সুরশ্রী রায় চৌধুরীঃ 

অক্ষয় তৃতীয়া হল বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের তৃতীয়া তিথি। এই তিথি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। অক্ষয় শব্দের অর্থ যা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। বৈদিক বিশ্বাসানুসারে এই পবিত্র তিথিতে কোন শুভকার্য সম্পন্ন হলে তা অনন্তকাল অক্ষয় হয়ে থাকে। যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। এদিন পূজা, জপ, ধ্যান, দান, অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে। 

এবার অক্ষয় তৃতীয়ার মাহাত্যর কথায় আসা যাক। এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম আবির্ভুত হন পৃথিবীতে। রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন এ দিন।এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে এ দিনই।

সত্যযুগ শেষ হয়ে ত্রেতাযুগের সূচনা হয় এ দিনে। এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।

এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুঃখ মোচন করেন।এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং সখী কৃষ্ণাকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।

জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয় এই দিনেই। 

কেদার বদরী গঙ্গোত্রী যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল। এদিনই সত্যযুগের শেষ হয়ে প্রতি কল্পে ত্রেতা যুগ শুরু হয়। 

হিন্দু ও জৈন ধর্মালম্বী মানুষদের কাছে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি। কথিত আছে এই তিথিতে যদি কেউ দান , ধ্যান, পূজো করেন তা অক্ষয় থাকবে। মৃত্যুর পর যমরাজ তাকে দর্শন করতে আসবে না।