দেশের গরীব মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী তিন মাস পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। সুবিধে বাড়ান হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গরীব কল্যাণ যোজনাসহ একাধিক প্রকল্পের।

প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ প্রকল্পঃ কোভিড – ১৯ এর মোকাবিলায় কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রয়েছে বীমা প্রকল্প। 

সম্প্রতি পিব (pib) এই বীমা প্রকল্প নিয়ে বার বার জিজ্ঞাসা করা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। আসুন জেনে নেই বিস্তারিত। 

প্রশ্ন-১ : এই প্রকল্পটি কিসের জন্য ?
উত্তরঃ – দুর্ঘটনাজনিত এই বীমার আওতায় -
• কোভিড – ১৯ এর কারণে যাদের জীবনহানি হবে এবং
• কোভিড – ১৯ এর সংক্রমণের বিরুদ্ধে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় যারা মারা যাবেন।
প্রশ্ন-২ : দুর্ঘটনার সংজ্ঞা কি ?
উত্তরঃ – আচমকা, আগে থেকে না জানা, না বোঝা কোনো ঘটনা, যা বাইরের অথবা দেখা যায় কিংবা হিংসাত্মক কারণে ঘটে থাকে এমন কোনো ঘটনাই হল দূর্ঘটনা ।
প্রশ্ন-৩ : এই প্রকল্পের আওতায় কারা আসবেন ? 
উত্তরঃ-
• সেই সমস্ত সরকারী স্বাস্থকর্মী যারা কোভিড – ১৯ এ সংক্রমিত ব্যক্তিদের সরাসরি সংস্পর্শে আসবেন ও তাদের চিকিৎসা করবেন এবং এর ফলে যাঁদের জীবন সংশয় দেখা দেবে। 
• কেন্দ্র / রাজ্য সরকার / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন, এইমস এবং আইএনআই / কেন্দ্রীয় সরকারের হাসপাতালগুলিতে কোভিড – ১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজ্য সরকারের হাসপাতাল / কেন্দ্রীয় সরকারের হাসপাতাল / স্বায়ত্ত্ব শাসিত হাসপাতালের জন্য নিযুক্ত বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতালের কর্মী এবং অবসরপ্রাপ্ত / স্বেচ্ছাসেবক / স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে / চুক্তিভিত্তিক / দৈনিক মজুরী / প্রয়োজন ভিত্তিক / আউটসোর্সে নিযুক্ত কর্মীরা। 
প্রশ্ন-৪ : এই প্রকল্পের আওতায় স্বেচ্ছাসেবী কারা ? 
উত্তরঃ- কেন্দ্র / রাজ্য সরকার / কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের সরকারী আধিকারিকরা কোভিড – ১৯ এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের যত্নের জন্য যাঁদেরকে নিয়োগ করবেন, তাঁরাই হলেন স্বেচ্ছাসেবী।
প্রশ্ন-৫ : “বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মী” হিসেবে এই যোজনায় কাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে ?
উত্তরঃ – সরকারী এবং বেসরকারী চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানে যাঁরা এজেন্সির মাধ্যমে কাজে যোগ দেবেন (এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানে ঐ সব এজেন্সিগুলিকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার প্রমাণ থাকতে হবে) এবং যাঁরা কোভিড – ১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের সরাসরি সংস্পর্শে আসবেন।
প্রশ্ন-৬ : এই বীমা প্রকল্প কবে থেকে শুরু হবে এবং কতদিন চলবে ?
উত্তরঃ – এই প্রকল্পটির মেয়াদ শুরু হয়েছে ৩০ মার্চ থেকে। এর মেয়াদ ৯০ দিন।
প্রশ্ন-৭ : এই প্রকল্পে যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করবেন, তাঁদের কি বয়সের কোনো উর্ধসীমা রয়েছে ?
