বাংলায় প্রযুক্তি ক্ষেত্রের উদ্যোগীদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল বন্ধন ব্যাঙ্ক



কলকাতা: ভারত ভবিষ্যতে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হয়ে ওঠার পথ খুঁজছে আর সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশন গত কয়েক বছরে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।



এই উদ্দেশ্যে বন্ধন ব্যাঙ্ক বাংলা এবং পূর্ব ভারতকে প্রযুক্তিভিত্তিক স্টার্ট আপগুলোর জন্য এক সমৃদ্ধ হাব হিসাবে গড়ে তোলার কাজে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। বন্ধন ব্যাঙ্ক WEBEL-BCC&I টেক ইনকিউবেশন সেন্টারের এক জোরালো সাহায্যকারী। এই সেন্টার দ্য বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (BCC&I) আর ওয়েবেল টেকনোলজি লিমিটেডের এক যৌথ উদ্যোগ। ওয়েবেল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স দপ্তরের অধীন এক অধিগৃহীত সংস্থা।



টেক ইনকিউবেশন সেন্টারের প্রধান উদ্দেশ্য এমন একটা ব্যবস্থা তৈরি করা, যা বাংলায় উদ্ভাবনী শক্তি এবং জ্ঞানভিত্তিক উদ্যোগের দেখাশোনা করবে, তাকে সাহায্য করবে। ফলে সম্পদ তৈরি হবে এবং সফল উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে সামাজিক মূল্য সৃষ্টি হবে। টেক ইনকিউবেশন সেন্টার বন্ধন ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার চন্দ্রশেখর ঘোষের মস্তিষ্ক প্রসূত। এই উদ্যোগকে হিউলেট প্যাকার্ড, গুগল ক্লাউড এবং অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের মত বিখ্যাত প্রযুক্তি পরিষেবা প্রদানকারীরা সাহায্য করেছে।




ঐতিহাসিকভাবে বাংলার কিছু অন্তর্নিহিত শক্তি ছিল, যার মধ্যে পড়ে সর্বজন স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দক্ষ মানবিক পুঁজি এবং স্ট্র্যাটেজিক ভৌগোলিক অবস্থান। যার ফলে বাংলা ভারতের জন্য দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বার হিসাবে কাজ করতে পেরেছে। এই সুবিধাগুলো এই রাজ্যকে স্টার্ট আপগুলোর পক্ষে আদর্শ হাব করে তুলতে পারে। এখানে এরা আশু চ্যালেঞ্জগুলোর ডিজিটাল সমাধান তৈরি করতে পারে।



চন্দ্রশেখর ঘোষ বললেন “আমি যখন দু দশক আগে বন্ধন শুরু করি, সেটাও একটা স্টার্ট আপই ছিল। এর লক্ষ্য ছিল আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষকে প্রথাসিদ্ধ ঋণের সুবিধা জুগিয়ে ইতিবাচক সামাজিক প্রভাব ফেলা। একটা প্রতিষ্ঠানকে একেবারে শূন্য থেকে তৈরি করার লড়াইটা করেছি বলে আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারি, একটা সংগঠনের শুরুর দিনগুলোতে পরামর্শদাতার কতটা প্রয়োজন। তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রের সম্ভাবনা বিপুল। এই টেক ইনকিউবেশন সেন্টার এমন উদ্যোগকে সাহায্য করার সামান্য প্রয়াস, যা দৈনন্দিন জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করতে প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারে।”




বন্ধন ব্যাঙ্ক শুধু যে টেক ইনকিউবেশন সেন্টারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে তা নয়, নিয়মিত ব্যবধানে ইনকিউবেট ফার্মগুলো এবং ব্যাঙ্কের সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের মধ্যে নলেজ সেশনের ব্যবস্থাও করে।



টেক ইনকিউবেশন সেন্টার বাংলার স্থানীয় উদ্যোগীদের এবং তাদের ব্যবসাকে আগামী দিনের বড় মাপের সম্পদ স্রষ্টা হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই কাজ করার জন্য অন্যান্য জিনিসের মধ্যে তাদের দেওয়া হয় একসাথে কাজ করার পরিকাঠামো, ফাইন্যান্স ও ট্যাক্সেশন, কমপ্লায়ান্স, লিগাল ও ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের মত ব্যবসার নানাবিধ দিক এবং কাজের বিষয়ে শিল্পক্ষেত্রের নেতৃস্থানীয়দের পরামর্শ। যোগ্য ব্যবসায়িক প্রস্তাবগুলোকে সম্ভাব্য ফিনানশিয়ার ও কোলাবোরেটরদের সাথে যোগাযোগও করিয়ে দেওয়া হয়। যে স্টার্ট আপগুলো ইনকিউবেশন প্রোগ্রামের মধ্যে আছে, তাদের BCC&I-এর সদস্য ও শিল্পক্ষেত্রের অংশীদারদের নেটওয়ার্কগুলোর আলোচনাতেও আমন্ত্রণ জানানো হয়।




