বুলবুলের ত্রাণ ও বেশ কয়েকটি দাবি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে একহাত নিলেন গ্রামবাসী

রবীন মজুমদার, দক্ষিণ 24 পরগনাঃ ফের শাসকদলের বিরুদ্ধে একাধিক দাবি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাল গ্রামবাসী। আজ সকাল ১০টা নাগাদ দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার কাকদ্বীপ ব্লকের অন্তর্গত ঋষি বঙ্কিমগ্রাম পঞ্চায়েত এর অধীনে (সুরেন্দ্র নগর গ্রাম) 150 নম্বর বুথের প্রায় শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ল একাধিক দাবি নিয়ে।

বিক্ষোভের সূত্রপাত নজীর হয় এই গ্রামে নদী বাঁধের কাছেই বাত একটি সুইচগেট নিয়ে। গ্রামবাসী ও স্থানীয়দের দাবি দীর্ঘ ১০ বছর অর্থাৎ আইলা ঝড়ের তাণ্ডবে উক্ত স্থানে অবস্থিত সুইচগেটটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে বিগত ১০ বছর ধরে গ্রামের কৃষিজমিতে নদীর লবণাক্ত জল ঢোকার কারণে চাষ আবাদ প্রায় লুপ্তের পথে।
সুইচগেটটি ভেঙে যাওয়ার কারণে গ্রামের মানুষেরা পানীয় জলের অভাবে ভুগছেন। পুকুর এবং চাষের জমি প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত। ভরা কোটাল ও বর্ষার সময় গ্রামের মানুষেরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। ভরা কোটাল এর সময় গ্রামবাসীরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে পাছে সুইজগেট এর বাঁধ টপকে জল ঢুকে গ্রামের মানুষ বন্যায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা করছে।

দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয় নিয়ে গ্রামবাসীরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও কোন আশানুরূপ ফল পায়নি। এমনই অভিযোগ জানায় তারা। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যের কাছ থেকেও কোনো শুফল পায়নি। জানা যায় এই গ্রামে প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার মানুষ বসবাস করে। তারা জানায় "আমাদের এই গ্রামে ৬ থেকে ৭ হাজার ভোটার। প্রতিবছর ভোটের সময় নেতা-মন্ত্রীরা আমাদের আশ্বাস দিয়ে যায় করে দেবে। কিন্তু ভোটের পরে তাদের আর পাত্তা থাকেনা।" 

এরইমধ্যে কয়েক মাস আগেই বুলবুলের তাণ্ডবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে এখানকার সাধারণ মানুষেরা। অভিযোগ করেন বুলবুলের ত্রাণস্বরূপ তাদের হাতে কোনরূপ সরকারি সাহায্য আসেনি। বারবার স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সদস্যকে জানানো সত্ত্বেও কোনরূপ সাহায্য তারা পায়নি।উপরন্তু গ্রামবাসীদের জায়গার দলিল কিংবা পাট্টা নেই বলে তাচ্ছিল্য করা হয়। বর্তমানে সুইজগেটটি ধ্বংসাবশেষ নদীতে চলে গেছে। এমন অবস্থায় বিকল্প হিসেবে গ্রামবাসীরা নিজ হাতে কোদাল তুলে নেয়। প্রায় ৫০ জন নারী পুরুষ মিলে সুইস গেটের বাঁধটিকে নিজেরাই মেরামতি করে। মাটি দিয়ে কাঁচা অবস্থায় কোনরকম বাঁধ টিকেকে মেরামতি করে আটকে রাখা হয়েছে। ত্রিপল দিয়ে মাটি কে আটকে রেখেছে। এখনো পর্যন্ত গ্রামবাসীরা বন্যার আশঙ্কায় ভুগছে। 
স্কুল পড়ুয়া থেকে মহিলা এবং গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আজ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিরোধী দলনেতা বিজেপি মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-দীপঙ্কর জানার হস্তক্ষেপে ও কিছু অর্থ সাহায্য দিয়ে বর্তমানে ন্যূনতম মাটির কাজ চলছে। বিজেপি নেতা দীপঙ্কর জানা এই বিষয়ে জানায় "দীর্ঘ ১০ বছর ধরে গ্রামবাসীরা অবহেলিত, আমি ছোটবেলা থেকে এখানে বড় হয়েছি। দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক দপ্তরের আধিকারিকদের এই গ্রামের দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কোন দলের রং না দেখে অতি শীঘ্রই মানুষগুলোর কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত মানবিকতার খাতিরে।" 

জানা যায় গ্রামের মানুষেরা আজ বিজেপি নেতা দীপঙ্কর জানার কাছে আবেদন করে একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কারণ তারা এখনো পর্যন্ত তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে কোন সাহায্য পাচ্ছে না বলে তাদের দাবি। বুলবুল ঝড়ের পরেও তারা অবহেলিত হয়ে এই গ্রামে আতংকে দিন কাটাচ্ছে। গ্রামবাসীরা সরাসরি অভিযোগ করে মমতা ব্যানার্জির সরকারের বিরুদ্ধে। এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে গ্রামবাসীরা কান্নায় ফেটে পরে। কাকদ্বীপ ব্লক ডেভলপমেন্ট আধিকারিক(BDO) - দিব্যেন্দু বিশ্বাস জানান এটি ইরিগেশন দপ্তরের আওতার প্রজেক্ট। বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখা হবে এবং সুইচগেট যত শীঘ্রই নতুন করে তৈরি করার জন্য ইরিগেশন কে চিঠি করা হবে বলে তিনি জানান।
ঋষি বঙ্কিম গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মহুয়া মালি দাস সংবাদমাধ্যমকে জানান "এটিকে নিয়ে দীর্ঘদিন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টু রাম পাখিরার কাছে আবেদন করা হয়েছে এবং কাকদ্বীপ মহকুমা শাসক থেকে শুরু করে কাকদ্বীপ ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের কাছেও তারা আবেদন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা জানিয়ে গেছেন, উচ্চ দপ্তর থেকে উত্তর স্বরূপ জানা যায় কাজটি হওয়ার জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছে এবং কাজটি করার কথা ভাবা হচ্ছে।। এটি ইরিগেশন দপ্তর এর অধীনে। রেশন দপ্তর থেকে ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা কাজটিকে টেন্ডার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। এইদিন বিক্ষোভের মাঝে উপস্থিত ছিল স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য কালিপদ মিস্ত্রি। তিনি বলেন আমি নিজেই হতাশ হয়ে পড়েছি এই সুইচ গেটটি নিয়ে, আমাকে শুধু প্রশাসনিক দপ্তর থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে কাজটি করে দেবে বলে। কিন্তু কোনরকম সুফল এখনও পর্যন্ত পাইনি। তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমিও নিজে হতাশ। এই বিষয়ে কাকদ্বীপ বিধায়ক সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টু রাম পাখিরা সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে নারাজ।