মনের পশু বৃত্তিকে কুরবানী দেবার কথা বলতে আসে ঈদ-উল- আযহা


শুভাশিস দাশঃ 


ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা তাঁদের যে দুটি বড় উত্সব পালন করে থাকেন তার মধ্যে একটি এই ঈদ্দুজোহা বা কোরবানি ঈদ ।


এই ঈদে পশু কুরবানী করার রীতি আছে । অবশ্য এই ঈদে যে কুরবানী হয় তা প্রকৃত কুরবানী কথার অন্তর্নিহিত কথা নয় এটা অনেকটা আমাদের হিন্দু ধর্মের বলি প্রথার মতো । মনের পশু বা আসুরিক বিত্ত কে বলি দেয়াই মূল কথা । মুসলমান ধর্মে অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের বছরের শেষ উত্সব হলো ইদূজ্জোহা । ইসলামী বছরের শেষ মাস হলো ' জিলহজ্ব ' । এসময়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ঈদুল আজহা আসে এক পরিপূর্ণ ত্যাগ ও উত্সর্গের রূপ নিয়ে ।


ঈদুল আজহার দুটি দিক হলো হজ্ব ব্রত ও কুরবানী । বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সুদূর আরব ভূখণ্ডের পবিত্র আরাফত নামক ময়দানে মিলিত হয়ে ধর্মীয় রীতি মেনে মদিনা মনোয়ারায় নূরে খোদা হজরত মহম্মদ (সা :)এর মাজারে জিয়ারত করেন এবঙ কাবায় তাঁর উদ্দেশ্যে নামাজে ব্রত হয়ে হজ্ব ব্রত সমাধা করেন ।


মুসলিম ধর্ম গ্রন্থ কোরান শরীফে লেখা আছে প্রতিটি মুসলমান কে জীবনে অন্তত একবার হজ্ব ব্রত পালন করা উচিত ।


পবিত্র হজ্ব উত্সবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ জড়ো হন । সবার পরনে সাদা পোশাক । মাথা ন্যাড়া । এই খানে ধনী গরীব ফকির আমীর সবার জন্যে একই ব্যবস্থা । এই খানে মনে হবে মানুষ সবাই সমান । এই তো গেলো একটি দিক এবার কুরবানীর কথায় আসা যাক । এই ঈদুল আজহা এলেই মনে করিয়ে দেয় সেই পিতাপুত্রের আত্মনিবেদন এর কথা । প্রায় চার হাজার বছর আগে নবী হজরত ইব্রাহিম আরবের বুকে স্বপ্নে জেনেছিলেন মহান রব্বুল আলামীন আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কুরবানীর কথা । আল্লাহ পরীক্ষা নিতে তার পুত্রকে কুরবানী দিতে বলেন । ইব্রাহিম তাঁর পুত্রকে আল্লার ইচ্ছের অনুসারে কুরবানী দিয়েছিলেন কিনতু ইসমাইল অক্ষত ছিল তাঁর পরিবর্তে আরবের পশু দুম্বা কুরবানী হয়েছিল ।


এই যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি এতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছিলেন । হজরত ইব্রাহিম বিশ্বের মাঝে তাঁর ধৈর্য্য , ত্যাগ , শক্তি সাহসের এবঙ সংযমের যে চিহ্ন রেখেই গেছেন তা হাজার হাজার বছর ধরেই এই ঈদুল আজহার মাধ্যমে স্মরণ করা হয় । কিন্তু আমরা প্রকৃত অর্থে কি সেটা মানি ?


ঈদুল আজহা বা ইদুজ্জোহা কিন্তু অন্য কথা বলে । কুরবানী দিয়ে শুধু মাংস ভক্ষণ করা কিন্তু কুরবানীর প্রকৃত অর্থ নয় । ভূরিভোজ আমোদ প্রমোদ কিন্তু ইসলাম সমর্থন করেনা । কোন ধর্মই কিন্তু জীব হত্যার ইন্ধন দেয় না । আরব দেশে দুম্বা নামের এক প্রজাতির পশু আছে । জেনেছি তার লেজের দিকের একটা অংশ কে কুরবানী করা হয় । সেই কাটা অংশ নাকি আবার আপনা থেকেই মাংস তৈরি হয় । কিন্তু আমাদের দেশে তো সেই পশু নেই তাই পাঁঠা খাসি ইত্যাদি পশুকে বলি বা কুরবানী দেয়ার চল আছে ।


আসলে মনের পশুবৃত্তি গুলোকে কুরবানী দেয়াই হলো প্রকৃত কুরবানী । এই উত্সব হচ্ছে আত্মসংযম এবঙ আত্মনিবেদন এর উত্সব । পশু কুরবানী একটা প্রতীকী মাত্র । কিন্তু বাস্তবে আমরা এই চিত্র খুব একটা দেখিনা অথচ ঈদুল আজহা আসে আমাদের মনে করিয়ে দিতে মনের যত পশু বৃত্তি সব কুরবানী দিয়ে পবিত্র হও , সুচিন্তা করো মানুষের মংগল কামনা করো ।


এই দুঃসময়ে যখন বিশ্ব জুড়ে এক অস্থির পরিস্থিতি চলছে । মানুষে মানুষে হানাহানি ধর্ম নিয়ে বিভেদ ! চারদিকে শিশু ধর্ষণ , নারি ধর্ষণ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে ।


আর একদিকে করোনা ভাইরাসের থাবা আমাদের যাপন কে ওলট পালট করে দিয়েছে । ঠিক এই সময়ে আমাদের সংযত হতে হবে , মানুষে মানুষে মেল বন্ধন তৈরি করতে হবে । প্রতিটি ধর্মই বলে মানুষ কে ভালবাসার কথা , সংযমের কথা । আর ঈদুল আজহা আসে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিতে । মনের পাশবিকবৃত্তি গুলোকে কুরবানী দেয়ার কথা বলতে ।

লেখকের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব, সংবাদ একলব্য কোনভাবেই দায়বদ্ধ নয়