'জয় সিয়া রাম' ধ্বনি দিয়ে শুরু করে বক্তব্য পেশ মোদির


অযোধ্যাঃ 

আজকের ঐতিহাসিক মুহূর্তের উদযাপনে মাটির প্রদীপে সেজেছে মন্দির শহর অযোধ্যা। আজ রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ভূমি পুজোয় যোগ দিতে বেলা ৯.৩৫ মিনিট নাগাদ দিল্লি থেকে লখনউতে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর হেলিকপ্টারে অয্যোধ্যায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘ ২৮ বছরে প্রথমবার অয্যোধ্যায় গেলেন প্রধানমন্ত্রী। হনুমানগঢ়ী মন্দিরে পুজো দেন তিনি।ভূমিপুজোয় যোগ দেওয়ার আগে একটি পারিজাত গাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী। অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ভূমিপুজোয় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। 'জয় সিয়া রাম' ধ্বনি দিয়ে শুরু করে বক্তব্য পেশ মোদির। 


অযোধ্যা রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠার পর আমন্ত্রিতদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে মঞ্চে উঠেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, "প্রথমে আমার সঙ্গে প্রভু রাম ও মাতা জানকীর নাম করে নিন। তার পরেই কথা এগোব। জয় শ্রী রাম।"



জন্মভূমিতে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানকে সরযূ নদীর তীরে এক স্বর্ণযুগের সূচনা বলেই ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রামের জয়ধ্বনি সারা বিশ্বে শোনা যাচ্ছে। শুধু দেশবাসী নয় সারা পৃথিবীর ভারতবাসী শুনতে পাচ্ছেন। সরযূ নদীর তীরে এক স্বর্ণযুগের সূচনা হল। আজ গোটা ভারতই রামময়, রোমাঞ্চিত।’


এই মুহূর্তের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝাতে তিনি বলেন, "বহু যুগের অপেক্ষার আজ অবসান। কোটি কোটি লোক হয় তো আজ বিশ্বাসও করতে পারছেন না যে তাঁরা এমন ইতিহাসের সাক্ষী হলেন।"



মোদি বলেন, ‘রাম আমাদের মনে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। রাম আমাদের প্রেরণা। এই রামমন্দির আমাদের সংস্কৃতির আধুনিক প্রতীক হবে। আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাবনার প্রতীক হবে। সর্বক্ষেত্রে এরজন্য আমাদের উন্নতি হবে।


সারা পৃথিবীর মানুষ এখানে আসবেন। এর মাধ্যমে বর্তমানের সঙ্গে অতীতের যোগসূত্র স্থাপিত হবে বলেই মনে করছেন মোদী।



বহু বছরের প্রচেষ্টার পর অবশেষে রামমন্দির তৈরির সূচনার আবেগতাড়িত প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বহু বছর ধরে আমাদের রামলালা এখানে তাঁবুতে থেকেছেন। আজ তাঁর জন্য মন্দির তৈরির সূচনা হল। ভেঙে পড়ে আবার উঠে দাঁড়ানো, আজ এ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।'


তিনি আরও বলেন, ‘আজ সারা দেশের মানুষ রামমন্দির নির্মাণে শরিক হয়েছেন। রামের চরিত্রের কেন্দ্রবিন্দু হল সত্যপালন। জীবনের এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে রাম প্রেরণা নয়। বহুর মধ্যে বৈচিত্রই ভারতের বৈশিষ্ট। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে তাই বিভিন্ন রামায়ণ। ভারতের বাইরেও বিভিন্ন দেশে রামায়ণ রয়েছে। সর্বত্রই রাম একইভাবে পূজনীয়।’


মোদি বলেন, ‘অযোধ্যা রামের জন্মভূমি, রামের আপন নগরী। রাম নিজেই তাঁর প্রিয় নগরীর কথা বলে গেছেন। রামের শিক্ষা হল কেউ দুঃখী হবে না, কেউ দরিদ্র হবে না। শিশুদের, বৃদ্ধদের চিকিৎসকদের রক্ষা করতে হবে। করোনার সময়কালে এই শিক্ষা একান্ত জরুরি।’


আজকের দিনটিকে স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে তুলনাও করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বহুদিনের প্রতীক্ষা অবশেষে সমাপ্ত হল। রামজন্মভূমি আজ মুক্ত হল। সারা ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল। ১৫ অগাস্ট সেই স্বাধীনতার প্রতীক। সেইরকম আজকের দিনও একইরকম ত্যাগ, সঙ্কল্পের প্রতীক। রামমন্দিরের জন্যও একইভাবে তপস্যা, ত্যাগ, সঙ্কল্প হয়েছে। স্বাধীনতার মতই মানুষ বলিদানও দিয়েছেন।’


তিনি বলেন যে রামের অস্তিত্ব মেটানোর বহু প্রচেষ্টা হয়েছে। "কিন্তু রামচন্দ্র সেই আমাদের মনে রয়েছেন। তিনি অমর। তিনি আবার তাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, আজ সেই ভূমিপুজো হয়েছে। তাই ভগবান রামকে কখনো মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি সমগ্র ভারতবাসীর হৃদয়ে আছেন," বলেন তিনি।


এদিনের বক্তব্যে তিনি মহাত্মা গান্ধীর কথাও উল্লেখ করেন। এই আলোতেই মহাত্মা গান্ধী রাম রাজত্বের স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই জানান প্রধানমন্ত্রী। ‘আত্মনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী ভারত গড়াই আমাদের লক্ষ্য। রামের ওপর আস্থা রাখলেই দেশ এগিয়ে যাবে। এই করোনাকালে রামের আশীর্বাদ আরও জরুরি।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।