ভারত চীন সংঘাতের দামামা বাজতে না বাজতেই ফের সেই অহিংস আন্দোলনের সুরেই চীনা দ্রব্য বয়কটের আওয়াজ উঠল গোটা দেশে। শুরু হয়ে গেল জায়গায় জায়গায় চীনা দ্রব্য পুড়িয়ে প্রতিবাদ । বিজেপি, তৃণমূলের পাশাপাশি ব্যবসায়িক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ভারতের ওপর চীনা হামলার ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর এখন গোটা রাজ্য।
করোনা নিয়ে যখন গোটা দেশ জুড়ে আতংক ক্রমশই বাড়ছে সেইসময় ভারতের সঙ্গে চীনের যুদ্ধকে ঘিরে তৈরী হওয়া নতুন আবহে নতুন মাত্রা জুগিয়েছে চীনা দ্রব্য বয়কটের আওয়াজ। যদিও আদপেই এই বয়কট কতটা করা সম্ভব তা নিয়ে রীতিমত বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার বর্ধমান জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বেশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, তাঁরা গোটা জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে আবেদন রেখেছেন চীনা দ্রব্য বিক্রি না করার জন্য। তাঁরা ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন, নতুন করে কোনো ব্যবসায়ী যাতে চীনা দ্রব্য না কেনেন।
যেহেতু ইতিমধ্যেই বহু ব্যবসায়ী মোটা পুঁজি লাগিয়ে বিভিন্ন চীনা দ্রব্যকে মজুদ করেছেন, সেগুলি কি করবেন তা নিয়ে বিরাট দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, খোদ ব্যবসায়ী মহলের দাবী, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় কমবেশি প্রতিটি বাড়িতেই ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশেরও বেশি চীনা দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন যে ওষুধের প্রয়োজন হয় তারও কাঁচামালের ৬০ – ৭০ শতাংশ আসে চীন থেকে। ফলে ওষুধ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও সেই একই চিন্তা দেখা দিয়েছে।
ওষুধের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রে বা বিশেষতই মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে চীনা প্রভাব ৮০ শতাংশেরও বেশি। ফলে কিভাবে সেগুলি বয়কট হবে?
বর্ধমান জেলা লরেল কেমিষ্ট এণ্ড ড্রাগিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ কোনার, তুহিন দে, রূপক সরকার প্রমুখরা জানিয়েছেন, ভয়াবহ সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে সাধারণ মানুষকে। কারণ চীনে শ্রমিক সহজলভ্য। ফলে সেখানকার উত্পাদিত মালের দাম তুলনামূলক অনেক কম। তারা জানিয়েছেন, দেখা গেছে কোনো ওষুধের কাঁচামাল যা চীন থেকে আসছে তা ভারতে তৈরী করতে গেলে যে খরচ পড়ে বা ওষুধের যে দাম হওয়া উচিত তার তুলনায় চিনের ওষুধের দাম অনেকটাই কম। এখন যদি সমগ্র চীনের দ্রব্যকেই বয়কট করতে হয় তাহলে আমাদের দেশকে সেই জায়গায় স্বনির্ভর হতে হবে। স্বনির্ভরতার আগে বয়কট হলে ভয়াবহ সমস্যা নেমে আসবে সাধারণ জনজীবনে।
শুধু ওষুধ শিল্পেই নয়, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স জগতে, খেলনা সহ গৃহস্থালী সরঞ্জাম, গৃহসজ্জাতেও আজ রীতিমত সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে চিনা দ্রব্য। কাপডিস থেকে হাতের মোবাইল ফোন – এমনকি শিশুদের খেলনাও এখন চীন থেকে আমদানী করা হয়। ফলে এগুলিকে বয়কট করতে গেলে রীতিমত অর্থনীতিতে ধবস নামতে বাধ্য।
বর্ধমান শহরের বিশিষ্ট মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী শুভাশীষ ঘোষাল জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে যে মোবাইল ফোন বিক্রি হয় তার সিংহভাগই চীনের। দেশীয় যে কয়েকটি কোম্পানী রয়েছে সেই ফোনের দাম যেমন বেশি তেমনি যোগানও অত্যন্ত কম। অথচ চীনের মোবাইল ফোন বহুবিধ দামে সাধারণের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। তাই তার চাহিদাও বেশি, যোগানও ঠিক।
এমতবস্থায় বহু ব্যবসায়ীই মোটা টাকা খরচ করে মাল তুলে রেখেছে। এখন সেগুলি কিভাবে বয়কট করা হবে। আর যদি তা করতে হয় তাহলে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির দায়ভার কে নেবে?
পূর্ব বর্ধমান চেম্বার অব ট্রেডার্সের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব জানিয়েছেন, বর্ধমানের ব্যবসায়ীদের কাছে চীনা সামগ্রী বয়কট করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