স্বর্ণলতা রায়কে চিঠি - ৩
রানা সরকার 

এই যে আমি কবিতা না লিখতে বসে চিঠি লিখতে বসলাম এর কোনো মানে হয় না। আমি জানি এর আগের কোন চিঠিই তুমি খুলে পড়োনি। অথচ দেখো আমি প্রতিনিয়ত কিরকম বাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়ছি, মোহতে জরাজীর্ণ এই বুঝি প্রত্যুত্তর পাবো এই ভ্রমে। আসলে সবটাই ভ্রম, মনের মধ্যে পুষে রেখেছি আস্ত একটা ভ্রম!


আজকে একটা গল্প শোনাবো তোমাকে। তরাইয়ের...




নক্সালবাড়ি যেতে হাতিঘিষায়

চা বাগানের কদম গাছের ধার দিয়ে

সরু গলি ধরে যেতে যেতে 

মাথার উপর এক ফালি চাঁদ

এইমাত্র কেউ বুঝি ঘাসের উপর

পোড়া মোবিল কিংবা পেট্রোল ঢেলে 

বন্য পশুর পোড়া চামড়ার নেশায়

আত্মগোপন করলো, আর ওদিকে

মেচী নদীর ওপর লাশ ভাসিয়ে, 

প্রেমিক গরম রক্ত মাখছে সারা দেহে

অতঃপর প্রেমিকা, জ্যোৎস্না কুয়াশা ভরা রাতে

দরজা খুলে আস্তাকুড়ের মাটির দাওয়ায় বসে...

বিশ্বাস করো ওরা পরকীয়া বোঝে না, বোঝে ভালোবাসা।

আসলে সবাই রাধার দুঃখই দেখলো। রাধা বিরহেই কাঁদলো। আর শ্যাম? শ্যাম কি মহাসুখে ছিলেন? 

তুমি কি ভাবছো, আমি তোমায় ভুলে গেছি? মাধবানন্দ রাধারাণীকে বিদায় দিয়ে সুখী হতে পারেন নি। তো আমি কোন্ ছাড়্ ! আমার গড়ের মঠ যে শূন্য থেকে শূন্যতর হয়ে চলেছে। দুঃখই সাধনা হয়ে উঠছে। আসলে ঈশ্বর, দুঃখেই আমার কলমের পাশে এসে বসেন। তাইতো ঝড় নামে, বর্ষা হয়, বিদ্যুৎ চমক দেয় আর আমি মঙ্গল গাঁথা হৃদয়ে লিপিবদ্ধ করে রাখি।

আমি যে আমার দেহে বেঁচে রয়েছি ক্রীতদাসের মতোন, সন্ন্যাসীর মতোন! আর তুমি সেই নিয়ন আলোর নিচে অন্যমনস্ক ভাবে নিজের ছায়ার দৈর্ঘ্য মাপছো। তবে কেন বারম্বার কুয়োর কালো জলে তাকাও? নিজেকে কি খুঁজে পাও? নাকি শ্যামকে খুঁজে বেড়াও?

আমি জানিনা আমার কি হয়েছে, যেদিকে তাকাই সেদিকেই তুমি, শুধু তুমি রাই। কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায় রাই, পাহাড়ের ঝর্ণায় রাই, অপরাহ্নের আলোতে রাই, নদীর বাঁকে বাঁকে রাই, রাধাজ্যোৎস্নাতেও রাই। এ যে বড় খারাপ অসুখ রাই। 


সবাই রাধা-বিরহই দেখলো। আর মাধবানন্দ-বিরহ? মাধবানন্দের দুঃখ? তাইতো মেচী নদীর ধারে কবিতা পল্লীতে প্রবেশ করে তরাইয়ের প্রেমিক হয়ে জিজ্ঞেস করত চাই- আমি কি তোমার কেউ হই? রাই...? 

পরজন্মে শচীশ হইয়া জন্ম লইব না
শচীশে বড়ই কষ্ট, শচীশে বড়ই দুঃখ



ইতি

তোর বন্ধু পৃথ্বীরাজ 

পুনশ্চঃ হেমন্তের শেষ বেলায় গোধূলিতে যদি কৃষ্ণচূড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ঊষায় কচি পাতা জন্ম লয়, তবে মনে করো আমি রয়েছি এখনও মেচী নদীর ধারে অপেক্ষায়...