অন্যরকম নারী দিবস পালন করলো প্রয়াস সাথী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন
সুভদ্রা দেবি বলেন, " যদি কোনো সরকারি ঘর পাই তাহলে হয়তো বর্ষার দিনে একটু শান্তি মতো ঘুমাতে পারবো। আর যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোন ঘর না দেয় তাহলে হয়তো একদিন শোয়ার জায়গাহীন হয়ে পড়ে যেতে পারি। এই আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি । "
SER-10, ময়নাগুড়ি, ৮ মার্চ: জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের প্রয়াস সাথী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে তারা দুঃস্থ মানুষদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন বরাবরই। কিন্তু আজ প্রয়াস সাথী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনকে দেখতে পাওয়া যায় একটু অন্যরকম নারী দিবস পালন করতে। নারী দিবসে এক সংগ্রামী নারীর পরিবারের পাশে দাড়াল প্রয়াস সাথী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন।
ময়নাগুড়ি ব্লকের সাপ্টিবাড়ী ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের সুস্থির হাটের সংলগ্ন ডাকুয়া বাড়ি নামে এক জায়গার এক সংগ্রামী নারীর পাশে দাঁড়াতে ছুটে এলো প্রয়াস। সংগ্রামী নারীর নাম সুভদ্রা রায়, স্বামীর নাম ধরেন রায়।
সুভদ্রা দেবি জানান, ১৩ থেকে ১৪ বছর আগে সংসার জীবনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তারা। এবং প্রথম কয়েক বছর দুজনের সংসার জীবন খুব হাসিখুশির মধ্যে ভালোই কেটেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে ধরেন বাবুর পায়ে ব্যথা শুরু হয়। মাঝে মাঝে ধরেন বাবুর পায়ে ব্যথা হলে ওষুধ খেয়েই সেরে যেত, এভাবেই সময়ের সাথে সাথে ধরেন বাবু অল্প অল্প করে পেরালাইসড হয়ে পড়েন। মাঝে দুবার ভেলোর গিয়ে চিকিৎসা করিয়েও কোন লাভ হয়নি। গরিব মানুষ তাই অর্থের অভাবে আর তৃতীয়বার যাওয়ার সাহস কুলায়নি তাদের। মোটামুটি দশ বছর ধরে ধরেন বাবু বাড়িতে শয্যাশায়ী আর সেই থেকেই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে স্ত্রী সুভদ্রা রায়ের উপর। তাদের পরিবারে স্বামী সহ একটা ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে।
ছেলে-রূপদেব রায় সপ্তম শ্রেণীতে ও মেয়ে কৈকেয়ী রায় ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে । ছেলে ছোট থাকায় পরিবারের একমাত্র রোজগারে উৎস সুভদ্রা দেবি। দিনমজুর করে কোনরকম সংসার চালান। যা আয় করেন তা দিয়েই সংসার খরচ, স্বামীর ঔষধ কেনা ও তার ওপর দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ। দিনমজুর করে সংসার চালাতে গিয়ে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ সেভাবে বহন করতে পারেন না এবং অর্থের অভাবে ছেলে মেয়েকে টিউশনে দিতে পারেন না তিনি। ভালো স্কুলের ব্যাগ নেই দুই ছেলে মেয়ের। ওপর দিকে স্বামী ধরেন বাবু 80% প্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও এখনো প্রতিবন্ধী ভাতা মেলেনি তার , তাদের নিদ্রা জ্ঞাপন করা ঘরটি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা।
প্রয়াস সাথীর পক্ষ থেকে জানা যায়, তারা খবর পাওয়ার পরেই ছুটে যায় সেই সংগ্রামী সুভদ্রাদেবীর পাশে। এবং আজকে প্রয়াসের পক্ষথেকে এই দুস্থ পরিবারের সংগ্রামী সুভদ্রাদেবীর হাতে একমাসের যাবতীয় সাংসারিক খরচ তুলে দেওয়া হয় ও পরিবারের সকলের জন্য আগাম পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে একটি করে নতুন বস্ত্র তুলে দেওয়া হয়। সাথে সুভদ্রা দেবির দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনার জন্য স্কুল ব্যাগ, খাতা, কলম ও টিউশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় । এবং তারা সুভদ্রা দেবিকে আশ্বাস দেয় তাদের দুই ছেলে মেয়ের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ সহ সারা বছরের যতো বস্ত্র দরকার সব দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
Social Plugin