বাঙালির গর্ব বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে জেনে নিন সেই মহামানবকে




নিজস্ব প্রতিবেদক, সংবাদ একলব্য, ২রা আগস্ট :


 বাংলাদেশের যশােহরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের জন্ম হয়। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতার মেট্রোপলিটন ও পরে প্রেসিডেন্সিতে পড়াশােনা করেন। তিনি বি. এ. পরীক্ষার আগে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে বিলাত যান। সেখানে প্রথমে বি. এসসি পাস করেন এবং পরে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে রসায়ন শাস্ত্রে মৌলিক গবেষণার জন্য ডি, এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে প্রথমে সহকারী অধ্যাপক ও পরে প্রধান অধ্যাপক হন (১৯১১)। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ওই পদ থেকে অবসর নিয়ে সায়েন্স কলেজে রসায়ন বিভাগে পালিত অধ্যাপক’ হন এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ওই পদে আসীন থাকেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৪-৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি যাদবপুর জাতীয় বিদ্যালয়ের সভাপতি ছিলেন। ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সােসাইটি তিনিই প্রতিষ্ঠা করেন।




প্রফুল্লচন্দ্র তার নানা আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। তার প্রধান লক্ষ্য ছিল মৌল আবিষ্কার করে রসায়ন জগতে অবিস্মরণীয় হওয়া। রসায়ন জগতে দুটো অস্থায়ী জিনিস একত্রিত হয়ে যে একটা স্থায়ী মৌল তৈরি হতে পারে এমন বিশ্বাস গবেষকের মধ্যে ছিল না। প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমাণ করলেন পারদের সঙ্গে নাইট্রিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় কীভাবে মারকিউরাম নাইট্রেট তৈরি হতে পারে। তবে তিনি নাইট্রেট আবিষ্কারে ব্যর্থ হলেও সােনা ও প্লাটিনাম গােত্রের বিশেষ বিশেষ যৌগ প্রস্তুতে তার সাফল্য আধুনিক রসায়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়াও তিনি অ্যামােনিয়াম নাইট্রেট, সালফার গঠিত জৈব পদার্থ ও প্ল্যাটিনাম, ইরিডিয়াম কিংবা সােনা সংবলিত জৈব রাসায়নিক আবিষ্কার করেন। এ ছাড়া ঘি, মাখন, তেলের রাসায়নিক বিশ্লেষণ নিয়েও গবেষণা করেছেন প্রফুল্লচন্দ্র।




প্রফুল্লচন্দ্র দেশপ্রেমিক। বিজ্ঞানের মাধ্যমে দেশের উন্নতিসাধন করা তথা পরাধীন ভারতীয়দের আত্মমর্যাদা বাড়ানাে ছিল তার উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। প্রফুল্লচন্দ্র চিরকুমার ছিলেন এবং অনাড়ম্বর জীবনযাপন করতেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী বীরদের প্রতি ছিল তাঁর গভীর সহানুভূতি। সব ধরনের জাতীয় শিক্ষা ও শিল্পোদ্যোগের প্রতি অকৃপণ সহায়তা এবং অর্জিত অর্থ মানব কল্যাণে অকাতরে বিতরণ করা তাকে দেশবাসীর কাছে বিশিষ্ট করে তুলেছে।




তার আত্মচরিত গ্রন্থটির নাম 'Life and Experience of a Bengali Chemist” এবং ইংরেজি ও বাংলায় রচিত বহু গ্রন্থ তাঁর সাহিত্য সাধনার পরিচয় বহন করে। তার আত্মচরিত ইংরেজিতে লেখা হলেও বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে আত্মচরিতের বাংলা সংস্করণ প্রকাশিত হয়। আত্মচরিতের অর্থ বাঙালির জীবন দর্পণ। এ ছাড়া বাংলায় লেখা “বাঙালির মস্তিষ্ক ও তার অপব্যবহার এবং অন্নসমস্যায় বাঙালির পরাজয় ও তাহার প্রতিকার’ তার অন্যতম উল্লেখযােগ্য প্রবন্ধ। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "History of Hindu Chemistry" দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়। চরক, সুশ্রত, বাণভট্ট, বৃন্দ, চক্রপাণি কিংবা নাগার্জুন যে দীর্ঘ বর্ণনা দিয়েছেন সেই সব অজানা তথ্যকে প্রফুল্লচন্দ্র দুখণ্ডে প্রকাশ করেছিলেন। আর এটিই তার দীর্ঘ গবেষণা সমৃদ্ধ রচনা।




১৯২১ সালে Non-Cooperaion Movement-এর সময় গান্ধিজির। খদ্দর প্রচারে প্রফুল্লচন্দ্র রায় বিশেষ ভূমিকা নেন। ব্রিটিশ সরকারের সি আই ই ও নাইট। উপাধি ছাড়া দেশি ও বিদেশি চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি তিনি লাভ করেন। অপরদিকে সিডনির বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সাম্মানিক সদস্যরূপে গ্রহণ করেন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহিতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় বিজ্ঞান সভার তিনি মূল সভাপতি হন।




ব্রিটিশরা চিরকালই ভারতীয়দের হেয় দৃষ্টিতে দেখে এসেছে। কিন্তু সেই সময় প্রফুল্লচন্দ্র তার মেধা ও গবেষণা দ্বারা প্রমাণ করেছিলেন, ভারতবাসীরাও পিছিয়ে থাকার নয়। শুধু তাই নয় রসায়ন শিক্ষার প্রসারে তার উদ্যোগী ভূমিকা স্মরণীয় তিনি । আজীবন দেশের মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করেছিলেন।