শঙ্কর পাণ্ডে, গোসাবা (দঃ২৪পরগণা), ১৫ অক্টোবর ২০১৯: গোসাবা অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম নাম "সোনা গাঁ"।জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বিদ্যাধরী নদী, তার ঠিক অপর পারে এই সোনা গাঁ গ্রাম। অল্প কিছু দূর এগিয়ে গেল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ সুন্দরবন।এই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে ভুটভুটি ছাড়া আর কিছুুই নেই তাই এই অঞ্চলের জনসাধারণকে অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করতে হয়। আবার তার উপরে  সুন্দরবন কাছে হওয়ার দরুণ প্রায়ই লোকালয়ে বাঘ মামার আবির্ভাব ঘটে। তাই এই অঞ্চলের জনসাধারণকে সদা সজাগ থাকতে হয়। তাদের এই সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস কেউই উল্টে দ্যাখে না, ওদের জীবন যাপনের খোঁজ কেউ রাখে না,"ওরা কাজ করে নীরবে, আর থাকে নিরবে"। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যে থেকেও ওদের অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনেছে প্রতিকূল পরিস্থিতি।
তাই তো একটু আনন্দ,একটু বিনোদন,একটু অবকাশ পেতে এই প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ জন মেতে উঠেছে মা লক্ষ্মীর আরাধনায়। আজ থেকে ৪৫ বছর আগে এই এলাকায় লক্ষ্মী পূজোরে প্রচলন করে ছিলো এই সোনা গাঁ গ্রামের মানুষজন, যা প্রায় চার দশকের বেশি সময় অতিক্রান্ত। পরবর্তীতে এই পূজাকে আরো যাগজমক করতে এগিয়ে আসে স্থানীয় ক্লাব সবুজ সংঘ এবং মাঝের পাড়া তরুন বৃন্দ। বর্তমানে এই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো সার্বজনীন রুপ নিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বহু মানুষ ভিড় জমায় পূজোর দিন গুলোতে। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা উন্নত হয়েছে তাই মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদ্যোক্তারা, যাতে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন একটু আনন্দ, অবকাশের সুযোগ পায়। এমনকি কলতলার স্বনামধন্য যাত্রা পালার ব্যবস্থা থাকে পুজোর দিন গুলোতে।
বর্তমান বছরে তারা আয়োজন করেছে মহতী রক্তদান শিবির, যা ঐ এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।উদ্যোক্তারা বলেন যে আমদের অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়, যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনে তেমন উন্নত নয় তবুও আমরা কোলকাতা থেকে বিশিষ্ট ডাক্তার বাবুদের নিয়ে এসে মহতী রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছি। এলাকার জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আমাদের এই কর্মসূচি। যাতে তারা রক্ত দানের গুরুত্ব বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে পারে। স্হনীয়দের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন-আমরা বুঝি যে রক্ত দান মানে জীবন দান, তাই এই রক্ত দানের গুরুত্বটা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের সকল মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আমরা এই রক্ত দান শিবিরের আয়োজন করেছি। তিনি আরো বলেন যে এ বছর ১০০ জন রক্ত দাতা স্বেচ্ছায় রক্তদান দান করেন এবং আমরা তাদেরকে বিশেষ কিড্ প্রদান করে সন্মান জানাই ক্লাবের পক্ষ থেকে। পুজোর দিন গুলো এবং মহতী রক্তদান শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা, প্রত্যেকের উপস্থিতি সমগ্র অনুষ্ঠানটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে ।