গৌতম সাহা,বিধাননগরঃ
একদিকে 'আহারে বাংলা'র মাঠ থেকে চপ, কাটলেট, ফিসফ্রাই,বিরিয়াণি ইত্যাদি নানা লোভনীয় খাবারের গন্ধে  ভেসে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী আন্দোলনকারীদের অনশনস্থল আর ঠিক পাশেই টানা দশদিন ধরে অনশন করে চলেছে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের আহবানে পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকারা।  

"সম কাজে সম বেতন" তথা নায্যবেতন, নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো তৈরী ও স্থায়ী চাকুরীর দাবীতে হাইকোর্টের অনুমতি সাপেক্ষে বিধাননগরে বিকাশ ভবনের অদুরেই অবস্থান কমর্সূচী গ্রহণ করেছেন। আজ ১৪ দিন হতে চলল তাদের অবস্থান ও ১০ দিন হতে চলল তাদের আমরণ অনশন কর্মসূচী। ইতিমধ্যে মারা গেছেন রেবতী রাউত নামে মেদিনীপুরের একজন পার্শ্ব শিক্ষিকা এছাড়াও বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে একজন শিক্ষক আংশিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত।

প্রাথমিক ভাবে অবস্থান কর্মসূচী গ্রহণ করলেও প্রশাসন তাদের দাবীর পক্ষে কোন সুরাহা না করায় অবস্থান কর্মসূচী কে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচীতে রূপান্তরিত করতে বাধ্য হয়েছেন । শিক্ষিকা রেবতী রাউত বেশ কিছুদিন অনশন করে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে বাড়ি গিয়েছিলেন কিন্তু সেখানেই তিনি সেই অসুস্থতাজনিত কারণে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। আন্দোলনকারীদের দাবী পার্শ্বশিক্ষিকা হিসাবে চাকরি করেও তাদের মতো এতটাই কম বেতন রেবতীদেবী পেতেন যে তার অবস্থা"নুন আনতে পান্তা ফুরায়" প্রবাদ প্রবোচনের সঙগে সহজেই তুলনীয়। এতটাই গরীর ছিলেন তিনি ও তার পরিবার যে তার শারীরিক অসুস্থতার জন্য সঠিকভাবে চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারেননি তারা।তাদের দাবী ম্যাডামের ভাঙাচোরা মাটির বাড়িতে ছিলনা কোন জানালা বা দরজা। কিছু পুরানো কাপড়,পাতা ঢাকা দিয়েই দরজা,জানালার কাজ চালিয়ে লজ্জা নিবারণ করতে হতো তাকে ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যাদের।তাই তার এই ভাঙাচোরা পর্ণ কুঠিরটিই বর্তমান পার্শ্বশিক্ষক -শিক্ষিকা দের আর্থিক অবস্থার প্রতীকি চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে অনশনকারী শিক্ষিকার প্রয়াণে প্রশাসনের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হল এটা বলাই বাহুল্য।

এদিকে আন্দোলনকারীদের নতুন অভিযোগ প্রায় কোটি কোটি টাকার গড়মিল ধরা পড়েছে PAB রিপোর্টে।তাদের দাবী দিল্লী থেকে পাঠানো ১৫০০০/- টাকাও তারা বেতন হিসাবে পাননা।পরন্তু ১৫০০০/- টাকার সঙগে রাজ্য সরকারের আরো ১০০০০/- টাকা দেবার কথা।তারা রাজ্য সরকারের কাছে এ ব্যাপারে বিধানসভায় শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবী জানিয়েছেন।

এছাড়াও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তাদের তিন বছরের মধ্যে ধাপে ধাপে স্থায়ী করবেন বলেছিলেন অথচ কোন সদর্থক ভূমিকা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও নেওয়া হয়নি।

তাদের এই আমরণ কর্মসূচী নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট  চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, এমনকি দিল্লীতে সংসদে নানা দলের তরফ থেকে এ ব্যাপারে সরব হতে দেখা গিয়েছে।মাননীয় রাজ্যপাল তাদের পাশে দাড়িঁয়ে বার্তা দিয়েছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গণ সংগঠন প্রতিদিন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন বা নানা ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।তাই রাজ্য সরকারের কাছে এবিষয়ে অস্বস্তি বেড়েই চলেছে।

তবে আজ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দাবী করেন দিল্লী থেকে তাদের কাছে সামগ্রিক ভাবে যে অর্থ আসে সেটা থেকেই পার্শ্বশিক্ষক -শিক্ষিকাদের বেতন দেওয়া হয়।এদিকে আন্দোলনকারীদের দাবী তারা দিল্লী থেকে পাঠানো অর্থ থেকে নায্য বেতন পাচ্ছেন না। তাই দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকার সঠিক অর্থে কত টাকা পাঠাচ্ছেন এ রাজ্যের পার্শ্ব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সেটা জানতে পারলেই  এই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি পাল্টে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে যৌথ মঞ্চের আহবায়ক মধুমিতা বন্দোপাধ্যায় ঐক্য মঞ্চের এই কমর্সূচী কে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হিসাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ত্ব তাদের পাশে এসে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন এতে তারা আনন্দিত কিন্তু কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে এই মঞ্চ ব্যবহার না করার বিষয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলিকে বারবার অনুরোধ করেছেন।

এদিকে অনশনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শারীরিক অবস্থার ক্রমশঃ অবনতি হচ্ছে।তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন হাসাপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন চিকিৎসকরা।বিধানসভার বিরোধী দলনেতা মাননীয় আব্দুল মান্নান সাহেব মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কে এই করুণ অবস্থার নিরসনে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙগে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান সূত্র বার করতে।

কেন্দ্র সরকারের আর্থিক সাহায্যপ্রাপ্ত একদা সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে নিয়োগ প্রাপ্ত পার্শ্বশিক্ষক দের আর্থিক দায়ভার নিয়ে রাজ্য- কেন্দ্রের চাপানউতোর রাজ্যের প্রায় বিয়াল্লিশ হাজার পার্শ্বশিক্ষক -শিক্ষিকার ভাতা প্রদান ও কর্মজীবনে নতুন করে সংশয় তৈরী হলো বলে মনে করা হচ্ছে।

নিয়মিত আপডেট পেতে নজর রাখুন আমাদের ফেসবুক পেজে -



like our facebook page for more update