম, ক্রোধ, লোভ নামক শত্রুর দ্বারা সব সময়ই মানুষ আক্রান্ত। ভক্তের প্রার্থনা তাই মায়ের পুনরাগমনের। ‘ওঁ গচ্ছ ত্বং ভগবত্যম্ব স্বস্থানং পরমেশ্বরী। শত্রোদর্পবিনাশায় পুনরাগমনায় চঃ।’


বিজয়ায় বিসর্জন মাকে ত্যাগ নয়, বিশেষরূপে অর্জন। এই কদিনের পূজাশেষে যে জ্ঞান অর্জিত হলো, তা হচ্ছে, মা স্বস্থানে কৈলাসে ফিরে গেলেন। এ অবস্থায় মা নিরাকারা। চর্মচক্ষের বাইরে চলে গেলেন। ‘নিরাকারা চ সাকারা সৈব…।’ (প্রাধানিক রহস্য-২৯, চণ্ডী)




তথ্য ঋণঃ ১। সনাতন ধর্মতত্ত্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code