আত্মরক্ষায় তৈরি সুষমা,সাথে রাখে ব্লেড আর অদম্য আত্মবিশ্বাস

আলিপুরদুয়ার ঃ 


হাথরাসের মনীষা থেকে শুরু করে দিল্লিতে নির্ভয়া এবং প্রিয়াঙ্কা রেড্ডির সংখ্যা প্রতিনিয়ত যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, ঠিক তার পাশাপাশি নতুন উদ্যমে নিজেদের বিপদ থেকে আত্মরক্ষা করতে তৈরি রয়েছে সুষমার মতো আত্মনির্ভর নারীরাও।অপ্রস্তুত পরিস্থিতি থেকে নিজেদের বাঁচাতে নিজের সঙ্গী করেছে উপস্থিত বুদ্ধি ও ক্ষুদ্র একটি অস্ত্রকে।



টিভি,মিডিয়া,সংবাদপত্র কিংবা মানুষের মুখে মুখে নারী ধর্ষণ এবং নির্যাতনের কথা।রাস্তায় বেরোলে মেয়েদের দেখার ভঙ্গিটাও ভালো কিছু নয়।এই পরিস্থিতিতে ছেলেদের লম্পট মানসিকতাকে বাগে আনতে সুষমার সর্বক্ষনের সঙ্গী একটি ব্লেড এবং আত্মবিশ্বাস।ছোট থেকেই মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত এবং বাবার লাঞ্ছনার শিকার অলিপিরদুয়ার মাঝরেরডাবরীর সুষমা।পেটের ভাত জোগাড় করতে অনেক ছোট থেকেই বাড়ি বাড়ি কাজ করতে হয় তাকে।এরূপ ব্যক্তিগত পরিস্থিতির শিকার অনাথ সুষমা যখন নিজের অন্ন সংস্থানের জন্য বাইরের জগতে যেতে বাধ্য হয় তখনও তার যাতায়াতের পথে হিংস্র ছিঁড়ে খাওয়ার মানসিকতার সন্মুখীন হওয়ার একটা ভয়ও কাজ করে তার মনে।তাই যদি কোনো ছেলের দল তাকে বিরক্ত করতে আসে তবে তার উপায় একমাত্র ব্লেড,বাতলে দেন অষ্টাদশী তরুণী আদিবাসী কন্যা সুষমা লাকড়া।



"আমার এক বান্ধবী কে ছেলেদের অত্যাচারের বলি হতে হয়।কাজের থেকে ফেরার সময় কিছু খারাপ ছেলেরা আমার বান্ধবী কে ধরে নিয়ে গিয়ে রেপ করে ফেলে দেয়।ভয়ে ঘৃণায় দিশে হারা লাগছিলো" বলেই জানায় সুষমা।ছোটো থেকে পাড়ার এক দিদি তাকে পালন করেছেন,তাকে এই কথা বলে তার নিজের ভয়ের কথা জানালে হতাশায় দিদি বলেন,"সঙ্গে চাকু রাখ।" সুষমার কথায়, "কিন্তু চাকু তো বড়।আর দেখা যাব,তাই আরো ছোটো আর লুকায়িত অস্ত্র হিসেবে ব্লেড কেই সঙ্গী করি আমি।আর বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে ভুলে গেলেও দোকান থেকে কিনে নিই,কিন্তু কোনোদিন নিজের হাতছাড়া করি না ব্লেড।" আত্মবিশ্বাসের সুরে সুষমা বলে ওঠে,"প্রয়োজনে নিজে মরবো নয় মারবো।কিন্তু অসাধু কার্য সিদ্ধি করতে দেবো না কাউকে।"



বর্তমান সমাজ এবং সমাজের ভেতরে থাকা মানুষের মানসিকতা যেদিকে যাচ্ছে তাতে এমন সুষমা যদি আলীতে গলিতে থাকে তবে হয়ত অনেক মনীষা নির্ভয়া রক্ষা পাবে।কিন্তু কেন এই সুষমাদের হাতে অস্ত্র তুলতে হচ্ছে? প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে যেমন মা কালী অস্ত্র তুলেছিলেন,সেই পথেই কি অবশেষে?গ্রন্থকারের কল্পরচনা এইযুগে তাহলে কি সত্যি হতে চলেছে?তার উত্তর খোঁজার আগে নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত,কেন এই ঘটনাগুলো ঘটছে?পাশবিকতা সীমাতিত হলে এযুগের সুষমারা ব্লেড নিয়ে চলতে বাধ্য হবে।পাশাপাশি পুরুষ মানসিকতায় পরিবর্তনের ভাবমূর্তি উদয় হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আত্মরক্ষায় আত্মনির্ভর মানসিকতা উদয় হোক নারীমনে।পুরুষের হাতে বলি হওয়া নারীর নিয়তি নয়।নারী হোক আত্মসম্মান রক্ষায় ব্রতী এই বার্তা সুষমা আর তার ব্লেডের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ুক নারীমনে।