symbolic picture

কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব অব্যাহত। সারা বিশ্বের সাথে আমাদের দেশে, আমাদের রাজ্যে সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ৪ মে থেকে তৃতীয় দফায় লকডাউন শুরু হয়েছে, চলবে ১৭ মে পর্যন্ত। তৃতীয় দফায় লাল, কমলা ও সবুজ জোনে ভাগ করে লকভাউনেয় বিধি নিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই এই ভাইরাসের আবির্ভাব, আর বিজ্ঞান সম্মতভাবেই এর মােকাবিলা করতে হবে। লকডাউনের ৪৪ দিন অতিক্রান্ত। রাজ্য ও দেশের সরকার লকডাউনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে কোভিড-১৯ মােকাবিলায় কতটা প্রস্তুতি নিতে পারল? কোভিড-১৯ সংক্রমণ একটি জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা। এর মােকাবিলায় চিকিৎসা সংক্রান্ত বিজ্ঞান সম্মত পরিকল্পনায় পাশাপাশি অর্থনৈতিক পর্মিকম্পেনাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ জানিয়েছে- লকডাউনের এই সময়ে কোভিড-১৯ প্রতিরােধে ‘পরীক্ষা করা, আলাদা রাখা, চিকিৎসা করা, চিহ্নিত করার পরিকাঠানাে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বৃদ্ধি করা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা, সংক্রমণের সঠিক তথ্য জনসমক্ষে হাজির করে সাধারণ মানুষকে সমগ্র পমিককল্পনায় যুক্ত করার প্রশ্নে, নিবিড় প্রান্তিক মানুষের জীবন জীবিকা ও খাদ্যের সমস্যা, কৃষকের মাঠের ফসল ঘরে তােলা - তা বাজারে বিক্রি করায় সমস্যা, পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সমস্যা, বৰ্ত্তিবাসী ঝুপড়িবাসী ফুটপাতবাসীদের ‘ঘর’-এ রাখার সমস্যা সমাধানে সরকারের বিভিন্নওয়ে দুর্বলতা এবং পরিকল্পনাহীনতা প্রকট। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বহুক্ষেত্রে জরুরী পর্মিষেবা, সাধারণ পরিষেবা, শিশু ও গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা ও টীকাকরণ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও ডায়ালিসিস রােগীর চিকিৎসা কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়া - ফলে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ফলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ বাড়ছে। 

মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ মহাপাত্র বলেন- "যখন প্রয়ােজন ছিল প্রচুর স্বাস্থ্য কর্নার, স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেয় তখন এই সংকটে অল্প উপসর্গ যুক্ত রােগীদের বাড়ীতে রেখে চিকিৎসা (হােন আইসােলেশন)-এর নিদান দিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রেয় - উভয় সরকারই হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছেন।"

বর্তমান সংকটপূর্ণ এই সময়ে দেশের সর্ববৃহৎ জনবিজ্ঞান সংগঠন, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে একাধিক আবেদন  জানানো রাজ্যের মুখ্যসচীব ও স্বাস্থ্য সচীবকে। 

আবেদনে জানানো হয়েছে-
১) ক) কভিড ১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে আলাদা করাে - পরীক্ষা করাে - চিকিৎসা করাে ও খুঁজে বার করে ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। চিহ্নিত কোভি হাসপাতালগুলির পরিকাঠামাে ও পরিষেবা উন্নত করতে হবে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আরও কোভিও হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খুলতে হবে। 

খ) জরুরী স্বাস্থ্য পরিষেবা, সাধারণ পরিষেবা, শিশু ও গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা ও টীকাকরণ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও ডায়ালিসিস রােগীর চিকিৎসা পরিষেবাগুলিকে এবং জয়ী ওষুধের যােগান দুত স্বাভাবিক করতে হবে। 

গ) পঞ্চায়েত পর্যন্ত বিস্তৃত যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামাে ছিল তাকে পুনরায় সচল করার জন্য প্রয়ােজনীয় নিয়ােগ, বদ্ধ ও ব্যবস্থালি গ্রহণ করা। 

ঘ) দ্রুততার সঙ্গে বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে সার্বিক চিকিৎসা পরিকাঠামাের বৃদ্ধি ঘটাতে হবে। 

2) ক) প্রতিটি জেলায় কভিড ১৯ সংক্রমণ নির্ধারণের পরীক্ষার কেন্দ্র তৈরি করা ও পরীক্ষায় সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। 

