আজ জাতীয় কৃষক দিবস, সম্মান নয় আন্দোলনে ওঁরা 


কৃষকরা সমাজের মেরুদণ্ড। সমাজের প্রতিটি শ্রেণির মানুষকে অনাহারে মারা যাওয়া থেকে রেহাই দিতে নিজের ও অপরের খিদের জ্বালা নিবারণ নিশ্চিত করার জন্য তারা বছর জুড়ে কাজ করে। আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান খাদ্য। সেই খাদ্য জোগান দিতে সূর্যের তাপে কিংবা প্রকৃতির দুর্যোগ- কে মাথায় নিয়ে অনবরত খাদ্য উৎপাদনে ব্রতী হয়ে থাকে। 


সমাজে অবদানের জন্য কৃষকদের সহায়তা ও পুরষ্কারের জন্য সচেতনতা প্রচারের জন্য কৃষক দিবস প্রতি বছর পালিত হয়। জাতীয় কৃষক দিবস প্রতি বছর পালিত হয় বিশেষত যে রাজ্যগুলি সক্রিয়ভাবে উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশের মতো কৃষিতে জড়িত। কৃষকরা ভারতের মেরুদণ্ড হওয়ায় কৃষকদের প্রশংসা করতে ২৩শে ডিসেম্বর সারাদেশে জাতীয় কৃষক দিবস পালিত হয়। এই দিনটি ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী চরণ সিংহের জন্মবার্ষিকী সম্মানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ২৩ ডিসেম্বর, ১৯০২ সালে।


চৌধুরী চরণ সিং একবার বলেছিলেন, সত্য ভারত তার গ্রামে বাস করে।তিনি কৃষকদের জন্য বেশ কয়েকটি কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছিলেন এবং কৃষকদের ও তাদের সমস্যার বিষয়ে একাধিক বই লিখেছিলেন যা জাতির কৃষকদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সমাধান চিত্রিত করে।সরকার ২০০১ সালে চরণ সিংয়ের জন্মবার্ষিকী কিষান দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর কৃষকদের দেওয়া বিখ্যাত স্লোগান "জয় জাওয়ান জয় কিষান"অনুসরণ করেছিলেন। 


ভারতবর্ষে জনসংখ্যার সিংহভাগ মানুষ তাদের আয়ের প্রধান উত্স হিসাবে কৃষিকাজ করে। তবে, এত লোকের জীবনের সর্বাধিক প্রধান মাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও, কৃষকরা যে সমস্যার মুখোমুখি হন সে সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।


তবে ২০২০-এ জাতীয় কৃষক দিবসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে দিল্লীর সীমান্তে দেশের একাধিক রাজ্যের কৃষক। কেন্দ্রের প্রণীত নতুন কৃষি আইন কৃষি বিরোধী বলে দাবি তুলে বেশ কিছুদিন যাবত আন্দোলনে সামিল হয়েছে কৃষকেরা। কৃষক ও কেন্দ্র সরকারের একাধিক বৈঠকেও মেলেনি সুরাহা। এদিকে, কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করতে দেখা গেছে দেশের তাবড় তাবড় নেতা থেকে সেলিব্রেটি, খেলোয়াড় ও রাজনৈতিক দল গুলিকে। বিজেপি শাসিত কেন্দ্র সরকারের দাবি এই আইন কৃষকদের স্বার্থে অন্যদিকে কৃষকদের দাবি এই আইন 'কৃষক মারা' আইন। এই আইনের বিরোধিতায় দিল্লীর সীমান্তে আন্দোলনে নেমেছেন দেশের নানা প্রান্তের কৃষক। জাতীয় কৃষক দিবসেও আন্দোলনে রত কৃষকরা।


প্রত্যেক জাতীয় দিবসে যেমনটা গৌরবের সাথে পালন করতে দেখা যায় তখন এবার পালন কিংবা আনন্দ কিংবা সম্মান নয় নিজেদের লড়াইয়ে সামিল কৃষকরা। বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে আন্দোলন নতুন আইন বাতিলের দাবি তুলছে কৃষকরা। তখন অন্যদিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার নতুন কৃষি আইনের পক্ষেই সওয়াল করেছেন। এহেন পরিস্থিতিতে এবারের কৃষক দিবসে কৃষকদের আন্দোলন যে তাঁদের প্রতি বঞ্চনা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।