Roy Saheb Panchanan Barma- রায় সাহেব পঞ্চানন বর্মা (১৮৬৫-১৯৩৫) 


Roy Saheb Panchanan Barma- রায় সাহেব পঞ্চানন বর্মা (১৮৬৫-১৯৩৫)


কোচবিহার রাজ্যের মাথাভাঙ্গা মহকুমার খলিসামারী গ্রামে ১৮৬৫ সালে তাঁর জন্ম। পিতা খোসাল সরকার ছিলেন একজন জোতদার এবং মাথাভাঙ্গা মহকুমা কাচারির মোক্তার। পঞ্চানন বর্মা কোচবিহার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন, কলকাতা সরকারি সংস্কৃত কলেজ থেকে সংস্কৃতে এম.এ এবং ১৮৯৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯০১ সালে তিনি রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

পঞ্চানন বর্মা বর্ণবাদী হিন্দুদের দৌরাত্ম ও নির্যাতনের শিকার স্থানীয় হিন্দুদের (রাজবংশী) ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে ক্ষত্রিয় আন্দোলন শুরু করেন। এ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায়কে ব্রাত্য (পতিত) ক্ষত্রিয় থেকে আর্যজাতি সম্ভুত পৌন্ড্র ক্ষত্রিয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। অবশ্য ১৮৯১ সাল থেকে উত্তরবঙ্গের রাজবংশীদের মধ্যে ক্ষত্রিয় আন্দোলনের সূচনা হলেও নেতৃত্বের অভাবে সে আন্দোলন যথার্থ রূপ নিতে পারে নি। পঞ্চাননের নেতৃত্বে ১৩১৭ সালের ১৮ জ্যৈষ্ঠ রংপুরে ক্ষত্রিয় সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি তার সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁর প্রচেষ্টায় রংপুর জেলা স্কুলে রাজবংশী ছাত্রদের জন্য ক্ষত্রিয় ছাত্রাবাস এবং রাজবংশীদের সাহায্যের জন্য কুড়িগ্রামে ক্ষত্রিয় ব্যাংক স্থাপিত হয়। অনুন্নত রাজবংশীদের মধ্যে অধিকার সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ক্ষত্রিয় পত্রিকা নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি চাকরিতে অধিকহারে স্বজাতি নিয়োগের প্রচেষ্টা চালান। তারই অনুপ্রেরণায় রংপুর জেলা আদালতে বহু রাজবংশী আইনপেশায় নিয়োজিত হন।

পঞ্চানন বর্মা তাঁর আইনপেশার পাশাপাশি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ১৯২০, ১৯২৩ ও ১৯২৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি রঙ্গপুর  সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন (১৩১৩-১৩১৯)।

স্বাধীনতার পূর্ববর্তীকালে উত্তরপূর্ব ভারতে মনীষী পঞ্চানন বর্মা পরিচিতি লাভ করেছিলেন ক্ষাত্র আন্দোলনের প্রাণপুরুষরূপে। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর রঙ্গপুর শাখার পত্রিকা সম্পাদক পঞ্চানন সরকার (পরবর্তীকলে বর্মা) অবহেলিত সমাজের ত্রাতারূপে চিহ্নিত হয়েছেন। ক্ষত্রিয় সমিতির কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বিশেষত রাজবংশী সমাজকে একত্রিত করবার প্রয়াস গ্রহণ করেছেন তিনি। 

অবিভক্ত উত্তরবঙ্গের রঙ্গপুরে তার সূত্রপাত ঘটলেও সুদূর অসম, মেঘালয়, বিহার এবং নেপালেও ছড়িয়ে পড়ে রাজবংশী ক্ষত্রিয় আন্দোলন। ধীরে ধীরে শিক্ষাবিস্তার, সমাজ সংস্কার, নারীরক্ষা, ক্ষত্রিয় ব্যাঙ্ক স্থাপন, ছাত্রাবাস নির্মাণ ইত্যাদি প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে ক্ষত্রিয় সমিতি গ্রহণযোগ্যতা লাভকরে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ক্ষত্রিয় সৈন্য প্রেরণ করে ইংরেজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। ভূষিত হন রায়সাহেব উপাধিতে।

তথ্য সূত্রঃ 
'বাংলা পিডিয়া'  ও অন্যান্য সূত্র থেকে প্রাপ্ত। সংবাদ একলব্য সম্পাদনা করেনি।