অ্যাপোলো চালু করল পূর্ব ভারতের প্রথম লিভার প্রতিস্থাপনের একক ইন-হাউস প্রোগ্রাম

 



কলকাতা, সেপ্টেম্বর ২৫: দু বছরের রিজওয়ান আলি তার বয়সী যে কোন বাচ্চার মতই অবিরাম দৌড়ে বেড়ায় তার বারাসতের বাড়িতে। কিন্তু তাকে হেসে খেলে বেড়াতে দেখে তার মা অবাক হয়ে যান, কারণ ঠিক এক বছর আগে রিজওয়ানের লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছিল অ্যাপোলো গ্লেনইগলস হাসপাতালে। লিভার দান করেছিলেন তিনি নিজেই।

আজ বারো মাস পরে, পূর্ব ভারতে প্রতিস্থাপিত লিভারে কনিষ্ঠতম জীবিত গ্রহীতা এই ছোট্ট ছেলেটা দারুণ চনমনে হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার অ্যাপোলোতে একটা অনুষ্ঠানে - ছিল সকলের নয়নের মণি, কিন্তু ওকে এক দণ্ড বসিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। রিজওয়ানের মা ওর চেয়েও তাড়াতাড়ি সেরে উঠেছেন এবং অনেকদিন হল আবার ঘর গেরস্থালির কাজকর্মে হাত দিয়েছেন।

দিনই অ্যাপোলো গ্লেনইগলস পূর্ব ভারতের কোন হাসপাতালের প্রথম একক লিভার প্রতিস্থাপন ইউনিট চালু করল। ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ডাঃ রামদীপ রায়ের নেতৃত্বাধীন এই দলে থাকছেন বিপুল অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দুই ডাক্তার ডাঃ সুমিত গুলাটি আর ডাঃ সুপ্রিয় ঘটক।

রিজওয়ানের একটা জন্মগত সমস্যা ছিল, যার নাম এক্সট্রা হেপাটিক বাইলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়া। এই সমস্যা থাকলে লিভারে তৈরি হওয়া পিত্ত অন্ত্রে পৌঁছায় না, কারণ পিত্তনালী অনুপস্থিত। এর ফলে ক্রমশ লিভারে অপূরণীয় ক্ষতি হতে থাকে, তারপর ইনফ্যান্টাইল সিরোসিস অফ লিভার হয়। রিজওয়ানকে বাঁচানোর একমাত্র উপায় ছিল লিভার প্রতিস্থাপন।

কথা জানার পর রিজওয়ানের মা রিনা বিবি (তখন বয়স ২৭) চোখের পলকে সিদ্ধান্ত নেন ছেলেকে নতুন জীবন দিতে নিজের লিভার দান করবেন। রিনা গৃহবধূ, আর তাঁর স্বামী সবজি বিক্রেতা। রিজওয়ানের এক দিদিও আছে।

অপারেশনের আগে আমার ছেলের পেচ্ছাপ ছিল গাঢ় হলুদ আর পায়খানা সাদা। সারাক্ষণ কাঁদত আর একদম ঘুমোতে পারত না। আমরা যখন জানলাম ওর অসুখটা কী, তখন ভেবেছিলাম ওকে আর রাখতে পারব না। ভাগ্যিস অপারেশনটা করাব ঠিক করেছিলাম, এখন তো আমার ছেলে পুরোপুরি সেরে উঠেছে, রিনা বিবি, ২৮, বললেন।

পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডাঃ শুভময় দাসের মতে: বাবা-মায়েদের বাইলিয়ারি অ্যাট্রেসিয়ার লক্ষণগুলো চিনতে পারা খুব জরুরী। এর মধ্যে গাঢ় হলুদ পেচ্ছাপ আর ফ্যাকাশে পায়খানাও পড়ে। যত তাড়াতাড়ি অসুখটা ধরা পড়ে, ফলাফল তত ভাল হয়। এই বাচ্চাটাকে যখন আমাদের কাছে নিয়ে আসা হয়েছিল তখন ওর মরো মরো অবস্থা। তাহলেও আমি ছেলেটার মায়ের প্রশংসা করি, কারণ উনি একেবারে সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গ দাতা হতে রাজি হয়েছিলেন।

