বারো মাসে তেরো পার্বণ কথাটা তো নিশ্চয়ই শুনেছেন, দুর্গা পুজো শেষ হতে না হতেই লক্ষ্মীপুজো লক্ষ্মী পুজো শেষ হলেই অমাবস্যা এগিয়ে আছে তার সাথে সাথে হিড়িক পড়ে যায় বাজি কেনার কারণ কালী পুজো টা তো চলেই আসে। সে কালীপুজোয় হোক বা ক্রিকেট ম্যাচ নতুন বছরের আগমন ভরসা তো একটাই বুড়িমার চকলেট বোম। যদিও শব্দবাজী নিষিদ্ধ বর্তমানে। 

যারা আট বা নয়ের দশকে বেড়ে উঠেছে, পুজোতে বুড়িমার বোম ছিল সব থেকে বড় ব্র্যান্ড। এই বুড়িমা কে তা নিয়ে কৌতূহল অনেকের  ওনার জীবন। ওনার সংগ্রাম। অদ্ভুত, অভূতপূর্ব বললে কম বলা হয়।

ওনার আদি বাড়ি ফরিদপুরে। নাম অন্নপূর্ণা দাস। ১৯৪৮ সালে উদ্বাস্তু হয়ে উত্তর দিনাজপুরে যখন ক্যাম্পে উঠলেন সাথে দুই ছেলে মেয়ে। স্বামী নেই। শাক সব্জি, ঘটি বাটি যা পারেন, তাই বেচে কোনওরকমে সংসার চালিয়েছেন। অভুক্ত থেকেছেন অধিকাংশ সময়।

সেই কঠিন পরিশ্রমের মধ্যেই বিড়ি বাঁধা শিখলেন সনাতন মন্ডলের কাছে। অভাবের চাপেই শিখেছিলেন কীভাবে বাচঁতে হয়। আস্তে আস্তে গড়ে তুললেন বিড়ি বাঁধার কারখানা। এরপরে বেলুড়ে মেয়ে জামাই'এর কাছে এসে, হরকুসুম গাঙ্গুলীর কাছ থেকে শিখলেন আলতা সিঁদুর বানানোর কাজ। আস্তে আস্তে অন্নপূর্ণা আলতা সিঁদুর ব্রান্ডও তৈরি হল।


অবশ্যই তার রাজ্য জোড়া খ্যাতি বুড়িমার চকলেট ব্রান্ডে। এখানে তার গুরু বাজি বিশেষজ্ঞ আকবর আলি। পেয়ারীমোহন মুখুজ্যে রোডে তার তৈরি বাজির কারখানা এখন শিবকাশির বাজির সাথে পাল্লা দিচ্ছে। উনি শিবকাশিতেও কাটিয়েছেন বহুদিন বাজি তৈরি শেখার জন্য।

যে ব্যবসাতে হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন। না, তার আইআইটি, আইআইএমের কোনও ডিগ্রি ছিল না। ম্যাট্রিক পাশও না উনি। ব্যবসায়িক পরিবারে জন্ম, তাও না। নেহাত অন্নসংস্থানের চাপে ফেরি করা শুরু। 


তাহলে কোন জাদুবলে সফল বুড়ি মা? যে কারণে বিল গেটস বা মার্ক জুকারবার্গ সফল ঠিক সেই কারণেই সফল বুড়ি মা। সোজা কথায় ১০০% হ্যান্ডস অন। যা কিছু করেছেন, সেই তৈরি করা থেকে বেচা নিজের হাতে।

১৯৯৫ এ বুড়িমার মৃত্যুর পর ধিরে ধিরে তার পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ নাতিরা ব্যবসায় যুক্ত হয়। যদিও পরে বছর থেকেই শব্দ বাজি হিসেবে চকলেট বোমকে কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করার পথে হাঁটতে শুরু করে সরকার। ধিরে ধিরে পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে যায় চকলেট বোম জাতীয় শব্দবাজী গুলি। কিন্তু বুড়িমার চকলেট বোমের স্মৃতি আজো দগদগে সাধারণ মানুষের মনে।

source: internet