সারা বিশ্ব করোনার টিকার অপেক্ষায়। এদিকে, আইসিএমআর ও ভারত বায়োটেকে যৌথ প্রচেষ্টায় ভারতেও বানাচ্ছে করোনার টিকা। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর জানিয়েছিল, ১৫ অগাস্টের মধ্যে বাজারে করোনার টিকা আনার পরিকল্পনা করছে তারা। 


আইসিএমআর যে টিকা আনছে তাঁর নাম নাম বিবিভি১৫২ কোভিড টিকা। দেশে তৈরি এই প্রথম করোনা প্রতিষেধকের ১২টি প্রতিষ্ঠানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। আইসিএমআর তাদের অনুরোধ করেছে, দ্রুত এই ট্রায়াল শেষ করতে, কারণ এটিকে টপ প্রায়রিটি প্রজেক্ট হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা, কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্তর থেকে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। চিঠি দিয়ে ভার্গব বলেছেন, এ মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পর্কিত সমস্ত সম্মতি এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে অবশ্যই জোগাড় করে ফেলতে হবে, যাতে তা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজারে আনা যায়।


বিবৃতিতে আইসিএমআর বলেছে, জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ১৫ অগাস্টের মধ্যে এই টিকা বাজারে আনার পুরোদমে চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। এর মধ্যে সবকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করতে হবে। ভারত বায়োটেক নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছে। যদিও এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সব কটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরেই চূড়ান্ত ফল জানা যাবে।


অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস ও ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সস-এর মতো সংস্থাগুলি এই বিবৃতিতে মোটেই সন্তুষ্ট হয়নি। বিজ্ঞানীরা বলেন, এত তাড়াহুড়ো করে করোনা টিকা বাজারে আনলে সমস্যা হতে পারে। কারণ স্বাভাবিক ভাবে ট্রায়াল সারতেই ১২ থেকে ১৮ মাস লেগে যায়। সেখানে এত দ্রুত করাটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। 


ঠিক একই কথা বলছে জনবিজ্ঞান সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চও। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে একটি প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, "আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি গবেষণার পদ্ধতি, রীতিনীতি মেনে এবং কার্যকারিতার সমস্ত দিকে বিবেচনা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তা বাজার হওয়া উচিত। সেখানে এরকম সময়সীমা বেঁধে দেওয়া শুধু বিজ্ঞানবিরোধী নয়, আইসিএমআর-এর তৈরি করা ন্যাশনাল ইথিকাল গাইডলাইন ফর বায়োমেডিক্যাল রিসার্চের পরিপন্থী। আবার আইসিএমআর এর ডিরেক্টর ঐ প্রতিষেধকের ট্রায়াল দেওয়ার জন্য নির্বাচিত পরীক্ষাগুলির বিজ্ঞানীদের যে ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন তা বিজ্ঞানীদের ওপর হুমকির সমান- যা গবেষক বিজ্ঞানীদের স্বাধীনতা ও বিজ্ঞানের স্বাধীন বিকাশের পরিপন্থী। কোভিড ১৯ প্রতিরোধী টিকা তৈরির লক্ষ্যে আমরা চাই সুনিবিড় ও সুসংহত গবেষণা।" 

এদিকে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় রবিবার দুপুরে জানিয়েছে, ভারত-নির্মিত কোভ্যাকসিন এবং জাইকভ-ডি সহ বিশ্বব্যাপী মানবিক ক্লিনিকাল পরীক্ষায় বর্তমানে ১১ টি COVID-19 ভ্যাকসিন এর মধ্যে কোনটিই ব্যাপক ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। 


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, "পুনের আইসিএমআর ইনস্টিটিউশান ন্যাশনাল ইন্সটিউট অফ ভাইরোলজি, হায়দরাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার মলিকিউলার বায়োলজি এবং ছ'টি ভারতীয় কোম্পানি মিলে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। বিশ্বের বহু ভ্যাকসিনের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে কোভ্যাক্সিন এবং জিকোভ-ডি নামক ভারতের দুটি ভ্যকসিন হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য গিয়েছে। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই ২০২১ সালের আগে এই ভ্যাকসিন ভারতের বাজারে আনা সম্ভব নয়।"


এই মর্মে বিবৃতি দেওয়ার পরেই তা প্রত্যাহার করে নেয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক। প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ওয়েবসাইটে এই প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার সেই লেখায় বদল আনা হয়। প্রথমে লেখা হয়েছিল, ‘২০২১-এর আগে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’ পরে এই অংশটি বাদ দেওয়া হয়।