মহালয়ার দিনে বিদায় নয়,প্রতিমা রংহীন, বরং নতুন করে বায়না আসতে পারে বলেও মনে করছেন মুর্শিদাবাদের মৃৎশিল্পীদের একাংশ



রাজেন্দ্র নাথ দত্ত :মুর্শিদাবাদ:

মৃণ্ময়ী প্রতিমায় রঙের পোঁচ পড়েনি, কুমোরটুলিতে এখনও চলছে খড় বাঁধার কাজ। চোখ মেললেই দেখতে পাচ্ছি কান্দীর কানা ময়ুরাক্ষী নদীর পাড়ে আর জমির ধারে ধারে শরৎ ফুটেছে কাশ হয়ে। নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মেঘ আর ভোরের শিশিরমাখা শিউলি খবর পাঠিয়েছে— তিনি আসছেন। স্কুলের বাচ্চারা কর গুনছে দুর্গাপুজো আসতে আর কত দিন বাকি। প্রতি বছর মহালয়ার ভোরে এ ভাবেই উমার আবাহনে ঘুম ভাঙে বাঙালির। গঙ্গায় তর্পণের সঙ্গে মিশে যায় আগমনির সুর। তবে কুমোরটুলির কাছে মহালয়া মানেই মেয়েকে বিদায়ের পালা। স্টুডিয়ো ছেড়ে একে একে প্রতিমা পাড়ি দেয় বিভিন্ন গন্তব্যে। কিন্তু এ বছর? মৃৎশিল্পী মল্লিকা পালের কথায়, ‘‘প্রতিমার গায়ে তো এখনও রংই হয়নি। কুমোরটুলিতে এ বার মাটি-খড়ের প্রতিমাতেই হবে মহালয়া। মহালয়ার সকালে বিদায় নয়, বরং নতুন করে বায়না আসতে পারে বলেও মনে করছেন শিল্পীদের একাংশ।


কোভিড সংক্রমণের জেরে এ বছর প্রতিমা তৈরির কাজই শুরু হয়েছে দেরিতে। সংক্রমণের রেখচিত্র পুজোর সময়ে কেমন থাকবে, পুজোর অনুমতি মিলবে কি না— সেই নিয়ে সংশয়ে বহু পুজো কমিটিই বায়না দিতে গড়িমসি করেছে। আর বাকিরা জানিয়েছে, কম বাজেটে, কম উচ্চতার দুর্গা গড়ে দিতে হবে তাদের। সেই সঙ্গে পাঁজির নিয়মে পুজো পিছিয়ে গিয়েছে পাক্কা এক মাস। তাই এই দুয়ের ধাক্কায় মহালয়ার আগে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হওয়া তো দূর অস্ত্, গায়ে রঙের পোঁচই পড়েনি।

কোভিডের ভয়কে দূরে সরিয়ে প্রতিমা তৈরিতে আস্তে আস্তে কোমর বেঁধেছে কুমোরটুলি। কোথাও প্রতিমার গায়ে পড়েছে মাটির প্রলেপ, কোথাও আবার কাঠামো তৈরির কাজ চলছে।

মৃৎশিল্পী গৌরাঙ্গ পাল বলেন, এ বার প্রতিমার সংখ্যা অনেকটাই কম, কমেছে প্রতিমার দামও। সেই সঙ্গে রয়েছে এক মাস সময়। তাই এ বারের মহালয়ায় প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সেই চেনা ছবি দেখা যাবে না কুমোরটুলিতে। বরং আজ থেকে কোনও পুজো কমিটি প্রতিমা গড়ে দেওয়ার বায়না নিয়ে হাজির হতেই পারে বলে মনে করছেন মৃৎশিল্পী অলোক দাস। তাঁর কথায়,অনেক পুজো কমিটি হয়তো এত দিনে পুজো করার ব্যাপারে মনস্থির করেছে। তাই মহালয়ায় বায়না আসতেই পারে। তবে এক মাসের মধ্যে নতুন করে প্রতিমা তৈরি করে দেওয়া সম্ভব কি না, তা শিল্পীর উপরে নির্ভর করছে।আর বাড়ির প্রতিমা?কান্দীর মৃৎশিল্পীর কাছে ০৭-০৮ টি বাড়ির প্রতিমার বরাত এসেছে। কিন্তু তাঁদের কেউ-ই এই মহালয়ায় প্রতিমা ঘরে নিয়ে যাচ্ছেন না। ছাঁচে প্রতিমার মুখ গড়তে গড়তে শিল্পী বলছেন, মা-কে বাড়ি নিয়ে গেলে তো এক মাস ধরে পুজো চালিয়ে যেতে হবে। সেটা অনেকেই এড়াতে চাইছেন। তাই পুজোর আগেই প্রতিমা নিয়ে যাবেন বলে বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন।তবে কোভিডের কারণে অধিকাংশ বাড়িতেই এ বার জনসমাগমে কড়াকড়ি থাকছে। অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেই চিন্তাভাবনা চলছে।