১৩৮ জন পরীক্ষার্থীর আবেদন পত্র সংসদে গিয়ে পৌঁছয়নি, কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ছাত্রছাত্রীরা

student



রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী:সালানপুর: পশ্চিম বর্ধমান:-

সালানপুর ব্লকের আছড়া যজ্ঞেশ্বর ইনস্টিটিউশনের ১৩৮ জন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রী দের পরীক্ষা সংক্রান্ত ফর্ম বা আবেদনপত্র সময়মত সংসদে জমা না পড় তাদের মার্কশিট এসে পৌঁছয়নি।স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে বিষয়টি জেলা থেকে কলকাতায় শিক্ষা সংসদে গিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সংসদে আবেদন করা হয়েছিল তাদের ভুলের জন্যই এইসব উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রী আবেদন পত্র জমা পড়েনি।তাদের বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করে মার্কশিট দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল।কিন্তু শিক্ষা সংসদের পক্ষ থেকেই ইতিমধ্যেই প্রধান শিক্ষককের সেই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।এদিকে বাকি যে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর মার্কশিট এসেছে তা এখন ও পর্যন্ত তাদের হাতে তুলে দেওয়া যায় নি।কারণ যাদের মার্কশিট আটকে আছে তারা আপত্তি তুলেছেন।

ইতিমধ্যেই পর্ষদ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল যাদের স্কুলে অকৃত কার্য ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা আছে তাদের সমস্ত আবেদন পত্র পাঠিয়ে দিলে ২৯ শে জুলাই সেই আবেদনের ভিত্তিতে সংশোধিত মার্কসসিট পাঠানো হবে এবং ৩০ শে জুলাই ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।এমন বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রীরা এই স্কুলে অকৃতকার্য হয়েছিল।তাদেরও সংশোধিত মার্কশিট বৃহস্পতিবার স্কুলে এসেছে।এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সালানপুর ব্লকের আছড়া যজ্ঞেশ্বর ইনস্টিটিউশন এর সামনে দুপুর পর্যন্ত বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী স্কুলের সামনে আসে এবং শান্তিপূর্ণভাবেই বিক্ষোভ করে।প্রচুর পরিমাণ পুলিশ বিদ্যালয়ের সামনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু স্কুলে তালা থাকায় কেউ ভেতরে ঢুকতে পারেননি। 

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় স্কুলের ঐ ফর্ম জমা না পড়া ও মার্কশিট নিয়ে। সেই বৈঠকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিখিল দত্ত,ওই সার্কেলের বিদ্যালয় পরিদর্শক পাপিয়া মুখার্জি,জয়েন্ট বিডিও এবং ওই বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির প্রতিনিধিরা ও শিক্ষক সংগঠনের একাধিক নেতৃত্ব এবং বিধায়ক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান শিক্ষক নিখিল দত্ত স্বীকার করেন তাদের ২৫৬ জনের আবেদনপত্র স্কুলে ফিলাপ করা হলেও ১৩৮ জনের আবেদন পত্র সংসদে গিয়ে পৌঁছয়নি। ফল প্রকাশের দুদিন পরে তিনি জানতে পেরেছেন সংশ্লিষ্ট করনিকের কাছ থেকে। এই সব আবেদনপত্র স্কুলের আলমারিতে অবশ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।কেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনো কোন এফআইআর এ নিয়ে করেননি তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে এদিনের বৈঠকে।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয় তারা আগামীকালের মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে তারা জেলা শাসকের কাছে গিয়ে জানাবেন এবং বারাবনির বিধায়কের মাধ্যমে এলাকার মন্ত্রি মলয় ঘটক পুরো বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে কিছু করা যায় কিনা তাও এদিনের সিদ্ধান্তে উঠে এসেছে। এজন্য মন্ত্রি মলয় ঘটকের কাছেও আবেদন জানানো হবে। 

সালানপুরের বিডিও অদিতি বসু বলেন তিনি বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক তাকে ওই ফর্ম জমা পরা নিয়ে কিছু জানাননি। এখানকার এত ছাত্র-ছাত্রীর পরীক্ষার ফর্ম জমা পড়েনি তিনি সংবাদ মাধ্যমের কাছে এটা জেনেছেন। 

একইভাবে বিদ্যালয় পরিদর্শক পাপিয়া মুখার্জি উল্লেখ করেন তিনি ওই দিনই সকালে এই ঘটনা জানতে পেরেছেন।

জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক অজয় পাল বলেন- আমার কাছে প্রধান শিক্ষক একটি চিঠি নিয়ে দুদিন আগে এসেছিলেন। সেই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন এইরকম একটি ঘটনার কথা। আমি সেই চিঠি ফরওয়ার্ড করে পাঠিয়ে দিয়েছি। কলকাতায় তাই নিয়ে ওনারা গেছেন। শুনেছি সেখান থেকে বলা হয়েছে এখন এ নিয়ে কিছু করা যাবে না। তবু কোনভাবে কিছু করা যায় কিনা তারও চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীরা বৃহস্পতিবার বিকেলে যেখানে এই বৈঠক হচ্ছিল তার খুব কাছেই তারা রীতিমতো বিক্ষোভ দেখান। অনেকেই প্রচন্ড কান্না কাটিতে ভেঙে পড়েন এবং প্রচুর সংখ্যক পুলিশ থাকায় তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হয়। তাদের দাবি আমাদের অধিকাংশ ছাত্র- ছাত্রী অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছি। যদি আরো এক বছর আমাদের অপেক্ষা করতে হয় তাহলে আমাদের বাবা-মা পড়াবে কি করে।এর উত্তর অবশ্য এই মুহূর্তে প্রশাসনের কারোরই জানা নেই।