বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম সেরা তারকা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়


বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা তারকা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দীর্ঘ ৬ দশক ধরে অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন। সত্যজিৎ রায়ের বিশেষ পছন্দের অভিনেতা ছিলেন। ১৯৫৯ সালে ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করে বাংলা চলচ্চিত্রে তাঁর পথ চলা শুরু হয়। তিনশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। শুধু অভিনয়ই নয় লিখেছেন ১৪টি কাব্যগ্রন্থ, করেছেন পত্রিকা সম্পাদনাও। মৃণাল সেন, তপন সিংহ, অজয় করের সঙ্গেও কাজ করেছেন তিনি। 


১৯৩৫ সালের ১৯ই জানুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছেলেবেলা কেটেছে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে৷ কৃষ্ণনগরের সেন্ট জনসে পড়াশোনা করেন তিনি৷ পরে হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমহার্স্ট স্ট্রীট সিটি কলেজে, সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন।সিনেমা ছাড়াও তিনি বহু নাটক, যাত্রা, এবং টিভি ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় ছাড়া তিনি নাটক ও কবিতা লিখেছেন, নাটক পরিচালনা করেছেন। তিনি একজন খুব উচ্চমানের আবৃত্তিকারও বটে। 


তার অভিনীত চরিত্রগুলোর ভিতরে সবথেকে জনপ্রিয় হল ফেলুদা। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ ছবিতে ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। স্বয়ম্বরা, অতল জলের আহ্বান, কাপুরুষ, সংসার, ১৫ পার্ক অ্যভিনিউ, দ্য বঙ কানেকশন, চাঁদের বাড়ি সহ একাধিক সিনেমায় তাঁর অভিনয় নজর কেড়েছে দর্শক মহলের। একের পর এক বক্স অফিসে সুপারহিট হয়েছিল তাঁর ছবি। ‘বেলাশেষে’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘বসু পরিবার’, ‘সাঁঝবাতি’, ’ তার প্রমাণ ৷




২০০৪ সালে পদ্মভূষণে সম্মানিত। ২০১১ সালে পান দাদাসাহেব ফালকে সম্মান। ফ্রান্সের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান পেয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ২০১৮ সালে পান ‘লেজিয়ঁ দ্য নর’ সম্মান ।


বাঙালির অন্যতম প্রিয় নায়ক। অভিনয় জগতে থেকেই বিদায় নিলেন তিনি। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে শ্যুটিং-এ যোগ দিয়েছিলন। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় নিজের পরিচালনায় নিজের জীবন নির্ভর সিনেমা ‘অভিযান’-এর শুটিং সম্পূর্ণ করেছিলেন। গত ৬ই অক্টোবর করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। লড়াই করে করোনাকে হারিয়েও ছিলেন তিনি। কিন্তু অবশেষে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শেষ বিদায় নিতেই হল। ১৫ই নভেম্বর ২০২০-এ চলে গেলেন নে ফেরার দেশে।


আর শুধু চলেই গেলেন না, গেলেন কাঁদিয়েও। তাঁর দীর্ঘ অভিনয় জীবনে আপামর বাঙালিকে উপহার দিয়ে চলে গেলেন। প্রবীন এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকস্তব্দ চলচ্চিত্র মহল থেকে আপামর সিনেমাপ্রেমী।