আবার উস্থিঝড় আছড়ে পড়ল কল্লোলিনী কোলকাতার বুকে
গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ
পূর্বের ঘোষিত কর্মসূচীর অনুযায়ী গতকাল সফল ভাবে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন UUPTWA এর মহামিছিল ও সমাবেশ। যানবাহনের সমস্যা, কোভিড প্যানডেমিকের ভীতি, কিছু সংগঠনিক সমস্যা কাটিয়ে সারা রাজ্য থেকে যে পরিমাণ শিক্ষক - শিক্ষিকারা উপস্থিত হয়েছিলেন তা দেখে সংগঠনের নেতৃত্বের মুখে চওড়া হাসি লক্ষ্য করা গেল। সুদূর দার্জিলিং জেলা থেকেও একদল শিক্ষক প্রতিনিধিদল সমাবেশে যোগদান করলেন তাদের জেলাগত বদলীর ব্যাপারে সরব হতে।
এই মহামিছিল ঠিক সকাল ১১ টায় শুরু হয় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে এবং শেষ হয় শহীদ মিনার গ্রাউন্ডে।
উস্থি ইতিমধ্যে পশ্চিম বঙগের এক লক্ষ বিরানব্বই হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে নায্য দাবীতে তাদের নিরবিচ্ছিন্ন ও আপোষহীন লড়াই- আন্দোলনের জন্য।বিগত দুই বছর নাগাদ একের পর এক আন্দোলন কর্মসূচী সফল ভাবে সম্পন্ন হতে দেখা গেছে উস্থির দায়িত্বশীল নেতৃত্বের হাত দিয়ে। ২০১৯ এর জুলাই মাসে দুই সপ্তাহের আমরণ অনশণ কর্মসূচীর পর সরকার তাদের দাবীকে মান্যতা দিয়ে বেতনক্রম PB2 থেকে PB3 তে উত্তোরণ ঘটালেও নিয়ম অনুযায়ী নোশন্যাল এফেক্ট দিয়ে বেতন সংশোধন করার কাজটি সুচতুরভাবে এড়িয়ে গিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। তাই সেটি না হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই বেতন সংশোধনে নানা ত্রুটি ধরা পড়ে, সিনিয়র- জুনিয়র বেতন এক হয়ে যায়, এমনকি তাদের অনেকগুলি ইনক্রিমেন্ট হাতছাড়া হয়ে যায়, সমস্যা দেখা দেয় ১৮ বছর চাকরী কালীন সুযোগ সুবিধা পেতেও।
এই ব্যাপারে উস্থির দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রথম থেকেই বিকাশ ভবনে শিক্ষা দপ্তরের উচ্চ আধিকারিকদের কাছে এই ত্রুটির ব্যাপারে সরব হন এবং সরকার সেই ত্রুটির সংশোধনের ব্যাপারে নীরব হয়ে থাকেন। কিন্তু উস্থির নেতৃত্ত্ব এই বিষয়ে নাছোড়বান্দা অবস্থানে অনড় থাকেন এবং দৃঢ প্রত্যয়ের সাথে সিদ্ধান্ত নেন তাদের নায্য পাওনা তারা যে কোন মূল্যে ছিনিয়ে আনবেন।
26/07/2019 এর সরকারী G.O এর স্বচ্ছতা এবং আরো কিছু দাবি নিয়ে সরাসরি আলোচনার জন্য বিকাশভবনে শিক্ষা দপ্তরের সবোর্চ্চ আধিকারিক মহল থেকে সংগঠনের প্রতিনিধি দলকে আজ দুপুর একটায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
আজ বিকাশভবনে শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকের সঙ্গে মিটিং এ তাদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ত্ব দেন সংগঠনে নব নিযুক্ত সম্পাদক ভাস্কর ঘোষ সঙগে ছিলেন ধীমান চৌধুরী,সৌগত লাহিড়ী, মানস গোস্বামী ও আমরণ অনশনে অংশগ্রহণকারী পীযুষকান্তি রায়। তারা মাননীয় আধিকারিক কে তাদের নায্য দাবীর সাপেক্ষে একের পর এক প্রমাণ্য নথী তুলে দিয়ে প্রমান করেন কেন তারা 2006 সাল থেকে নোশনাল এফেক্ট পাওয়ার যোগ্য। ভাস্কর বাবু জানান শিক্ষা আধিকারিক নিজেও স্বীকার করে নিয়েছেন তাদের অকাট্য যুক্তি। উনি বলেন তাদের সংশোধিত ফাইল শিক্ষামন্ত্রী এবং অর্থ দপ্তরে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেন "আমরা সাতদিন সময় দিয়েছি, তার মধ্যে আমরা যদি 2006 থেকে নোশনাল এফেক্ট না পাই তাহলে দশদিন পর থেকে তাদের লাগাতার আন্দোলন চলবে"। তিনি আরও বলেন নোশন্যাল এর দাবীর সঙগে অন্যান্য দাবীগুলি নিয়েও আলোচনা সদর্থক হয়েছে। কিছু কিছু নির্দিষ্ট জেলায় বদলীর সমস্যা, ১৮ বছর চাকরী কালীন সুবিধা, ডি.এল.এড নিয়ে টালবাহানা ও অন্যান্য বিষয়গুলি। স্বাস্থ্যসাথীর পরিবর্তে ওয়েষ্ট বেঙগল হেলথ স্কিম পাবার ব্যাপারে সরব হন সংগঠনের নেতৃত্ব।আলোচনায় প্রবল ভাবে উঠে আসে অতিরিক্ত বেতন সহ দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবীটি।শিক্ষার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন ভাবে শিক্ষাদান করা যায় সে ব্যাপারটিও তাঁরা আধিকারিকদের কাছে তুলে ধরেন। করোনা চলাকালীন ছাত্র-ছাত্রীদের যে যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টির আভাব হয়েছে সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ করেন। মাননীয় আধিকারিক সন্তোষ প্রকাশ করেন এ কথা জেনে যে UUPTWA সংগঠনের সভ্যবৃন্দ কি ভাবে সারা রাজ্যে করোনা অতিমারী এবং আম্ফান দূর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মানুষের সাহায্যর্থে।
তিনি বিকাশ ভবনে দেড় ঘন্টার মিটিং সমাপ্ত করে সভাস্থলে ফিরে উপস্থিত শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সমগ্রিক বিষয়গুলি সবিস্তারে তুলে ধরেন এবং সংগঠনের তরফ থেকে ধন্যবাদ জানান যে ভাবে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষকা UUPTWA র ডাকে সাড়া দিয়ে দূরদূরান্ত থেকে এসে মিছিলে এবং সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন।
এখন দেখার পালা মাননীয় আধিকারিক আগামী এক সপ্তাহে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বলা বাহুল্য এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখবেন পশ্চিমবঙ্গের আপামোর প্রাথমিক শিক্ষক সম্প্রদায়। আশা করা যায় তাদের জন্য নতুন ভাবে সুখবর আসতে চলেছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