Adolescents seek Self-Identity 

ছোট্ট মেয়ে রিয়ার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। রিয়াকে চাপমুক্ত করার জন্য পরিবারের বাকী সদস্যদের উদ্দেশ্যে আগে একটা লেখা দিয়েছিলাম। আজ বলবো রিয়ার দাদার সমস্যা নিয়ে। রিয়ার দাদার নাম পাপাই ( কাল্পনিক )। বয়স এই এগারো পেরিয়ে বারো তে পড়লো। ক্লাস সেভেন এর ছাত্র। বাড়ীর থেকে স্কুলের দুরত্ব ,আধঘন্টা পায়ে হাঁটার পথ। বন্ধুরা ছাড়াও আশেপাশের বাড়ীর দাদা -দিদিদের সাথে স্কুলে যায়। প্রাইমারী স্কুলের ছোট গন্ডী পেরিয়ে হাই স্কুলে এসে ভালোও লাগে পাপাই এর ,আবার ভয়ও করে। ভালো লাগার দিকটা হচ্ছে – নিজেকে স্বাধীন পাখীর মতো মনে হচ্ছে। দাদা –দিদিরা কি সুন্দর একা একাই স্কুলে যায় ,ফেরে। বড়দের মত নিজেদের মধ্যেও দেশের কথা, খবরের কাগজের কথা বলে। বড়দের থেকে টাকা নিয়ে প্রয়োজনীয় খাতা,পেন্সিল নিজেরাই কিনে নিচ্ছে । পাপাই এর ভয় – কিছুদিন আগেও সবকিছুই তো বড়রা কিনে দিতেন। কোনো সুন্দর জিনিষ দেখে লোভ হলে - দাদু , ঠামি বা মা ও বাবা আবদার রাখতেন। এখন একা একা কিছু করার ভাবনাটা আসে , সেটা কি ঠিক হচ্ছে ? 


এইরকম দোলাচালে পাপাই নিজেকে মানিয়ে চলছিল। হঠাৎ করে বাড়ীতে সবাইকে একসাথে দেখে ও স্কুলে পড়ার চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে প্রথম প্রথম ভালই লাগছিল। তারপর কেমন মনে হল , আর ভালো লাগছে না। যে ভয় মেশনো ভালোবাসাটা ছিল , সেটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। তারপর থেকে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বড়রা যখন বলছেন খেতে – তখনই খেতে হবে , যখন বলছেন পড়তে , তখনই পড়তে হবে। মা একরকম বলছেন , বাবা একরকম বলছেন । সর্বোপরি নিজের মন আর একরকম বলছে , যে অনুভূতি নতুন এসেছে। আগে বড়রা যেভাবে বলতেন , পাপাই তেমনভাবে নিজেকে মানিয়ে নিত। কিন্তু এখন পাপাই নিজের মধ্যে একটা আলাদা মানুষকে আবিষ্কার করছে। সেই মানুষটার ইচ্ছার সাথে বড়দের ইচ্ছার তফাত হলে মনটা আর মানিয়ে নিতে চাইছে না। অথচ স্কুল যখন খোলা ছিল , বাবা যখন অফিসে যেতেন , দাদু বন্ধুদের কাছে যেতেন , মা আর ঠামি নানান কাজে ব্যস্ত থাকতেন ,তখন পাপাই অনেকটাই ছুটি পেতো – মনটা আপনমনে থাকতে পারতো। কখনও কখনও কল্পনায় ভর দিয়ে স্বপ্নের জগতে চলে যেত। কিন্তু এখন এই বদ্ধ বাড়ীতে সবাই সারাদিন প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছেই বসে আছে। সবাইকে ভালোবাসে পাপাই। অসুবিধা একটাই, মনের মধ্যে নতুন বেড়ে ওঠা মানুষটার জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেই। 



পাপাই বাবা- মায়ের খুব আদরের ,দাদু- ঠামির চোখের মনি , বোনের হিরো। অথচ পাপাই এর অস্তিত্ব আজ বিপন্ন। তিল তিল করে পাপাই এর যে সবুজ অনুভূতি বেড়ে উঠেছিল নিজের মনের গভীরে – তাকে যেন এই পরিস্থিতি পিষে মারতে চাইছে। কখনও কাঁদতে ইচ্ছা করছে , কখনও সব ছুঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে , কখন গুম মেরে থাকতে ইচ্ছা করছে। 



