ফাঁসীর আগে শেষ ইচ্ছায় ক্ষুদিরাম জানিয়েছিলেন তিনি দেবী চতুর্ভুজার প্রসাদ খেতে চান 




কালী- দশমহাবিদ্যার মধ্যে প্রথম মহাবিদ্যা-শক্তি উপাসকরা যাকে আদ্যাশক্তি বলে উপাসনা করেন। কালীর চার হাত, দুই দক্ষিণ হাতে খট্বাঙ্গ ও চন্দ্রহাস আর দুই বাম হাতে চর্ম ও পাশ। গলায় নরমুন্ডু, দেহ ব্যাঘ্রচর্মে আবৃত। দীর্ঘদম্ভী, রক্তচক্ষু, বিস্তৃত মুখ ও স্থুল কর্ণ। কালীর বাহন মস্তক বিহীন শব (কবন্ধ)। 



পরাধীন ভারতবর্ষে ভারতীয় বিপ্লবীরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য যখন প্রস্তুত হতেন – প্রথমেই নিতে হত জগত জননী কালী মায়ের আশীর্বাদ । কথিত আছে বিপ্লবীরা কালীঘাট বা তারাপীঠ গিয়ে দেবীর চরণ ছুয়ে দেশমাতৃকার উদ্ধার এর জন্য কঠোর সংকল্প নিতেন ।

পুরুলিয়ার ইতিহাস ঘাঁটলে জানাযায় পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ পুলিশের ভয়ে পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে থাকতেন অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা। পুরুলিয়ার সেই পাহাড়েই শুরু হয়েছিল কালীপুজো। গোপন আস্তানার এই পুজোতে বিপ্লবীরাও শামিল হতেন। শোনা যায়, কালীপুজোর দিন পাহাড়ে বসে বিপ্লবীরা সাধনা করতেন।

আসলে ব্রিটিশ শাসিত বাংলা তথা ভারতে কালী উপাসনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। কারন পরাধীন জাতির অন্তরের ক্ষোভ আর প্রতিবাদের উচ্চারণ কালীর দৃপ্ত ব্যক্তিত্বকে অনুসরন করতে চাইত। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে শক্তি আরাধনা তথা কালী উপাসনার প্রচলনের বহু প্রমান পাওয়া যায়। কালীর তেজোময়ী, লড়াকু ভাবময়তা তৎকালীন বিপ্লবীদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে। 

বাংলার এই বীরভাবের সাধনার রূপটি বিবেকানন্দের কথায় ফুটে উঠেছে— “যাঁরা প্রকৃত মায়ের ভক্ত, তাঁরা পাথরের মত শক্ত, সিংহের মত নির্ভীক। মাকে তােমার কথা শুনতে বাধ্য কর। তাঁর কাছে খােসামােদ কি? জবরদস্তি। তিনি সব করতে পারেন।"

আর তাই তো ফাঁসীর আগে যখন ক্ষুদিরাম কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল “ অন্তিম ইচ্ছা কি? ” ক্ষুদিরাম জানিয়েছিলেন , তিনি দেবী চতুর্ভুজার প্রসাদ খেতে চান ।  ভারতের স্বাধীনতা বিপ্লবীদের মধ্যে মা কালীর প্রভাব যে কতটা গভীর ছিলো তা বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর এই শেষ ইচ্ছাতেই বোঝা যায়। 


তথ্যসূত্রঃ
১। আঠেরোর দীপ্তশিখা ক্ষুদিরাম- সুশান্তকুমার সাহিত্যরত্ন
২। শাক্তপদাবলী ভাব ও শিল্পসৌন্দর্য - ড. অমরেন্দ্র গণাই