অসুখটা ধরতে পারা বেশ শক্ত কারণ লক্ষণগুলো ফুটে ওঠে বাচ্চাদের যখন কয়েক মাস বয়স সেই সময়। বয়সে বাচ্চারা নিজেদের অসুবিধা বোঝাতে পারে না, ফলে অনেক বাবা-মাই বাচ্চার কান্নার কারণ যে কোন ব্যথা, সেটা বুঝে উঠতে পারেন না।

প্রতিস্থাপনের পর রিজওয়ানের ফুসফুসে একটা ভাইরাল ইনফেকশন হয়েছিল এবং তার অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছিল। কিন্তু অ্যাপোলো গ্লেনইগলসের এক মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ডাক্তারদের টিম তাকে সারিয়ে তোলে।

ডাঃ মহেশ কুমার গোয়েঙ্কা, ডিরেক্টর, ইন্সটিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোসাইন্সেজ অ্যান্ড লিভার, অ্যাপোলো গ্লেনইগলস হসপিটালস, কলকাতা, বলেন বিভিন্ন বয়সের বহু মানুষ নানা অসুখের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন। তাঁদের কাছে লিভার প্রতিস্থাপন হল শেষ আশা। যদিও অ্যাপোলো গ্লেনইগলসে আমরা বহু বছর ধরেই লিভার প্রতিস্থাপন করছি, এই মুহূর্তে দরকার একটিম সার্জন যাঁরা এককভাবে লিভার প্রতিস্থাপনই করবেন। আমি গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে এখন আমাদের একটা অসামান্য প্রতিভাবান টিম রয়েছে, যার নেতৃত্বে আছেন ডাঃ রামদীপ রায়। ডাঃ সুমিত গুলাটি আর ডাঃ সুপ্রিয় ঘটক তাঁর সাথে দারুণ সঙ্গত করেন। আমরা ভাগ্যবান যে এঁদের সঙ্গে আছেন অত্যন্ত প্রতিভাবান জি আই লিভার প্রতিস্থাপন ইনটেসিভিস্ট ডাঃ ইন্দ্রজিৎ তিওয়ারি।

এই উপলক্ষে শ্রী রাণা দাশগুপ্ত, সি (ইস্টার্ন রিজিয়ন), অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপ, বলেন: আমরা সবসময়েই আমাদের রোগীদের সেরা পরিষেবা দিতে সাধ্যাতীত চেষ্টা করি। আর ডাক্তারদের পারদর্শিতা সেই চেষ্টা সফল করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ডাঃ মহেশ গোয়েঙ্কা আর তাঁর ক্রিটিকাল কেয়ার টিম বহুদিন ধরে অসাধারণ কাজ করে চলেছেন। ডাঃ রামদীপ রায়ের অধীন অ্যাপোলো গ্লেনইগলসের প্রথম ইন-হাউস একক লিভার প্রতিস্থাপন টিম (পূর্ব ভারতের যে কোন হাসপাতালেরই প্রথম) আমাদের মুকুটে আরেকটা পালক যোগ করল। আমি নিশ্চিত এই টিম আগামীদিনে আমাদের অনেক সম্মান এনে দেবে।

শ্রী দাশগুপ্ত আরো বলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর এই রাজ্যে অঙ্গ দান আন্দোলনকে জোরদার করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।

অ্যাপোলো গ্লেনইগলস হসপিটালসের লিভার প্রতিস্থাপন এবং হেপাটো-প্যানক্রিয়েটিকো-বাইলিয়ারি (এইচ পি বি) সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ রামদীপ রায় বলেন অ্যাপোলো গ্লেনইগলস হসপিটালসের ইনস্টিটিউট ইফ গ্যাস্ট্রো সাইন্সেজ অ্যান্ড লিভারের অধীনে একটা নতুন টিম তৈরি করতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। দিল্লী-গুরগাঁও অঞ্চলে একটা লিভার প্রতিস্থাপন টিমকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর আমার নিজের শহর কলকাতায় ফিরে এসে আরেকটা লিভার প্রতিস্থাপন প্রোগ্রাম তৈরি করতে পেরেছি ভেবে ভাল লাগছে।