বিজয়া দশমীর উচ্ছ্বাসের মাঝে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ শহরে বাড়ির ভিতরে স্কুল শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পাল, তাঁর সন্তান সম্ভবা স্ত্রী বিউটি মণ্ডল পাল ও তাঁদের নাবালক ছেলে অঙ্গন পালকে খুনের ঘটনায় এই মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি থেকে সোশাল মিডিয়া।
এক সপ্তাহ পর কিনারা হল জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের। সপরিবারে শিক্ষক খুনে গ্রেপ্তার করা হল মূল অভিযুক্তকে। ধৃত যুবকের নাম উৎপল বেহরা। পেশায় রাজমিস্ত্রি। সাগরদিঘির সাহাপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। পুলিশ সূত্রে খবর, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক লেনদেন। এছাড়া ব্যক্তগত শত্রুতার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ।
সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের পর থেকে ধৃত উৎপলকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। প্রশ্নের মুখে ভেঙে পড়ে উৎপল। জেরায় সে তিনজনকে খুন করার কথা স্বীকার করে নিয়েছে বলে খবর। জেরায় সে এও জানিয়েছে, তার সঙ্গে বন্ধুপ্রকাশের আর্থিন লেনদেন ছিল। টাকাপয়সা নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদও হয়েছে। সেই কারণেই খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় সে। বন্ধুপ্রকাশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কথা স্বীকার করেছেন উৎপল বেহরারা মা-ও। যদিও ছেলে নির্দোষ, সে খুন করেনি বলে দাবি করেছেন তিনি। উৎপলের মায়ের বক্তব্য বন্ধুপ্রকাশের থেকে প্রায় ৪৮ হাজার টাকা পেত উৎপল। সেই কারণেই বন্ধুপ্রকাশকে ফোন করে সে। আর সেটাই কাল হয়। উৎপলের মায়ের অভিযোগ, সেই কারণেই তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর ছেলেকে। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, বন্ধুপ্রকাশের ফোনে শেষ কলটি ছিল উৎপলের। এছাড়া আরও কিছু ক্লুয়ের ভিত্তিতে উৎপলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবী উঠেছে খুনির মুখ এবং পরিচয় সামনে আনা হোক। 'আমাদের মুর্শিদাবাদ' নামের একটি ফেসবুক পেজ ইতিমধ্যে এই দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। কেন খুনির মুখ প্রকাশ্যে আনা হচ্ছেনা এই নিয়েও জোর প্রশ্ন তুলেছে নেটিজেনরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান- "জিয়াগঞ্জ গণহত্যার ঘটনায় অনেকদিন পর শিক্ষক ও ভোটকর্মী রাজকুমার বাবুর কথা মনে পড়লো। জিয়াগঞ্জের ঘটনায় পুলিশের বক্তব্য অনুসারে একটা পাকাটির মতো ছোকড়া নাকি পাঁচ মিনিটে তিনজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে, দুইজন অ্যাডাল্ট, তারা বাধা দেয়নি? প্রথমে ঋণ, পরকীয়া ইত্যাদি আনলেন কিন্তু সেসব বাদ দিয়ে  শেষমেশ গল্পটাকে রোমহর্ষক বানালেন বটে, তবে অতি দরকচা হয়ে গেছে।"
শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৭ অক্টোবর মিছিলের পরিবর্তে নবান্নে প্রতিনিধিমূলক ডেপুটেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ কেননা, আজ মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের পক্ষ থেকে জিয়াগঞ্জের শিক্ষক হত্যার ঘটনায় উৎপল বেহারা নামে এক ব্যক্তিকে মূল অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ধৃতকে আদালতে তোলা হচ্ছে৷ ধৃত ওই ব্যক্তি অপরাধ স্বীকার করেছে৷ এ নিয়েও নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷ পুলিশ বলছে, ধৃত রাজমিস্ত্রি পাঁচ মিনিটে তিন জনকে খুন করছে৷ যদিও এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মৃত্যের পরিবার৷ মৃত শিক্ষকের স্ত্রীর বিউটি মণ্ডল পালের পরিবারের তরফে পুলিশের যুক্তি উড়িয়ে সিবিআই তদন্ত চেয়েছে৷ শিক্ষক হত্যাকাণ্ডে সাত দিন পর প্রথম গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটলেও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না শিক্ষকদের একাংশ৷