খ) আইসিএমআর গাইডলাইন অনুযায়ী টেস্ট করতে হবে। কাদের এই টেস্ট হবে তা সুস্পষ্টভাবে মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে। 

গ) কভিড ১৯ সংক্রমণ নির্ধারণে প্রাথমিক স্ক্রীনিং-এর জন্য র‍্যাপিড টেস্ট পুনরায় চালু করে সংক্রমণের হটস্পট চিহ্নিত করে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ঘ) হটস্পট এলাকায় আরও পরীক্ষা ও সামাজিক নজরদারির মাধ্যমে রােগীদের চিহ্নিত করা, আলাদা রাখা ও চিকিৎসার মাধ্যমে সংক্রমণ হুড়ানাের সম্ভাবনাকে বন্ধ করা। গােষ্ঠী সংক্রমণ যাতে না ঘটে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

ঙ) টেস্ট দুত করার জন্য আইসিএমআর অনুমােদিত উৎকর্ষনের অন্যান্য কিট ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা দমকায়। 

চ) কভিড ১৯ পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনা মূল্যে করতে হবে। 

৩) ক) কভিড ১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যু সংক্রান্ত সঠিক তথ্য সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে নিয়মিত উপস্থিত করতে হবে। তথ্যের স্বচ্ছতা কভিড ১৯ প্রতিরােধে সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করবে। 
খ) মে জোন ও কন্টেনমেন্ট এলাকায় পরিধি এবং কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা সুস্পষ্টভাবে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। 
গ) অন্যান্য জোনে যেখানে বিধি নিষেধ খানিকটা শিথিল করা হয়েছে সেখানে শার্ক্সীমিক দূরত্ব সহ অন্যান্য আচরণ বিধি সঠিক ভাবে মানায় বিষয়টিতে নজর দেওয়া প্রয়ােজন। 

৪) চিকিৎসক সহ চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সকল কর্মী, পুলিশ, এম্বুলেন্স চালক, মৃতদেহ সৎকায়ে যুক্ত কর্মীদের জন্য সুরক্ষা পােষাকের পর্যাপ্ত ও নিরবিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা করতে হবে। 

৫) ক) উপসর্গহীন বা অল্প উপসর্গ যুক্ত রােগীর চিকিসায় দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। 
খ) জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী নিয়ােগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

৬) এই সময় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়ােজন। 

৭) ক) লক ডাউন সফল করতে হলে সমাজের নিবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষের খাদ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। সরকার কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে যা অপ্রতুল এবং উপভােক্তাদের কাছে পৌঁছেচ্ছে না। এক্ষেত্রে পরিবার পিছু বাদ্যশস্যের পরিমান বৃদ্ধিসহ প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ দুত গ্রহণ করতে হবে। 

খ) মাস্ক/ ফেস কাভার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নিবিত্ত ও প্রান্তিক মানুষের জন্য না বিনা মূল্যে সরবাহ করতে

গ) এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী অলিম্বে কাজ বােয়ানাে শ্রমিক, বিপর্যস্ত দমিত্র ও বিস্ত | ছােট-মাঝারি শিল্পের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ প্রকল্পে ঘােষণা করুক সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারকে এর জন্য রাজ্যগুলিকে প্রয়ােজনীয় অর্থ বরাদ্ধ করতে হবে।

ঘ) সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞান ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে অর্থ নৈতিক কার্যকলাপ চালু রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। 

ঙ) এই সময় পারস্পরিক দোষারােপ নয় - সমকামগুলির বিভিন্নভয়ে সমন্বয় বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংকটের মােকাবিলা করতে হবে। 

৮) পরিযায়ী শ্রমিক ও গৃহহীনদের সমস্যাগুলির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়ােজন। 

৯) কৃষকের মাঠের ফসল ঘরে তােলা ও তা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। 

১০) কোভিড সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক নয়, সতর্কতা জরুরী। এই অতিমারী নিয়ে মনগড়া অবৈজ্ঞানিক ধারণা ও পরামর্শ এবং পরিকল্পিতভাবে ঘৃণা প্রচার করা হচ্ছে যা সমস্ত প্রতিরােধী ব্যবস্থাপনাকে বিপর্যস্ত করবে। সৰ্বয়ের মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে এই কাজে যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে সরকারগুলিকে। 

১১) দীর্ঘমেয়াদী কোভিড কন্ট্রোল কর্মসূচি গ্রহণ কয়ক সরকার। কোভিড অতিমারী থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশের স্বাস্থ্য নাতির নােড় ঘুরিয়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুনিশ্চত করার কাজটি এবার শুরু হােক।