আজ আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস।
সুরশ্রী রায় চৌধুরীঃ
আন্তর্জাতিক স্তরে মাদক বিরোধী দিবস পালনের উদ্দেশ্য, সমস্যাটির প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা, এবং বিভিন্ন স্তরে আলচনার মঞ্চ গড়ে তোলা।
বুধবার আন্তর্জাতিক মাদক-বিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে পার্ক স্ট্রিট-ক্যামাক স্ট্রিটের সংযোগস্থলে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের নার্কোটিক্স শাখার উদ্যোগে আয়োজিত হয় একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান এবং ড্রাগের নেশার বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার শপথ নিয়ে পদযাত্রা। অনুষ্ঠানে এবং পদযাত্রায় অংশ নেন কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা এবং একাধিক টলি তারকা, যেমন দেব, আবীর চট্টোপাধ্যায়, এবং শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গে প্রখ্যাত গায়িকা ঊষা উত্থুপ এবং প্রায় হাজারখানেক কলেজপড়ুয়া ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা।
পার্ক স্ট্রিট, লাউডন স্ট্রিট, শেক্সপিয়ার সরণী হয়ে মিছিল পৌঁছয় জওহরলাল নেহরু রোড-মেয়ো রোডের সংযোগস্থলে। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনা করেন ঊষা উত্থুপ, এবং বক্তব্য রাখেন অনুজ শর্মা।
কলকাতা পুলিশের উদ্যোগ ‘শুদ্ধি’ নামে একটি বিশেষ পুনর্বাসন প্রকল্প চালু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাস থেকে। প্রকল্পটির লক্ষ্য মূলত দুটি – গভীরভাবে মাদকাসক্ত অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা, এবং এই প্রচেষ্টায় সামিল করা সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে, যাঁরা কেবল অর্থ প্রদান করে এই উদ্যোগকে সমর্থন করবেন তাই নয়, চাইলে অন্য অনেক উপায়ে এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমাজসেবা করতে পারবেন।
মিছিলের অংশ কলকাতা পুলিশের উইনার্স নারীবাহিনী
২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদক সেবন এবং পাচার বিরোধী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। এই দিনটি পালন করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মাদক সেবন ও পাচারের মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। এবছরের থিম হলো, ‘হেলথ ফর জাস্টিস, জাস্টিস ফর হেলথ’। রাষ্ট্রসংঘের বক্তব্য, মাদক সেবন রুখলে স্বাস্থ্য এবং ন্যায়, দুইয়েরই পক্ষ নেওয়া হয়।
সারা পৃথিবী জুড়ে আজ মাদক পাচার একটি গভীর সঙ্কটের রূপ নিয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, যেসব দেশে অর্থের অভাবে ভুগছেন বহু সংখ্যক মানুষ, এবং নিরাপত্তার অভাবে আটকানো যায় না বহু অপরাধ। এই পরিস্থিতিতে অপরাধের পথে মানুষকে চালিত করা সহজতর হয়ে পড়ে। সমীক্ষায় প্রকাশ, মাদক পাচারের ফলে ব্যাহত হয় শিক্ষা, বাড়ে অপরাধ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ১৯৯০ সালে একটি আইন করা হয়; যা কার্যকর হয় ওই বছরের ২ জানুয়ারি। এই আইনে মাদক বলতে যেকোনো মদ, দশমিক পাঁচ শতাংশের বেশি এ্যালকোহলযুক্ত বিয়ার, হেরোইন, কোকেন এবং কোকা উদ্ভূত মাদক, পেথিডিন, মরফিন ও টেট্রা হাইড্রোক্যানাবিনল, অপিয়াম, গাঁজা বা যে কোনো ভেষজ ক্যানাবিস ইত্যাদিকে বোঝায়। যখন এই আইনটি প্রণীত হয়, তখন দেশে ইয়াবা আসতে শুরু করেনি। ফলে ইয়াবার নামটি এই আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দেশে মাদকের বিস্তার ঘটে মূলত আশির দশকে এবং নব্বই দশকে এটি সর্বগ্রাসী রূপ নেয়, বিশেষ করে ফেন্সিডিলের কারণে। ভারত থেকে আসা এই কাশির সিরাপ মাদকসেবীদের মধ্যে এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে, ১৫-২০ টাকার সিরাপ পাঁচ ছয়শো টাকায়ও বিক্রি হত। আমাদের দেশে এ মুহূর্তে ইয়াবা, গাঁজা, বিভিন্ন প্রকারের মদ, নানারকম কাশির সিরাপ ও ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে তৈরি তরল মাদকের চাহিদা বেশি। হালে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় তৈরি হয়েছে ‘সিসা বার’ যেখানে ধনীর সন্তানরা দল বেঁধে হাজির হচ্ছেন। প্রাচীনকালের হুঁকার নগর সংস্করণকে বলা হচ্ছে সিসা। তামাক ও আফিমের সঙ্গে কথিত ফলের নির্যাস মিলিয়ে হুঁকা টানা হয়।গণমাধ্যমের খবর বলছে, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারাও এসব বারে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কেননা এটি মাদকের তালিকায় না থাকায় সিসার নেশায় আসক্ত কিংবা তা বেচাকেনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
দেশে ভয়াবহ মাদকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিকে রুখতে মানুষকে সচেতন করতে আজকের কর্মসূচি।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