মনস্তত্বের ভাষায় , পাপাই বয়ঃসন্ধিকলের সূচনাপর্বে অবস্থান করছে। এই সময় কিশোর কিশোরীরা মূলতঃ নিজের পরিচয় ( Self Identity) তৈরী করতে চায়। জৈবিক বৃদ্ধি এই পরিচয় গঠনে ভূমিকা নেয়। তবে ,পরিবেশের সাথে অভিজ্ঞতার আদান প্রদানের মাধ্যমে এই পরিচয় চূড়ান্তভাবে গঠিত হয়। এই পর্ব যদি সামাঞ্জস্যপূর্ণ ও তৃপ্তিদায়ক হয় , তবে এই ভালোলাগা সারাটা জীবন ধরে চলতে থাকে। বিশ্ব কবির ভাষায় , “ আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না”।এই পর্বে নিজের পরিচয় ঠিকভাবে তৈরী করতে পারলে , সেই কিশোর /কিশোরী পাড়ায় হোক , জেলায় হোক . রাজ্যে হোক , দেশে হোক বা পৃথিবীতে হোক – সামর্থ্য অনুযায়ী , পরিস্থিতি অনুযায়ী, প্রতিবেশীর কাছে আনন্দের উৎস হয় উঠবে। না হলে উল্টোটা ঘটবে।এরা হয়ে উঠবে অবসাদের শিকার। বিভিন্নভাবে, প্রতিবেশীর জন্য এমন কি নিজের জন্যও হয়ে উঠতে পারে ধ্বংসাত্মক। এমনটাই বলেছেন , মনস্তত্ত্ববিদ্ এরিক এরিকসন। তিনি বলেছেন , বয়ঃসন্ধিকালে দু ধরণের সম্ভাবনা আসতে পারে । 


১) কিশোর বা কিশোরী নিজের সুসামাঞ্জস্যপূর্ণ পরিচয় তৈরী করতে পারবে , অথবা 
২) এই পৃথিবীতে নিজের ভূমিকা নিয়ে হতাশায় ডুবে যাবে। 

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মনস্তত্ত্ববিদেরা বিভিন্ন উপায়ের কথা বলে থাকেন। একজন ঘরে বাইরে কাজ করা মা হিসাবে বলতে পারি – সবচাইতে সহজ এবং গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো সামজিকীকরণ (Socialization), যার একটি একক হচ্ছে বন্ধুত্ব। “ হাত বাড়ালেই বন্ধু ”। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলা ,আপনারাই হয়ে যেতে পারেন – ছেলে বা মেয়ের প্রিয় বন্ধু । তারজন্য অভিভাবকের সিংহাসন ছেড়ে বাচ্চাদের সাথে নেমে আসতে হবে ঘাসের উপর , কখনও ছাদে , কখনও বা কোনার ঘরে। ওদের সঙ্গ দিন। এতদিন কাজে ব্যস্ত থেকেছেন – ছেলের সাথে /মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয় নি। এ সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। ওদের কথা বলার সুযোগ দিন।ওদের মনে এমন বিশ্বাস আসতে দিন – যে কথাই হোক না কেন, সব কিছুই মা বাবার কাছে বলা যায়। এমনটা হতে পারে , কিছু কথা মাকে , কিছু কথা বাবাকে , কিছু দাদু বা ঠামিকে বলবে। কিন্ত বলবে সব কথা। শুধু বর্তমান পরিস্থিতিতে নয় , সামনের ভবিষ্যতেও ওদের মনের গঠন হয়ে উঠবে নিজের জন্য তৃপ্তিকর , প্রতিবেশীর জন্য আনন্দদায়ক । 



Dr. Nita Mitra Chanda 
Honorary Coordinator of Find_Mind, Siliguri 
(Psychological Research and Counseling Unit) 
And 
Associate Professor, Siliguri B.Ed.College