গৌতম সাহা,কোলকাতাঃ
আজ ১৫ ই মার্চ পশ্চিম বঙগের আপামোর প্রাথমিক শিক্ষকদের চেতনা তথা সবল মেরুদন্ডের প্রতীক ''উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশান" এর দুই বছরে পদার্পণ।
হ্যাঁ ঠিক এই দিনেই কোলকাতার প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল।গত দুবছরে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে পশ্চিম বঙগের প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকার কাজের তথা কাছের সাথী হয়ে উঠেছে UUPTWA। ঘটনাচক্রে ২০১৮ সালের ১৫ ই মার্চে অনুষ্ঠিত ঐ সংবাদিক সন্মেলনে এই সংবাদ প্রতিনিধিও হাজির ছিলেন।
প্রাথমিক ভাবে এই সংগঠনটির নাম অন্য থাকলেও পরবর্তীকালে রেজিস্ট্রেশন পেতে সুবিধা হওয়ার কারণে 'উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশান' বা সংক্ষেপে UUPTWA নামটিতে শিলমোহর পড়ে,গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
আপনারা প্রায় প্রত্যেকেই জানেন ২০০৯ সাল থেকে সারা দেশে প্রাথমিক শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় সরকার পারিচালিত NCTE অনুযায়ী কেন্দ্রীয় হারে অর্থ্যাৎ PRT scale চালু হয়,এমনকি তাদের উপযুক্ত যোগ্যতা যেমন উঃমাঃ তে ৫০% নম্বর সহ পাশ ও দুই বছরের D.El.Ed কোর্সে পাশ করাবার ব্যাবস্থা করা হয়েছিল।কিন্তু কোন অদৃশ্য কারণে আমাদের রাজ্যে উপরোক্ত বিষয়গুলি কোনটাই করা হয়নি,যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন কাঠামোর পরিবর্তন হয়নি।তাই পশ্চিম বঙগের আপামোর প্রাথমিক শিক্ষক সম্প্রদায় বুকে পাথর চাপা দিয়ে একপ্রকার কম বেতনেই প্রায় এক দশক ধরে নীরবে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে এসেছেন।অনেক শিক্ষক জানতেনই না যে কিভাবে তারা বছরের পর বছর চরম ভাবে বঞ্চিত হয়ে চলেছেন।এ বিষয়ে তৎকালীন সরকারের ভূমিকাও তাই প্রশ্নের মুখে! অথচ প্রশংসাযোগ্য ২০১১ সালে নতুন আসা সরকারের।অন্তত তারা ক্ষমতায় আসার দুএক বছরের মাথায় পশ্চিম বঙগের প্রাথমিক শিক্ষকদের NCTE এর নির্দেশিত যোগ্যতামান অনুযায়ী উচ্চ যোগ্যতা যেমন- উঃমাঃ তে ৫০% নম্বর সহ পাশ ও দুবছরের ডি.এল.এড কোর্সে পড়ার সুব্যবস্থা করা হয়।২০১৫ সালের মধ্যে সেগুলি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।ফলতঃ সেই কোর্সগুলিতে উত্তীর্ণ হয়েই শিক্ষকদের যোগ্যতা অনুযায়ী নায্য বেতনক্রমে পৌছাবার সুযোগ হবে এবং শিক্ষা দপ্তর সেটা করবেন এমনটাই আশা করা হয়েছিল।কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে অপেক্ষা করেও নায্য বেতনের কোন সুব্যাবস্থা হয়নি।কোন সংগঠনও এ বিষয়ে এগিয়ে আসেননি।
প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনায্য বেতন বঞ্চনার দাবীতে কাউকেই সেই ভাবে আন্দোলন বা শিক্ষা দপ্তরে উপযুক্ত প্রমাণসহ দাবীপত্র প্রদান করতে দেখা যায়নি।অথচ এই রাজ্যে কমবেশী দশটির মতো রেজিস্টার্ড প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন খাতায় কলমে আছে।তাহলে কি এই বেতন বঞ্চনা নিয়ে বাকী জীবনটা কাটিয়ে দিতে হবে পশ্চিমবঙগের লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষকসম্প্রদায় কে?এমতোবস্থায় এগিয়ে এলেন কোলকাতাস্থিত টালিগঞ্জ চক্রের কিছু আকুতভয় শিক্ষক-শিক্ষিকা।