ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন গ্রামীণ মহিলারা





- দারিদ্র দূরীকরণ এবং মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার দৌড়ে নিজেদের অবস্থান ক্রমেই মজবুত করে চলেছে ভিএফএস

গ্রামীণ সমাজ গঠনে মহিলাদের যোগদান আগের তুলানায় অনেক বেড়েছে। তারা কৃষি, পশুপালন, কাপড় সেলাই, জরির কাজ ইত্যাদির ব্যবসা করে নিজেদের সংসারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজের অর্থনীতিকেও সুদৃঢ় করে তুলতে সাহায্য করছেন। আর এদের এই ছোট ব্যবসাগুলোর পরিকাঠামো কে গড়ে তুলতে নগদ যোগানের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভিলেজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের (ভিএফএস) মতো দেশের ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলি। সামান্য একটা ঋণ কীভাবে পুরো পরিবারের জীবন বদলে দিতে পারে তারই উদাহরণ তুলে ধরেছে ভিএফএস।


ভিএফএস থেকে ঋণ নিয়ে দর্জির কাজ করে নিজের সংসারে সচ্ছলতা এনেছিলেন কোচবিহার জেলার জোরপোটকি গ্রামের নিবাসী কল্পনা বর্মন (৩৮)। তিনি এই সংস্থার মাথাভাঙ্গা শাখার গ্রাহক। মেয়েদের জামা কাপড় সেলাই করেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল। নতুন অর্ডার পাচ্ছিলেন না। স্বামীর পেশা কৃষিকাজ। তাঁরও কাজকর্ম লকডাউনে বন্ধ ছিল। পরিবার চালাতে ভীষণ সমস্যায় পড়েছিলেন। দুই সন্তানের শিক্ষা তো দূরের কথা, টাকা-পয়সার অভাবে জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। ঠিক তখন তাঁর মাথায় ভাবনা আসে যে করোনাভাইরাসের প্রকোপের জেরে এখন মাস্ক পরা অত্যন্ত জরুরি, তাহলে মাস্ক তৈরি করে বিক্রি করলে কেমন হয়! কিন্তু পুঁজি কোথায়? তখন ভিএফএস পাশে দাঁড়ায়। ভিএফএসের কাছ থেকে ৪০,০০০ টাকার নতুন ঋণ কাজ শুরু করেন। জামা কাপড় সেলাই করার পাশাপাশি মাস্ক বিক্রির ব্যবসা শুরু করার পর কল্পনাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন ব্যবসা বেড়েছে। ঋণও নিয়মিত পরিশোধ করছেন।

ঠিক কল্পনার মতো ঋণ নিয়ে নিজের সংসারে সচ্ছলতা এনেছিলেন হাওড়া জেলার বাঁকড়ার নিবাসী সাবেরা বেগমের (৪০)। স্বামী আর দুই সন্তান সহ সাবেরার চার-সদস্যের পরিবার নির্ভর থাকত স্বামী আখতার সর্দারের ছোট মুদিখানার দোকান থেকে আসা সামান্য আয়ের উপর। কিন্তু, সেই আয় সন্তানদের পড়াশোনার খরচ এবং সংসারের অন্য প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য নিজস্ব কিছু করার ভাবনা তাঁর মাথায় ঘুরছিল। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর বাচ্চাদের জামা-কাপড় বানানোর ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু, এর জন্য পুঁজি দরকার ছিল এবং সেই তাগিদে তিনি ভিএফএসের নিকটবর্তী শাখায় যোগাযোগ করে প্রথমবার ঋণ নেন ২০১৩ সালে, ব্যবসা শুরু করার জন্য। তারপর একাধিক বার ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে গিয়েছেন সাবেরা। কিন্তু লকডাউনে অন্যদের মতো সাবেরার ব্যবসাও কিছুটা ব্যাহত হয়। এখন তার ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে, তাঁর অধীনে বহু কারিগর কাজ করেন। মোরাটোরিয়াম না নিয়ে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করেছেন। এখন তিনি ভিএফএসের এসএমই কাস্টমার হয়ে উঠেছেন।

একই কাহিনী মৌড়িগ্রাম- দুলিয়ার অঞ্জনা রায় (৪৫) আর হাওড়ার বেলগাছিয়া গ্রামের কাজল বেজের (৪৬)। ভিএফএস ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে নিজেদের সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। অঞ্জনা জানান 'ভিএফএস পাশে না দাঁড়ালে এটা সম্ভব হতো না। আমার মতো অনেক গরিব মহিলাকে স্বনির্ভর হতে সাহায্য করেছে। এর জন্য ভিএফএসের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।' অঞ্জনার ব্যবসা বাড়াবার পরিকল্পনা আছে এবং তার জন্যে সংস্থাটিকে আগামী দিনেও পাশে চান তিনি। অঞ্জনার চায়ের দোকান আছে গ্রামের হাসপাতালের কাছে আর কাজল শাড়ির ব্যবসা করেন।

রোজগারের জন্য ঋণ দিয়ে গরিব গ্রামীণ মহিলাদের স্বনির্ভর করার এই দৌড়ে নিজেদের অবস্থান ক্রমেই মজবুত করে চলেছে ভিলেজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (ভিএফএস)। অঞ্জনা আর কল্পনাদের পরিবারের মতোই দেশের মোট ১৩টি রাজ্যের ৫ লক্ষের বেশি পরিবারের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী এই সংস্থাটি। আর আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে ১০ লক্ষ গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর ও তাদের আর্থিক চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য রাখছে এই সংস্থা। ভিএফএসের কর্ণধার কুলদীপ মাইতি বলেন 'আমাদের গ্রাহকদের ১০০ শতাংশই মহিলা। তাঁর মতে ‘বাড়ির মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই গরিব পরিবারগুলির দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব’। তিনি আরও যোগ করেন 'মহিলারা স্বনির্ভর হলে তাঁরাও সমাজে আর্থিক উন্নয়নের শরিক হতে পারেন। সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে ক্ষমতাপ্রদান করতে পারেন।'

ভিএফএস ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের সামনে রোজগারের বিভিন্ন উপায় তুলে ধরে আর বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টাকার সঠিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে।