আরামবাগের ব্যানার্জী বাড়ির পুজো:সাবেকিয়ানার সাতকাহন 




সোমালি ভট্টাচার্য,আরামবাগঃ

 
আরামবাগ গৌরহাটি মোড় থেকে যে রাস্তাটা সোজা চলে গেছে আরামবাগ হাইস্কুলের দিকে,সে রাস্তা ধরে ষষ্ঠীর দিন এগোলেই ঢাকের শব্দ জানান দেবে ব্যানার্জী বাড়ির পুজোর বোধন শুরু হয়ে গেছে।আরামবাগের যে সমস্ত পুজোগুলি একেবারে বাড়ির মজলিশি আড্ডাকে ধরে রেখে,পূর্বপুরুষের নিয়ম মেনে,সাবেকিয়ানার এতটুকু বদল না ঘটিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীমুখ উন্মোচন করে,তাদের মধ্যে ব্যানার্জী বাড়ির পুজো অন্যতম।

ব্যানার্জী বাড়ির পূর্বপুরুষ রবীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে চলে আসেন আরামবাগে।এখানে এসে তিনি আর পুজো করতে চাননি।কারণ বাঁকুড়ায় তো ঐতিহ্য মেনে বহু প্রাচীন পারিবারিক পুজো হয়ই।কিন্তু দেবী তাঁকে স্বপ্নে আদেশ দেন পুজো করার।এও জানান যে দেবীর চ্যাঙমাছের ঝোল খাবার ইচ্ছে হয়েছে।শুরুটা সেই থেকেই।সে আজ দেড়শ বছরের থেকেও আগেকার কথা।

খড় ও তালপাতার ছাউনি দিয়ে ঘরের পাশেই তৈরি হয় মণ্ডপ।শুরু হয় দেবীর আরাধনা।আজ আর সেই মণ্ডপ নেই।এখন স্থায়ী মণ্ডপ তৈরি হয়েছে।পাকা দুর্গাদালানের মেঝেতে ধপধপে সাদা পাথর।কিন্তু নিয়ম আজও এক।ষষ্ঠীতে মা আসেন।চলে আসে চ্যাঙমাছও।এক চালার মূর্তিতে চার সন্তানসহ মা দুর্গা।বহুবছর আগের মতই মুখখানি অবিকল,সাবেকি সাজ মায়ের।

সপ্তমী অষ্টমী ও নবমীতে চ্যাঙ মাছের ঝোল করে মাকে পুজো দেওয়া হয়।এছাড়া নবমীর দিন হয় পাঁঠাবলি।দশমীতেই হয় মায়ের বিসর্জন।পরিবারের বর্তমান সদস্যদের কাঁধে চড়েই মা চলে যান।রেখে যান বছর ঘুরলে আবার বাপের বাড়ি আসার আশ্বাসটুকু।মণ্ডপের সামনেই বৃহৎ এক শিউলি গাছ।সূর্য ডুবলেই অভিমানী ফুল জেগে ওঠে।সারারাত ঝরে পড়ে টুপটাপ।

কত মানুষ হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকে মায়ের মুখের দিকে চেয়ে।কারো কারো চোখ বেয়ে জল নেমে আসে।কী চাইছে তারা,কিই বা পায়নি বোঝা যায় না!!মা স্নেহমাখা মুখে তাকিয়ে থাকেন অভিমানী সন্তানের দিকে।রাত বেড়ে যায়।থিমের মণ্ডপগুলোয় আরো ভিড় বাড়ে।শুধু ব্যানার্জি বাড়ির মণ্ডপে বসে যায় পারিবারিক আড্ডা।গোল হয়ে কতগুলো মুখ অনর্গল বলে যায়।শিউলির গন্ধে,ঢাকের আওয়াজে আর ইতিহাসকে ধরে রেখে আরামবাগের এক ছোট্ট পাড়ায় মা দুর্গা চারদিন বাপের বাড়ির আদর খান।