উত্তরঃ – না, এই প্রকল্পে বয়সের কোনো উর্ধসীমা নেই।
প্রশ্ন-৮ : ব্যক্তি বিশেষ কেউ কি এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন ?
উত্তরঃ – এককভাবে কেউ নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না। 
প্রশ্ন-৯ : এই প্রকল্পের জন্য ব্যক্তি বিশেষকে কোনো প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে কি ?
উত্তরঃ – এই প্রকল্পের পুরো প্রিমিয়ামের টাকাই কেন্দ্রের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বহন করবে। 
প্রশ্ন-১০ : বীমাকৃত ব্যক্তিরা এই প্রকল্পে কি ধরণের সুবিধা পাবেন ? 
উত্তরঃ – বীমাকৃত ব্যক্তির দাবিদারকে ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে।
প্রশ্ন-১১ : সুবিধাভোগীরা এই প্রকল্পের আওতায় যখন অর্থ দাবী করবেন, তখন কি কোভিড – ১৯ এর পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক ? 
উত্তরঃ – কোভিড – ১৯ এ সংক্রমিত হয়ে মারা গেলে, পরীক্ষাগার থেকে মৃত ব্যক্তির সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তবে, কোভিড – ১৯ মোকাবিলা সংক্রান্ত কাজে থাকার সময় অর্থাৎ কর্তব্যরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে তখন এই রিপোর্টের প্রয়োজন হবে না। 
প্রশ্ন-১২ : এই প্রকল্পের আওতায় চিকিৎসার সময় অথবা কোয়ারান্টাইনে থাকার সময় ব্যয় কি বহন করা হবে ? 
উত্তরঃ – চিকিৎসা বা কোয়ারান্টাইনের জন্য খরচ এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত হবে না।
প্রশ্ন-১৩ : যদি কারোর অন্য কোনো দুর্ঘটনাজনিত বীমা প্রকল্প বা জীবনবীমা প্রকল্প করা থাকে, তাহলে তিনি কি এই প্রকল্পেরও আওতাভুক্ত হবে ?
উত্তরঃ – এই প্রকল্পের আওতায় থাকা সুবিধাভোগীরা অন্য কোনো বীমার আওতায় থাকলে তার সুবিধাও পাবেন।
প্রশ্ন-১৪ : এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীরা অর্থ দাবী করার সময় কি ধরণের নথি জমা দিতে হবে?
উত্তরঃ- 
ক) কোভিড – ১৯ এ সংক্রমিত হয়ে মারা গেলে যে সমস্ত নথি জমা দিতে হবেঃ
১) দাবী সংক্রান্ত ফর্মটি, নমিনি বা দাবিদারকে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
২) মৃত ব্যক্তির পরিচয় পত্রের প্রত্যায়িত কপি। 
৩) দাবীদারের পরিচয় পত্রের প্রতায়িত কপি। 
৪) মৃত ব্যক্তির সঙ্গে দাবীদারের সম্পর্কের প্রত্যায়িত নথি।
৫) মৃত ব্যক্তি কোভিড – ১৯ এ সংক্রমিত হয়েছে, এ সংক্রান্ত পরীক্ষাগারের রিপোর্ট
( আসল অথবা প্রত্যায়িত কপি)
৬) যে হাসপাতালে মারা গেছেন, সেখান থেকে মৃত্যুর কারণ সম্বলিত নথি।
( যদি হাসপাতালে মারা গিয়ে থাকেন) (প্রত্যায়িত কপি)।
৭) মৃত্যুর শংসাপত্র। (আসল)
৮) স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান বা দপ্তর থেকে একটি ঘোষণা পত্র, যেখানে বলা থাকবে ঐ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী অথবা কর্মরত ছিলেন এবং তিনি কোভিড – ১৯ সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিলেন।
৯) কমিউনিটি হেল্থ কেয়ার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারের থেকে একটি শংসাপত্র নিতে হবে। যেখানে বলা থাকবে, ঐ ব্যক্তি কোভিড – ১৯ এ সংক্রমিতদের চিকিৎসায় যুক্ত ছিলেন। 
খ) কোভিড – ১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে কর্তব্যরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু হলে যে নথিগুলি লাগবে –
