কেমন আছেন তাঁরা ?
শুভাশিস দাশ
দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেলো স্বাধীনতার l কতো জল গড়িয়ে গেলো গঙ্গা যমুনায় l স্বাধীন দেশে আরও কতো কী ঘটলো ! এক দেশ কতো টুকরো হলো l কতো রক্ত পাত ,কতো লাঞ্ছনা !
কত বার সাধারণ নির্বাচন এলো l আবার আর একটা নির্বাচন উপস্থিত !সপ্তদশ নির্বাচন l সাড়া দেশের সাথে শুরু হয়েছে এই রাজ্যেও ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠান !নেতারা আসছেন ,মঞ্চ ফাটিয়ে বক্তব্য রাখছেন আর বইয়ে দিচ্ছেন হরেকরকম প্রতিশ্রুতির বন্যা !অথচ দেশে
শিশু ধর্ষণ নারী ধর্ষণ ,বেকারী আর অনাহার ক্লিষ্ট মানুষের সারিবদ্ধ মিছিল !নিজ ভূমে পরবাসী হবার ফরমান জারি হলো !আজও সবার জন্য খাদ্যের তৈরি হলোনা কোন আইনি দলিল !
তবু ভোট আসছে ,আসবে l বিভিণ্ন দলীয় পতাকায় মুড়ে রবে হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী l
এই দেশের স্বাধীনতার জন্য কী তাঁরা স্বপ্ন দেখেছিলেন ?তাঁরা ,ওই যাঁরা নিজের জীবন বাজী রেখে দেশ মাতৃকার পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন !না !এই স্বাধীনতা তাঁরা চান নি l দুর্ভাগ্য ক্রমে আমি এক স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারের ছেলে l হয়তো পাঠক ভাবছেন কেন দুর্ভাগ্য ?
বাবার জন্য গর্ব বোধ করি অন্তরে l কিন্তু যে দেশের জন্য আমার বাবা এবং সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী রা তাঁদের যৌবনের টগবগে দিনগুলো দেশের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন তাঁদের কতটা সন্মান দিয়েছে এই দেশ ?এই দেশের নেতারা ?
ওই একখান তাম্রপত্র আর পেট চালানোর জন্য কিছু মাসহরা !অনেকে সেটাও নেননি !
তাও তাঁদের জীবদ্দশায় !তারপর ?
তাঁদের পরিবার কেমন আছে কিভাবে আছে কেউ জানে না আর জানবার আগ্রহ থাকারও কথা নয় l
নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বেতন বেড়ে বেড়ে লক্ষ হোক ,লক্ষ থেকে কোটিতে দাঁড়াক তাতে দেশেরই তো মঙ্গল !কেননা তাঁরা দিনরাত্রি দেশের কথা ভাবেন !আর যাঁরা এই পরাধীন দেশটাকে স্বাধীন করল ?যাঁদের জন্য দেশ নেতাদের গদিটা সুরক্ষিত হলো সেই সব পরমাত্মারা ?
না না কোন ক্ষোভ নেই !
আর সত্যি তো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবারের প্রতি দৃষ্টি দেবার সময় কই নেতাদের ?
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রায় কেউই বেঁচে নেই তবু দুএকজন যাঁরা আছেন তাঁরাও অনেকেই শয্যাশায়ী l অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবার কী অবস্থায় দিনগুজরান করছেন তা একমাত্র তারাই জানেন !
১৯৭৬ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী র কাছে সর্বভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী মৈত্রী চক্র থেকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল কয়েক দফা দাবির ভিত্তি তে l আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত থাকার l তাতে বলা ছিলো স্বাধীনতা সংগ্রামীর ফ্যামিলি কে ন্যাশনাল ফ্যামিলির মর্যাদা দিতে হবে l ইন্দিরা জী বলেছিলেন -এটা আমি বিবেচনা করব l কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তিনি আততায়ীর হাতে নির্মম ভাবে মারা গিয়েছিলেন l এর পর ১৯৯৭ সালে আন্দামানে এক অনুষ্ঠানে তদানিন্তন রাষ্টপতি ড :শংকর দয়াল শর্মা কে এই ব্যাপারে সরাসরি বলা হলে তিনি একেবারে নাকচ করে দিয়েছিলেন l
সত্যি বিচিত্র আমাদের দেশ !
যাঁদের আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা তাঁদের পরিবার পরিজনরা সত্যিই হতভাগ্য !
কেন সরকার কী পারেনা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবার গুলোর জন্য কিছু একটা ব্যাবস্থা করতে l চাকুরী ক্ষেত্রে দু একটি কোটা রাখতে ?
পদ্মশ্রী ,বঙ্গ রত্ন কতো রত্নের ছড়াছড়ি !অথচ এঁদের কপালে কোন শ্রী জোটার কথা কেউ একবার বিবেচনাও করলো না !
আসলে গনতন্ত্র বলে কথা !ভোট বড় বালাই !এই ভোটের রাজনীতিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পাল্লার যে ওজনই নেই !
আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে কলমের তাই সেই সূত্র ধরেই অনেকের বলার কথা এবং আমারও কথা বললাম l
সারা দেশে উত্সবের মেজাজে ভোট উত্সব শুরু হয়েছে l প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই নির্বাচন !আবার কেউ না কেউ বসবেন দিল্লির মসনদে !যাঁরাই ক্ষমতায় আসুন ,বলবো অন্তত একটু বিবেচনা করবেন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবার গুলোর কথা !যখন মিডিয়ায় দেখি কোন স্বাধীনতা সংগ্রামী অনাহারে আছেন তখন সত্যিই লজ্জায় মুখ লুকাতে হয় !আমরা কি স্বাধীন দেশের নাগরিক ?এটা কি নেতাজী ,ক্ষুদিরাম মাস্টার দার দেশ ?
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