বিশ্বজিৎ বর্মন, ১৮  আগস্টঃ 
১৫ই আগষ্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার এই স্বাধীনতার গল্পটা একেবারেই অন্যরকম । 1947 সালের 14ই আগষ্ট মধ্যরাতে রেডিও মারফত ঘোষণা করা হয় মুর্শিদাবাদ জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির কথা । সেই অনুযায়ী 15ই আগষ্ট থেকে 17ই আগষ্ট এই তিন দিন ধরে মুর্শিদাবাদ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের আওতায়।
1947 সালের 20ই জুন বাংলা বিধানসভায় বঙ্গ বিভাগের প্রস্তাব প্রথম গ্রহন করা হয়।এরপর 30শে জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সীমানা কমিশনের চার জন সদস্য নির্বাচিত হন। তারা হলেন বিজন কুমার মুখোপাধ্যায়, চারু চন্দ্র বিশ্বাস, আবু সালেহ মহ: আক্রম ও এস.এ.রহমান। তারা প্রত্যেকেই ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি। কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন সিরিল জন রাডক্লিভ। সেই সীমানা নির্ধারণ হয়েছিল পুরোপুরিই ধর্মের ভিত্তিতে। তখন জেলার 56% ই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের তাই এই জেলা পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। জেলার বেশীরভাগ মানুষই মেনে নেয়নি এই ধরনের বিভাজন। উভয় সম্প্রদায়ের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের প্রচেষ্টায় বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটল না।সমস্ত জেলা জুড়ে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়। তৎকালীন নবাব ওয়াসিফ আলী মির্জা নিজে এই জেলাকে ভারত মুক্তির জন্য জোর সওয়াল করেছিলেন।  অন্যদিকে 15ই আগস্টের এই ঘটনার দিনেই কংগ্রেস নেতা শশাঙ্ক শেখর সান্যাল ও জনসংঘের নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ও মুর্শিদাবাদ জেলাকে ভারতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে তৎপর হন। এছাড়াও হিন্দু মহাসভার থেকেও দাবী করা হয়েছিল। তিন দিন টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে 17ই আগষ্ট মধ্যরাতে সরকারি খাতায় ভারত ইউনিয়নে যুক্ত হয় মুর্শিদাবাদ জেলা। তবুও মানুষজন পুরোপুরি নিশ্চিন্ত ছিলেন না। পরের দিন 18ই আগষ্ট আতঙ্কের ভয় কাটিয়ে গোটা জেলা ভারতে প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করে। স্বাধীনতা লাভের পর মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষের অজানা আশঙ্কার তিন দিনের কথা আজও ভোলার নয়।