১) দাবি সংক্রান্ত ফর্মটি, নমিনি বা দাবীদারকে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
২) মৃত ব্যক্তির পরিচয় পত্রের প্রত্যায়িত কপি। 
৩) দাবীদারের পরিচয় পত্রের প্রত্যায়িত কপি।
৪) মৃত ব্যক্তির সঙ্গে দাবীদারের সম্পর্কের প্রত্যায়িত নথি।
৫) যেই হাসপাতালে মারা গেছেন, সেখান থেকে মৃত্যুর কারণ সম্বলিত নথি।
(যদি হাসপাতালে মারা গিয়ে থাকেন) (প্রত্যায়িত কপি)।
৬) মৃত্যুর শংসাপত্র। (আসল)
৭) সুরত হাল (পোস্টমর্টেম) প্রতিবেদন। ( প্রত্যায়িত কপি)
৮) একটি বাতিল চেক। (আসল)
৯) এফআইআর। (প্রত্যায়িত কপি)
১০) ঐ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে একটি শংসা পত্র, যেখানে বলা থাকবে, মৃত ব্যক্তি ঐ সংস্থার কর্মী / কর্মরত ছিলেন এবং কোভিড – ১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় দায়িত্বপালন করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।
প্রশ্ন-১৫ : এই বীমার অর্থ দাবী করতে হলে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ?
উত্তরঃ – বীমাকৃত ব্যক্তি যে প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে কর্মরত ছিলেন, সেখানে জানাতে হবে। পাশাপাশি বীমা কোম্পানীকে nia.312000@newindia.co.in এই ইমেল ঠিকানায় জানাতে হবে।
প্রশ্ন-১৬ : বীমার অর্থ দাবী করার প্রক্রিয়া কি ?
উত্তরঃ –
• নির্ধারিত ফর্মে দাবীদারকে সমস্ত তথ্য জমা দিতে হবে এবং যে স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে মৃত ব্যক্তি কর্মী / কর্মরত ছিলেন, সেখানে এই ফর্মটি জমা দিতে হবে।
• সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এর পর এই দাবীটিকে স্বীকৃতি দেবে এবং তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে।
ӿ রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের মহানির্দেশক / নির্দেশক / স্বাস্থ্য শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশক অথবা রাজ্য কিংবা কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল কর্তৃপক্ষের এই কাজের জন্য নিযুক্ত কোনো আধিকারিক।
ӿকেন্দ্রীয় সরকারের, কেন্দ্রের স্বায়ত্ত্বশাসিত / রাষ্ট্রায়ত্ত্ব হাসপাতাল, এইমস, আইএনআই এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রকের হাসপাতালগুলির নির্দেশক বা মেডিকেল সুপাররিনটেন্ডেট অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান। 
• যোগ্য কর্তৃপক্ষ এরপর ঐ দাবীটি বীমা কোম্পানীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাবে।

প্রশ্ন-১৭ : বীমা কোম্পানীতে কার সঙ্গে যোগাযোগ করবে ?
উত্তরঃ –
ডিভিশনাল অফিস সিডিইউ ৩১২০০০, দ্য নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড, বি-৪০১, আনসল চেম্বার্স, ১, ভিকাজি কামা প্লেস, নিউ দিল্লী – ১১০০৬৬।
যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন –
১) শ্রীমতি সারিকা আরোরা, ডিভিশনাল ম্যানেজার, ইমেল - sarika.arora@newindia.co.in অথবা nia.312000@newindia.co.in
২) শ্রী এন. রবি রাও, ডেপুটি ম্যানেজার, ইমেল - ravin.rao@newindia.co.in, অথবা niadelbroker20@gmail.com। 
৩) শ্রী যোগেন্দ্র সিং তানওয়ার, প্রশাসনিক আধিকারিক, ইমেল yogendra.tanwar@newindia.co.in


প্রশ্নোত্তর পর্বটি পিব কলকাতা থেকে সরাসরি সংগৃহীত।