পশ্চিমবঙগের এক লক্ষ পঁচাশি হাজার প্রাথমিক শিক্ষক- শিক্ষিকার অসম্মান ও অনায্য বেতন বঞ্চনার দাবীতে বুকে একরাশ সাহসকে ভর করে বেড়িয়ে পড়লেন শিক্ষা দপ্তরের বিভিন্ন উচ্চ আধিকারিকের কাছে উপযুক্ত ব্যাবস্থা গ্রহণের প্রার্থনায়। তবে প্রাথমিক ভাবে তাদের এই সংগঠনটির গঠনের আগে বহুবার গিয়েছিলেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের কাছে,বহু রাজনৈতিক নেতা-নেতৃত্ত্বের কাছে যাতে তারা ন্যায় পান। কিন্তু প্রতিবারই খালি হাতে ফিরে আসতে হয় তাদেরকে। তাই শিক্ষা দপ্তরেরর আধিকারিকদের কাছে বারংবার শরণাপন্ন হয়ে তাদেরকে বোঝাতে হয় কেন তারা বঞ্চিত যেখানে সারা দেশে প্রাথমিক শিক্ষিকারা নায্য বেতন একদশক ধরে পেয়ে আসছেন। তাই নেতৃত্ত্ব ভেবেছিলেন হয়তঃ শিক্ষা দপ্তর তাদের অভিযোগ তথা প্রার্থনায় কর্ণপাত করবেন। কিন্তু কোন রকম আশ্বাস তাদের জোটেনি বরং তাতের সংগঠনকে কেবল একটি ভুইফোঁড় সংগঠন বা ফেসবুকের সংগঠন বলে বিভিন্ন ভাবে তাচ্ছিল্ল শুনে আসতে হয়েছিল।তাদেরকে তাদের সংগঠনের শক্তি প্রদর্শন করতে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল আর ভেসে আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রকার অপমান। এতেই ঘৃতাহুতি পড়ে, সংগঠনটিকে বৃহত্তর ভাবে আত্ম প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে সংগঠনের নেতৃত্ত্বের।ফলে প্রচন্ড ভাবে দরকার হয়ে পড়ে সবাই কে একত্রিত করবার।ফেসবুকের মাধ্যমে বার্তা যায় সবার কাছে।তাতেই সাড়া পড়ে যায় রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা মহলে।সংগঠন সমর্থন পেতে থাকে, ধীরে ধীরে বিপুলভাবে পাশে পেয়ে যান লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।ক্রমশঃ একটি ছোট্ট বটগাছ মহিরুহে পরিণত হয়ে উঠে।অার লক্ষ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষকের নয়নের মণি হয়ে উঠে UUPTWA সংগঠনটি - বাকিটা ইতিহাস।
সংগঠনের সভাপতি মাননীয় সন্দীপ ঘোষের বার্তা সংগঠনের দুই বছরে পুর্তি উপলক্ষে......
"আজ 15 th march আমাদের প্রিয় সংগঠন uuptwa র দুবছর পূর্ণ হল।
যোগ্যতা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ন্যায্য বেতনের জন্য এই সংগঠনের জন্ম হয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গের কিছু অনভিজ্ঞ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা শুধুমাত্র যুক্তি আর আবেগকে সম্বল করে 'one team one dream'এর সংকল্প নিয়েছিলেন।
এই দুই বছরে পশ্চিমবঙ্গের সরকারের কাছে যুক্তি প্রতিষ্ঠা করে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন, জেলার বাইরে অনৈতিক বদলি রদ এবং সরকারি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিক্ষকদের চাঁদা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন।
এখনো আমাদের কিছু কর্মসূচি বাকি আছে। সারা ভারতবর্ষের প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন কাঠামো এক করতে হবে।
আমরা কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়েছি একটা জায়গাতেই, সেটা বেলা সাহা মামলা।কোন এক অজ্ঞাত কারনে এটা লিস্টে উঠলেও শুনানির তারিখ পাচ্ছে না।
আগামী 5th april 2020 আমাদের নতুন গর্ভনিং বডি তৈরী হবে।
আশা রাখি,সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সত্বা বজায় রেখে uuptwa আগামী দিনেও পশ্চিমবঙ্গের সকল প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হৃদয়ে জায়গা বজায় রাখবেন।
সন্দীপ ঘোষ ( রাজ্য সভাপতি )
আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন
হতে ক্লিক
করুন- CLICK
|
আমাদের হোয়াটসয়াপ
গ্রুপে যুক্ত হতে
ক্লিক করুন- CLICK
|
যে কোন সংবাদ,
লেখা পাঠান
sangbadekalavya@gmail.com
|
বিজ্ঞাপন দিতে কথা
বলুন- 96092 21222
|
Social Plugin