সম্পর্কের জটিল টানাপোড়েনের কথা বলে 'রাধাবিরহ'


তনজিৎ সাহা, কলকাতা: আচ্ছা ভালোবাসা কে আপনি ঠিক কোন সংজ্ঞায় বাঁধবেন? পরিবার,সমাজ যে সম্পর্ককে স্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করেছে আমাদের মন কি একইরকম ভাবে সেই সম্পর্ক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে? নাকি সেই "Unconditional" প্রেমের গল্প আজ পেতে আশ্রয় নেয় বিভিন্ন ছলচাতুরির? বোধ হয় পরিচালক রীতম রায়চৌধুরী এই ভালোবাসার প্রকৃত সংজ্ঞাই খোঁজার চেষ্টা করেছেন তার নতুন ছবি রাধাবিরহ তে যেটি সম্প্রতি Digiplex OTT প্লাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে। 


ছবিটিতে অভিনয় করেছেন বরুণ চন্দ, ডক্টর দিপানিতা হাজারী অনিন্দ্য সেনগুপ্ত। সিনেমাটিতে একাধারে গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন, সংগীত পরিচালনা করেছেন পরিচালক মশাই স্বয়ং। 

গল্পের পটভূমিকায় রয়েছে উত্তর কলকাতার একটি পুরনো বনেদি পরিবার। ছবির প্রথম থেকেই খুব ছোট ছোট রেফারেন্স এর মাধ্যমে উত্তর কলকাতার পাড়া, পুরনো বনেদি বাড়ি, মানুষের জীবন শৈলী খুব স্পষ্ট করে বোঝানো হয়েছে। ছবির আগাগোড়ায় একটাই প্রশ্ন দর্শকদের সামনে রাখা হয়, কেশব, যে পরিবারের মাঝে থেকে বড় হয়েছে আর বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়াতে সুপ্রতিষ্ঠিত তার এত বছর পর ফিরে আসার কারন কি। 

সিনেমার পরতে পরতে নতুন-পুরনো দ্বন্দ্ব খুব স্পষ্ট। বাড়ির প্রায় প্রত্যেক তলায়, প্রত্যেক সদস্যের কাছে প্রেমের এক নতুন সংজ্ঞা পাওয়া যায়। বিশেষত, সবথেকে উপরে বাড়ির ছাদে পাওয়া যায় পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য জোনাকিকে, যার কাছে সম্পর্কে "Compatibility" না থাকার কারণে এক ফোনে সেই সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া খুব সামান্য ব্যাপার। আবার তার পরেই রয়েছে বাড়ির বৃদ্ধ কর্তা-গিন্নি, যাদের কাছে বিয়ের এত বছর পরেও নিজেদের মধ্যে কার ভালোবাসা এখনো চির অমলিন, যা বারবার তাদের পরস্পরের প্রতি যত্ন আর খেয়াল রাখার মধ্যে ঝলকে পড়ে। 


এখানে বিশেষ উল্লেখ্য‌ "Compatibility" প্রসঙ্গে কেশবের অস্বস্তি লক্ষণীয়। কিন্তু তার কারণ কী তা জানার জন্য দেখতে হবে ছবিটি। আপাতত বলা যেতে পারে, পুরুষ সিনেমার কেন্দ্রে রয়েছে সমাজের চেনা সমীকরণের বাইরে বেরিয়ে একটি সম্পর্কের কথা, যার সাথে গল্পের বাকি নতুন-পুরনো ভাঙাচোরা সম্পর্কগুলোকে তুলনা করা হয়েছে বারংবার। বৃদ্ধ শ্বশুর আর কর্তার চরিত্রে বরুণ চন্দ অসাধারণ। পরিবারের সমস্ত সমস্যায়, ভালো-মন্দ তে তার শান্ত, সংযমী ব্যবহার বড্ড মন কাড়ে। বাকি কেশবের চরিত্রে অয়ন ভালো, তবে শ্রীমতীর চরিত্রাভিনেত্রীর অভিনয়ে আরো দখল প্রয়োজন ।বিশেষত কেশবের সাথে বন্ধ ঘরে কথা বলার দৃশ্যে তার জড়তা স্পষ্ট। একি দৃশ্য কেশবের মুখে বড্ড বেশি যেন কাব্বি মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, সমস্ত চিত্রপট ফুটিয়ে তোলার জন্য চরিত্রদের মুখে যেন জোর করে তথ্য জানানো হয়েছে। 

বড় বউয়ের চরিত্রটা কি বড্ড বেশি stereotyped? এছাড়া খাবারের দৃশ্যে বাজেটের সমস্যা ফুটে উঠেছে। তবে overall, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পের প্রতি দর্শককে টেনে রাখার ক্ষমতা রয়েছে এই ছবির। আবহসঙ্গীতে মেঘ ব্যানার্জি অসাধারণ, বিশেষত, সিনেমার প্রথম ও শেষ এ ড্রোন শট যেন গল্পের মধ্যে নিয়ে যায় তারপর আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসে দর্শককে আমাদের জগতে। 

আর সিনেমার শেষে এন্ড ক্রেডিটে অনিকা চ্যাটার্জির গলায় গানটি ভালো লাগে শুনতে। সবার শেষে বলা যেতে পারে না রিমনের জটিল মনস্তত্ত্বকে সামনে থেকে জানার জন্য এই সিনেমাটি মাস্ট ওয়াচ। 

ছবিটি মুক্তি পেয়েছে Digiplex এর ইউটিউব চ্যানেলে।‌ উপসংহারে এটাই উল্লেখ্য বরুণ চন্দর ইজি চেয়ারে শুয়ে থাকা অবস্থায় কেশবকে বলা নদী ও জীবনের প্রসঙ্গ আমাদের জন্যও বলা নয় কি! পুরনো স্মৃতি আর অতীতকে আঁকড়ে থেকে আমরাও কি স্রোতের বিপরীতে যেতে চাই না বারবার!