SANGBAD EKALAVYA: 

নিয়োগ নিয়ে  একাধিক অভিযোগে  জেরবার রাজ্য। সে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হোক, কিংবা কলেজ শিক্ষক। 

রাজ্যের কলেজের আংশিক সময়ের শিক্ষক (পিটিটি), চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক (সিডব্লিউটিটি) এবং অতিথি শিক্ষকদের (জিটি) একত্রে ‘স্টেট এডেড কলেজ টিচার’ (স্যাক্ট) স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। তিনি জানিয়েছিলেন- PTT, CWTT, GUEST TEACHER বলে আর কোনো আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি থাকবে না। এখন থেকে বলা হবে govt. approved college teacher.

সেই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত করে উচ্চশিক্ষা দপ্তর। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার নিরিখে ওই সমস্ত শিক্ষকদের ভাতা-বৃদ্ধিও কার্যকরী হয়। 

সরকারি বিজ্ঞপ্তি (নং ২০৮১-ইডিএন(সিএস)/ ১০এম-৮৩/২০১৯) অনুযায়ী, স্যাক্ট-১ ও ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞরা পাবেন ৩৫ হাজার টাকা। স্যাক্ট-১ ও ১০ বছরের কম অভিজ্ঞরা পাবেন ৩১ হাজার টাকা। স্যাক্ট-২ ও ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞরা পাবেন ২৫ হাজার টাকা। স্যাক্ট-২ ও ১০ বছরের কম অভিজ্ঞরা পাবেন ২০ হাজার টাকা। এ ছাড়া সরকারি আদেশে রাজ্যের ৫,৫০০ জন আংশিক সময়, ৫৫০ জন চুক্তিভিত্তিক ও ৮৫০০ জন অতিথি শিক্ষক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত কাজের অধিকারও পেলেন। প্রতি বছর ৩% বেতন-বৃদ্ধি ও অবসরকালীন ৫ লক্ষ টাকা এককালীন ভাতারও সুবিধা পাবেন তাঁরা। পাবেন বদলির সুবিধাও। প্রত্যেক শিক্ষককে সপ্তাহে ১৫ ঘন্টা ক্লাস নিতে হবে। কর্মরত যে সকল পিটিটি-সিডব্লিউটিটি বর্তমানে বেশি হারে ভাতা পান, তাঁদের পে-প্রোটেকশনও দেওয়া হবে।


কিন্তু সমস্যা বাঁধে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নিয়ম নিয়ে। কার্যত UGC কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই নিয়োগ বলে অভিযোগে সোচ্চার হন রাজ্যের হাজার হাজার গবেশক-পড়ুয়া এবং নেট, সেট কোয়ালিফাই প্রার্থীরা। 

রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গুলির নিয়ন্ত্রণে থাকা জেনারেল ডিগ্রী কলেজের সংখ্যা প্রায় ৫০০। আর দেশের যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসি দ্বারা পরিচালিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত, তারা নিয়োগের ক্ষেত্রেও ইউজিসির নিয়ম মানতে বাধ্য থাকে। 

ইউজিসির সর্বশেষ নির্দেশিকা অনুসারে কলেজে পড়ানোর জন্য নূন্যতম যোগ্যতা হতে হবে নেট বা সেট পরীক্ষায় পাশ এবং সাথে স্নাতকোত্তরে এ ৫৫% নম্বর (সংরক্ষিত দের ক্ষেত্রে ৫০%)। যে সমস্ত বিষয়ে নেট বা সেট পরীক্ষা নেওয়া হয়না সে ক্ষেত্রে নেট বা সেট পাশের কোন বিষয় নেই । 

তবে ২০১৬ এর UGC এর Phd বিধি অনুসারে Phd করা থাকে ও ২০০৯ এর ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ শর্তে Phd ডিগ্রী অর্জনকারীরা নেট বা সেট পরীক্ষায় পাশ না করলেও কলেজে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

অথচ একদিকে যেখানে নিয়মিত নিয়োগ নেই সেখানে নেট-সেট উত্তীর্ণ প্রার্থী ছাড়াই  রাজ্যসরকার নতুন নিয়মে সেই আংশিক সময়ের এবং অতিথি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পদকে স্থায়ী করণ করছে। ফলে নতুন নিয়োগের সম্ভাবনায় কমে যাচ্ছে। আর তাই প্রতিবাদে সামিল হয়েছে একাধিক সংগঠন সহ শিক্ষিত সমাজ। তাঁদের বক্তব্য-

  • আংশিক সময়ের শিক্ষক বা অতিথি শিক্ষক দের স্থায়ী করলে মোট শূণ্যপদ কমে যাবে। 
  • এইভাবে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগে মেধার তুলনায় দলীয় আনুগত্য এর প্রভাব বেশি দেখা দেবে।
  • UGC এর নিয়ম না মেনে নিয়োগ না হলে গুণগত মানের অভাব তৈরি হবে।
  • যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী এখন নেট সেট পাশ করে আছেন বা পিএইচডি করছেন তারা ভবিষ্যৎতে নিয়োগের কোন সুযোগই পাবেন না।  
প্রাক্তন IAS Dr. Sandipan Dhar, বলেন- পশ্চিমবঙ্গ সহ সমস্ত দেশে শিক্ষার  দলীয়করণের চেষ্টা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে ভোটপূজা বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হীরকরাজার রাজ্যে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এটার প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে।"   

ইতিমধ্যে USRESA সহ একাধিক সংগঠন 2081 EDN(CS) বাতিলের দাবিতে অর্থাৎ সকল SACT অধ্যাপকদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মামলা করেছেন l আগামী সপ্তাহে এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ হেয়ারিং রয়েছে। আর এই হেয়ারিং নিয়ে আশাবাদী USRESA  সহ একাধিক সংগঠন। তারা আশা করছেন মহামান্য আদালত SACT অধ্যাপকদের নিয়োগ বাতিলের আদেশ দেবেন।