আম্ফানের দাপটে বিধ্বস্ত পশ্চিমবঙ্গ। আম্ফানের তাণ্ডব চলার মধ্যেই নবান্নের কন্ট্রোল রুমে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানালেন, এই ঘূর্ণিঝড় সর্বনাশ করে দিয়েছে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে আছি।’ 

কলকাতায় দুপুর তিনটে নাগাদ আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, দুপুর আড়াইটে থেকেই ৭৯ কিলোমিটার/ঘণ্টা বেগে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেল চারটে পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ৩৫ টি গাছ ভেঙে পড়েছে। রেড রোড, নিউ আলিপুর, খিদিরপুর, যতীনদাস পার্ক, গড়িয়াহাট, পূর্ণদাস রোড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, ট্যাংরা, সল্টলেকের সিডিও ব্লক ও বেহালার বহু জায়গায় গাছ পড়েছে। 
নবান্নে রাজ্যের এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার থেকে ঘূর্ণিঝড় আমফান পর্যবেক্ষণ
প্রায় রাত নটায় নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'এলাকার পর এলাকা ধ্বংস। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রশাসন সাধারণ মানুষের সাহায্যে ৫ লক্ষ মানুষকে সরাতে পেরেছি। ১৭৩৭ এ এমন ভয়ঙ্কর ঝড় হয়েছিল। ওয়ার রুমে বসে আছি আমি। নবান্নে আমার অফিস কাঁপছে। একটা কঠিন পরিস্থিতির যুদ্ধকালীন মোকাবিলা করলাম। মাঝরাত অবধি হয়ত ঝঞ্ঝা চলবে। নন্দীগ্রাম, রামনগর প্রভৃতি এলাকায় বড় ক্ষতি। উত্তর ও দক্ষিন ২৪ পরগণা প্রায় ধ্বংস ঝড়ের দাপটে। গাছ পড়ে মানুষ মারা গেছেন। মোট ক্ষতি এখনও গণনা করা যায়নি। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, জল নেই। পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর সব জায়গায় ধ্বংসের ছবি। রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া সব জায়গাই বিপর্যস্ত।'

আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বিকেলে টাস্ক ফোর্সের বৈঠক ডেকেছেন মমতা। এদিন রাতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। তবে সঠিক সংখ্যা কত তা পরে জানানো হবে। খারাপ পরিস্থিতিতে মানুষের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি। রাজনীতি না করে কেন্দ্রের কাছে সাহায্যের আর্জিও জানান তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যে তিনটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথমটা হল করোনা, দ্বিতীয়টা হল পরিযায়ী শ্রমিক ও তৃতীয় এই আমফান। এতটা ক্ষতি হবে, এমনটা আশা করেননি বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। আশ্রয় শিবিরে যে সমস্ত মানুষ রয়েছেন, আগামী তিন-চারদিন সেখানেই থাকার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুনর্বাসনের কাজ কী ভাবে করা হবে তা নিয়েও চিন্তিত তিনি। সব ঠিক করতে ৪-৫ দিন সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেছেন। 

সাংবাদিক বৈঠকে কি কি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী দেখে নিন এক নজরে- 
  • এলাকার পর এলাকা ধ্বংস। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
  • প্রশাসন সাধারণ মানুষের সাহায্যে ৫ লক্ষ মানুষকে সরাতে পেরেছি।
  • ১৭৩৭ এ এমন ভয়ঙ্কর ঝড় হয়েছিল।
  • ওয়ার রুমে বসে আছি আমি। নবান্নয় আমার অফিস কাঁপছে।
  • কটা কঠিন পরিস্থিতির যুদ্ধকালীন মোকাবিলা করলাম।
  • মাঝরাত অবধি হয়ত ঝঞ্ঝা চলবে।
  • নন্দীগ্রাম, রামনগর প্রভৃতি এলাকায় বড় ক্ষতি।
  • দঃ ও উত্তর ২৪ পরগণা প্রায় ধ্বংস ঝড়ের দাপটে।
  • গাছ পড়ে মানুষ মারা গেছেন।
  • মোট ক্ষতি এখনও গণনা করা যায়নি।
  • অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই, জল নেই।
  • পাথরপ্রতিমা, নামখানা, কাকদ্বীপ, কুলতলি, বারুইপুর, সোনারপুর সব জায়গায় ধ্বংসের ছবি।
  • রাজারহাট, হাসনাবাদ, সন্দেশখালি, গোসাবা, হাবড়া সব জায়গাই বিপর্যস্ত।
  • একদিকে কোভিডের থাবা, অন্যদিকে উমপুনের দাপট...স্বজনহারা পরিস্থিতি মনে হচ্ছে।
  • ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে ত্রাণ শিবিরের মানুষগুলোকে আগে দেখতে হবে।
  • একাধিক ব্রিজ ভেঙে পড়েছে। প্রচুর বাড়ি, নদীবাঁধ ভেঙে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে।
  • ৬ মাস আগে বুলবুলের পর বাঁধের মেরামত হয়েছিল, সেই সব নদীবাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  • উমপুনে ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ-কোটি ছাড়াবে কিনা জানি না। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন রাজনীতি করবেন না।
  • মানবিকতার কারণে সাহায্য চাইছি। ত্রাণ শিবির এখনই ছাড়বেন না।
  • সকলের সহযোগিতা প্রার্থনা করছি। এখন ধ্বংসের স্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি।
  • ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনা করা হবে। মানুষের বিপদে পাশে আছি।
  • হাওড়া, হুগলিতেও উমপুনের প্রভাব মারাত্মক।
  • কাল বিকেলে ক্ষতির প্রাথমিক রিপোর্ট নেওয়া হবে।
  • কৃষি, পানীয় জল, স্বাস্থ্য, সেতু, রাস্তার হাল দেখতে হবে। সবই নতুন করে করতে হবে।
  • ধ্বংসের হাত থেকে উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল হতে হবে। করোনার থেকেও বড় বিপর্যয়।
  • রাতে কেউ বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।