অর্ণব বসু, ম্যানেজিং পার্টনার, ইস্ট অ্যান্ড টেকনোলজি কনসাল্টিং লিডার, প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্স অ্যান্ড – আই টি কমিটি, BCC&I বলেন “আমরা মেন্টরদের একটা বোর্ড তৈরি করেছি, যাঁরা বেশিরভাগই চেম্বারের আই টি কমিটির সদস্য। এঁরা নিয়মিত ইনকিউবেটদের পরামর্শ দেন। প্রয়োজন মাফিক আমরা অন্যান্য এক্সপার্ট কমিটিগুলোর চেয়ারপার্সনদের পরামর্শ চেয়ে থাকি। তাঁরা ইনকিউবেটদের যার যে বিষয়ে পরামর্শ দরকার তাকে সেই বিষয়ে পরামর্শ দেন। এছাড়াও যদি কোন সেক্টরের জন্য কোন বিশেষ প্রয়োজন থাকে, তাহলে চেম্বারের এক্সপার্টদের নেটওয়ার্ক থেকে সেটা দেওয়া হয়।”



টেক ইনকিউবেশন সেন্টারে মোট ২০টা আসন আছে আর আজ পর্যন্ত ২৯টা ইনকিউবেট কোম্পানি এই প্রকল্পের দ্বারা উপকৃত হয়েছে। নিজেদের ব্যবসার মডেল নিখুঁত করে নিয়ে এবং একটা স্তরে পৌঁছে এই স্টার্ট আপগুলো ইনকিউবেটর ছেড়ে বেরিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ায়।




ইনকিউবেশন প্রকল্পে সফলভাবে অংশগ্রহণ করা এমন একটা স্টার্ট আপ হল ExeRx Health Tech Pvt. Ltd.। এই কলকাতাভিত্তিক মেডটেক কোম্পানি IoT-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীর রক্ত না নিয়েই রক্তাল্পতা এবং যকৃৎ ও ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের মত শারীরিক সমস্যা নির্ণয় করে। 



ExeRx প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও পার্থপ্রতিম দাস মহাপাত্র বললেন “WEBEL-BCC&I টেক ইউনকিউবেশন সেন্টার ExeRx-এর সাফল্যের কাহিনীর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেন্টারের দেওয়া কাজের পরিবেশ, সুযোগ এবং পথনির্দেশ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা আমাদের মার্কেটিঙের এলাকা বড় করতে পেরেছি সেন্টার যেসব যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিল সেগুলোর কারণে। আমাদের উপর বিশ্বাস রাখার জন্য আমরা WEBEL-BCC&I এবং বন্ধন ব্যাঙ্কের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।”



শোপেন সলিউশনস আরেকটা উদ্যোগ যা টেক ইনকিউবেশন সেন্টারের সাথে থেকে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটা একটা বায়োটেকনোলজি স্টার্ট আপ, যা মৌমাছি চাষে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং IoT ব্যবহার করে।



শোপেন সলিউশনসের প্রতিষ্ঠাতা অরিজিৎ দাস বললেন “WEBEL-BCC&I টেক ইনকিউবেশন সেন্টারের ব্যবস্থা আমার দর্শন তৈরি করে দিয়েছে এবং পরিকল্পনা থেকে বাস্তবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সরকারের সাথে যোগাযোগ একটা মাইলফলক। ওটা আমার কোম্পানির ভবিষ্যতের পথ ঠিক করে দিয়েছে।”



স্বরূপ রায়, অ্যাডভাইসার, আই টি প্রোমোশন সেল, ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্ট, গভমেন্ট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল বলেন “WEBEL-BCC&I টেক ইনকিউবেশন সেন্টার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিক্স দপ্তর বিশেষভাবে ডিজাইন করেছে তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এবং আরো নির্দিষ্ট করে বললে উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্টার্ট আপগুলোর সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি দেখাশোনা করার মত একটা ব্যবস্থা তৈরি করার জন্য। ইতিমধ্যেই এখানে অনেকগুলো সফল স্টার্ট আপ উদ্যোগ এসেছে এবং ওরকম আরো উদ্যোগকে আরো বড় সাফল্য পাইয়ে দেওয়ার জন্য সেন্টার বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছে।”