পৃথিবীর তিনজন অপুষ্ট শিশুদের মধ্যে একজন ভারতবর্ষের অধিবাসী


প্রতি বছর ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ[National Nutrition Week] পালন করা হয়। এই অভিযানের লক্ষ্যই হল স্বাস্থ্যে পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করা, যা জাতীয় উন্নতি, উৎপাদন ও আর্থিক উন্নতিতে সহায়ক। সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবনযাপনে 'পুষ্টি' হল কেন্দ্রবিন্দু। 

পুষ্টি হলো পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু আহরণ করে খাদ্যবস্তুকে পরিপাক ও শোষণ করা এবং আত্তীকরন দ্বারা দেহের শক্তির চাহিদা পূরণ , রোগ প্রতিরোধ , বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করা ৷ অর্থ্যাৎ দেহ সুস্থ ও সবল রাখার প্রক্রিয়াকে পুষ্টি বলে৷ 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত অনুযায়ী ''পুষ্টি হল শরীরে খাদ্যের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যগ্রহণ"। বর্তমান ও আগামী সফল প্রজন্মের জন্য এটি হল অস্তিত্বের দিশা।


আর অপুষ্টি হল ''স্বল্প পুষ্টির এমন এক অবস্থা- যা অপর্যাপ্ত ও ভারসাম্যহীন খাদ্যের কারণে ঘটে থাকে''। এটি হল বিশেষ এক স্বাস্থ্য-সমস্যা যা মূলত: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটে থাকে। 

আনুমানিক ১/৩ শিশু-মৃত্যু এই অপুষ্টির কারণেই ঘটে থাকে। প্রতি তিনটি অপুষ্টির কারণে শিশু মৃত্যুর একটি ভারতে ঘটে থাকে। মানব স্বাস্থ্য ও প্রগতিতে অপুষ্টির বিরূপ প্রভাব রয়েছে। এতে জাতীয় উৎপাদন ক্ষমতা ও আর্থিক স্বচ্ছলতার হ্রাস ঘটে।

একটি সাধারণ প্রবাদই রয়েছে ''আপনি কী বা কী রকম, তা নির্ভর করছে আপনি কী ধরণের খান তার উপর''। প্রতিদিনের শারীরিক ক্রিয়াকর্ম ও পুষ্টিকর খাদ্যের মেলবন্ধন সুস্বাস্থ্যের ভিত্তি গড়ে তোলে। একটি সুস্থ শিশু তুলনামূলকভাবে বেশী ভালো শিখতে পারে। 

পর্যাপ্ত পুষ্টি-সম্পন্ন মানুষ তুলনামূলকভাবে বেশী সৃজনশীল। স্বল্প পুষ্টির কারণে শরীরের অনাক্রম্যতা কমে যেতে পারে, দুর্বলতা বাড়তে পারে, শারীরিক ও মানসিক বিকলঙ্গতা বাড়তে পারে এবং যেকোন ধরণের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যেতে পারে। 

২০০৫ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের তিন বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৬০ শতাংশ শিশুই অপুষ্টির শিকার। আফ্রিকার সাহারা-নিম্ন এলাকার পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই অপুষ্টি ২৮ শতাংশ যা ভারতের থেকে অনেক কম। বিশ্বব্যাংকের হিসেব বলে যে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে যে সমস্ত দেশের শিশুরা সবচাইতে বেশি অপুষ্টির শিকার ভারতবর্ষ তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান এবং তা আফ্রিকার সাহারা-নিম্ন এর অপুষ্ট শিশুদের সংখ্যার দ্বিগুণ। বিশ্বের অভুক্ত মানুষদের সূচি অনুযায়ী ভারতের স্থান ৬৭। পৃথিবীর সবচাইতে বেশি অভুক্ত মানুষের দেশ গুলির সংখ্যা মোট ৮০।  এমনকি উত্তর কোরিয়া এবং সুদানের থেকেও নিচে। ভারতের ৪৪ শতাংশ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম তাছাড়া ৭২ শতাংশ শিশু রক্তাল্পতার শিকার। এটা ধরে নেওয়া যায় যে সমস্ত পৃথিবীর তিনজন অপুষ্ট শিশু দের মধ্যে একজন ভারতবর্ষের অধিবাসী।

নিচের রাজ্যগুলিতে মানুষের অপুষ্টি সুস্পষ্ট।
উত্তর প্রদেশ: ভারতের সবচাইতে ঘনবসতিপূর্ণ এই রাজ্যের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বেশিরভাগই শারীরিক বিকাশ এবং বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত। কারণ এই অপুষ্টি।
তামিলনাড়ু: এই রাজ্যটিতে শিক্ষিতের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও শিশুদের অপুষ্টি জনিত সমস্যা খুবই স্পষ্ট জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষার বক্তব্য অনুযায়ী এখানে ২৩ শতাংশ শিশুর ওজন স্বাভাবিকের থেকে কম যেখানে চেন্নাইয়ের শিশুদের ২৫% বৃদ্ধি যথেষ্ট বাধাপ্রাপ্ত।
মধ্যপ্রদেশ: ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী মধ্যপ্রদেশের অপুষ্ট শিশুর সংখ্যা ভারতের মধ্যে সবচাইতে বেশি তার মধ্যে ছয় বছরের কম বয়সী শিশুদের ৭৪.১ শতাংশ রক্তাল্পতার শিকার এবং ৬০ শতাংশ অপুষ্টিজনিত রোগ আক্রান্ত।
ঝাড়খন্ড এবং বিহার: ঝাড়খন্ড ভারতের দ্বিতীয় অপুষ্ট শিশুর রাজ্য পরিমাণ ৫৬.৫ শতাংশ ও বিহারে পরিমাণ ৫৫.৯ শতাংশ।

শিশু-স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে যে বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত -
(a) গর্ভাবস্থায় ও মাতৃত্বের সময় মায়েদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন
(b) শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সুপরামর্শ-

• জন্মের ১ ঘন্টার মধ্যে শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো
• শিশুর ৬ মাস বয়সে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমানে মাতৃদুগ্ধ পান করানো
• অসুস্থতার সময় শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করান
• পরিবার ও স্বাস্থ্য কল্যাণ মন্ত্রকের MMA (মায়ের সম্পূর্ণ প্রেম) কর্মসূচি মেনা শিশুর ২ বছর বয়স পর্যন্ত ও উর্দ্ধে শিশুকে স্নেহের সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে মাতৃদুগ্ধ পান করান ।

(c) ৬ মাস বয়স থেকে শিশুকে কঠিন জাতীয় পরিপূরক খাদ্য খাওয়ানো প্রয়োজন।

পরিপূরক পুষ্টিকর খাদ্যের টিপস :

• ৬-৮ মাস বয়সে দৈনিক ২-৩ বার , ৯-১১ মাস বয়সে ৩-৪ বার, ১২-২৪ মাস বয়সে ১-২ বার দৈনিক পরিপূরক পুষ্টিকর খাবার শিশুকে খাওয়ান ।
• কতবার ও কতটা খাওয়াচ্ছেন তার ভিত্তিতে পরিপূরক খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে হওয়া প্রয়োজন ।
• সঠিক ও নিরাপদ পদ্ধতিতে খাদ্য প্রস্তুত করা প্রয়োজন ।

(d) সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশকে গুরুত্ব দিতে হবে।


তথ্যসূত্র: