অগ্নি প্রতিরোধ নিয়ে কিছু কথা
দীপ কুমার রায় শিক্ষক, ধুবুলিয়া শ্যামাপ্রসাদ শিক্ষায়তন, নদীয়া ।
দীপ কুমার রায় শিক্ষক, ধুবুলিয়া শ্যামাপ্রসাদ শিক্ষায়তন, নদীয়া ।
সচেতনতাই একমাত্র পথ যার মাধ্যমে আমরা বিপর্যয় মোকাবিলা করতে পারি। একসময় মানুষ পাথরে পাথরে ঘর্ষণ করে আগুনের আবিষ্কার করেছিল। কিন্তু এই আগুনই আবার অসাবধানতার জন্য কেড়ে নিতে পারে আমাদের সর্বস্ব। তাই সভ্যতা আবিষ্কারের সময় যা আশীর্বাদ মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যেতে পারে অভিশাপ । বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ,বিদ্যালয় ,বিভিন্ন শপিং মলে কার্যক্রম চালাতে গেলে অনুমতি নিতে হয় দমকল বিভাগের পক্ষ থেকে। অনুমতিও নেওয়া হয়, তবে সবাই নেন এমন নয়।প্রথমদিকে ঠিকঠাক থাকলেও পরবর্তীতে ব্যাপারটা নিয়ে খুব একটা বেশি মাথা ঘামান না । প্রথমত: এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে পারদর্শী লোকও নেই, যে বিপদের মুহূর্তে অগ্নি নির্বাপকের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চালনা করবেন । দ্বিতীয়তঃ অনেক প্রতিষ্ঠানেই যে অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম আছে তা হয়তো মেয়াদ উত্তীর্ণ বা সচল নয় । সরকারের পর্যবেক্ষণ সারাবছর চললেও এ বিষয়ে বেশি তদারকি শুরু হয় যখন কোন বিপর্যয় ঘটে যায় । কিন্তু এই বিষয়ে কিছুটা হলেও আমরা যদি সচেতন থাকি তাহলে বিপর্যয় কম ঘটবে ও ঘটলেও সহজেই আমরা তার মোকাবিলা করতে পারব । সচেতনতার মাধ্যমে হয়ত দুর্ঘটনার সংখ্যা খুব তাড়াতাড়ি কমানো যাবে না কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা জনসচেতনতা তৈরি করতে পারলেই আগুন লাগার ফলে যে ক্ষয়-ক্ষতি ও সম্পত্তি নষ্ট হয় তা কিছুটা হলেও কমানো যেতে পারে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কি কি বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি?
১) বড় বড় বাড়ি তৈরি করলে অবশ্যই সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে কাজকর্ম করান ও দমকল বিভাগের অনুমতিপত্র গ্রহণ করুন ।
২) বাড়ির মধ্যে দাহ্য পদার্থ যেমন-পেট্রোল , ডিজেলের মত তরলের মাধ্যমে আগুন খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। তাই এগুলো বাড়িতে মজুত রাখবেন না ।
৩) ধূমপানে বিরত থাকুন, যদি করেও থাকেন করার পর শেষ অবধি সচেতন থাকুন ও নিভিয়ে ফেলুন ।
৪) বাচ্চাদের হাতের কাছ থেকে দেশলাই, গ্যাসলাইট দূরে রাখুন, খেলাচ্ছলে সেগুলো দিয়ে আগুন ধরার সম্ভাবনা প্রবল।
৫) রান্না করার সময় খোলা মেলা রান্না ঘরই শ্রেয় । ঢিলেঢালা পোশাক পরা বাঞ্ছনীয় নয়। মাঝে মাঝে গ্যাস সরঞ্জাম কতৃপক্ষকে ডেকে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
৬) বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন । আবর্জনা বেশি থাকলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে ।
৭) বৈদ্যুতিক লাইনের সঙ্গে সর্বদা MCV রাখা উচিত ও মাঝে মাঝে সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ানের মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়ে নিন।
৮) বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইনের মেইন মিটার যেখানে আছে সেখানে আবর্জনা রাখবেন না । খোলামেলা জায়গাতে মেইন সুইচ লাগানো উচিত।
৯) বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের করার পর তা বন্ধ করে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখুন।
১০) অফিস বা বাড়ি বন্ধ হলেই মেইন সুইচ বন্ধ করে বের হওয়া উচিত।
১১) অফিস ঘরের কাজের জায়গার পাশে কখনই রান্না করা উচিত নয় বা দাহ্য পদার্থ মজুত রাখা অনুচিত।
১২) অফিস বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গুলির কর্মীদের কে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
১৩) বহুতলের ক্ষেত্রে বেশি সিঁড়ি রাখা প্রয়োজন ও আগুন লাগলে বেরিয়ে যাওয়ার পথ আগের থেকেই মার্কিং করে রাখা জরুরি।
১৪) বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে মিড ডে মিলের ঘর শ্রেণিকক্ষের সঙ্গে রাখা উচিত নয় ।
১৫) অগ্নি-নির্বাপক সরঞ্জাম খোলামেলা জায়গায় রাখতে হবে।
১৬) দমকল বিভাগ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের ফোন নাম্বার প্রকাশ্যে লাল কালি দিয়ে লিখে রাখা জরুরি।
১৭) বাড়ির সদস্যদের মধ্যে আগুন সম্পর্কে একপ্রস্থ আলোচনা করে নিন ।
এছাড়াও যে গুলি করলে আমরা এই বিপর্যয় থেকে মুক্ত হতে পারব সেদিকে আমাদের সর্বদা খেয়াল রাখা উচিত।
ঋণ:
১) প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ সংস্থা, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ।
২)দমকল বিভাগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