জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’০, ১৩তম পর্ব অনুষ্ঠিত হল আজ। আজকের মন কি বাত অনুষ্ঠানে একাধিক বিষয় উঠে আসে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আনলক শুরু হলেও বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। ডিজিটাল শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে সবাই। কিন্তু এতে যে কোথায় একটা বড় ঘাটতি থেকে যাবে তা উঠে আসছিলো বিভিন্ন আলোচনায়। এদিন মোদীর মন কি বাত অনুষ্ঠানে সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। তিনি লোকক্রীড়ার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করেন এদিন। 


তিনি এদিন বলেন- "আজ প্রায় প্রতিটি বাচ্চাই সাপ - লুডো খেলার সম্বন্ধে জানে। এটা কি আপনারা জানেন যে , এই খেলাটিও একটি ভারতীয় ঐতিহ্যপূর্ণ খেলারই রূপ, যাকে মোক্ষ পাটম বা পরমপদম বলে। আমাদের আরও একটি এরকম ঐতিহ্যপূর্ণ খেলার নাম ড্যাঙগুলি। বড়রা ড্যাঙগুলি খেলে, আবার ছোট বাচ্চারাও খেলে। একই আকৃতির পাঁচটি ছোট পাথর সংগ্রহ করতে পারলেই আপনি ড্যাঙগুলি খেলার জন্য তৈরি। একটি পাথরকে হাওয়ায় ছুঁড়ে দিয়ে, মাটিতে রাখা বাকি পাথরগুলোকে তুলে নিতে হয়, ওই পাথরটি হাওয়ায় ভেসে থাকার সময়টুকুর মধ্যেই। সাধারণত এই ধরনের ইনডোর গেমগুলো খেলার জন্য বিশেষ কোন সাধনার দরকার হয়না। একটি চক বা পাথর নিয়ে এসে সেটা দিয়ে মাটিতে কিছু দাগ কাটলেই খেলা শুরু হয়ে যায়। যে সমস্ত খেলায় ডাইসের প্রয়োজন হয়, সেখানে কড়ি বা তেঁতুলের বীজ দিয়েও কাজ চলে যায়।" 


প্রধানমন্ত্রী বলেন- "আমি জানি, আজ যখন আমি এই কথাগুলো বলছি, অনেকেই নিজের ছোটবেলায় ফিরে গেছেন, বা অনেকের হয়ত নিজের ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি এটাই বলব যে সেই দিনগুলো আপনারা ভুলে যাচ্ছেন কেন? সেই খেলাগুলিকে আপনারা ভুলে যাচ্ছেন কেন? বাড়ির দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাড়ির প্রবীণদের প্রতি আমার আবেদন, এই খেলাগুলিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আপনারা যদি পৌঁছে না দেন তবে কারা দেবে! এখন অনলাইন পড়াশোনার কথা চলছে। তাই ভারসাম্য বজায় রাখতে অনলাইন গেম এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও আমাদের এমনটা করতেই হবে. আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য, এবং আমাদের স্টার্টআপগুলির জন্যও এক্ষেত্রে একটা নতুন, শক্তিশালী এবং প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন সুযোগ রয়েছে। আসুন, আমরা ভারতের পরম্পরাগত ইনডোর গেমসগুলিকে নতুন ও আকর্ষণীয়় রূপে প্রস্তুত করি। তার সঙ্গে যুক্ত জিনিসপত্রের যোগান বা সাপ্লাই যারা দেবে সেই সব স্টার্টআপগুলিও জনপ্রিয় হবে। আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আমাদের ভারতীয় খেলাও তো লোকাল আর আমরা লোকাল এর জন্য ভোকাল হওয়ার ব্রত প্রথম থেকেই নিয়েছি।" 


প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রসঙ্গত বলেন "আর আমার ছোট্ট বন্ধুদের, প্রতিটি ঘরের বাচ্চাদের, আমার ছোট্ট সঙ্গীদের প্রতিও আজ আমি বিশেষ একটি আবেদন করছি। বাচ্চারা, তোমরা আমার অনুরোধ শুনবে তো? দেখো আমার অনুরোধ, আমি যেটা বলছি, সেটা তোমরা অবশ্যই কোরো। একটা কাজ করো, এখন একটু সময় পাওয়া গেছে, তাই বাবা মাকে জিজ্ঞাসা করে মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা বা বাড়ির যেকোনো প্রবীণ মানুষের ইন্টারভিউ রেকর্ড করো। নিজেদের মোবাইল ফোনেই রেকর্ড করো। যেমন তোমরা টিভিতে দেখেছো কিভাবে সাংবাদিকরা ইন্টারভিউ নেয়। ব্যাস তেমনি ইন্টারভিউ তোমরা করো।" 


কিন্তু কি বিষয়ে হবে সাক্ষাৎকার? মোদী তাও বাতলে দেন-" আর তাতে তোমরা কী প্রশ্ন করবে? আমি তোমাদের একটা পরামর্শ দিচ্ছি। তোমরা তাঁদের অবশ্যই জিজ্ঞেস করো ছোটবেলায় তাঁরা কীভাবে জীবন কাটাতেন, কোন কোন খেলা তারা খেলতেন। কী কী নাটক দেখতে যেতেন, সিনেমা দেখতে যেতেন। ছুটিতে কখনো মামাবাড়ি যেতেন, কখনো বা চাষের জমিতে ঘুরতেন। কিভাবে তারা উৎসব পালন করতেন, এমন অনেক কথা তাদের তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পারো। তারাও নিজেদের চল্লিশ, পঞ্চাশ বা ষাট বছর আগেকার জীবনে ফিরে যেতে খুব আনন্দ পাবেন, আর তোমরাও চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর আগের ভারতবর্ষ কেমন ছিল, তোমরা যেখানে থাকো সেই জায়গা, আশেপাশের জায়গা কেমন ছিল, মানুষজনের আদব-কায়দা কেমন ছিল এসব বিষয় খুব সহজেই শিখতে পারবে, জানতে পারবে।"


প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস এই সাক্ষাৎকার বাচ্চাদের ভালো লাগবে। "তোমরা দেখো তোমাদের খুব ভালো লাগবে, আর পরিবারের জন্য এক অত্যন্ত অমূল্য সম্পদ - একটি দারুন ভিডিও অ্যালবামও তৈরি হয়ে যাবে।"