বড়দিন–বর্ষবরণের আগে পাহাড়–সমতল গাড়ি সংঘাতে বিপন্ন উত্তরবঙ্গের পর্যটন
নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং: বড়দিন এবং বর্ষবরণের ঠিক আগে যখন উত্তরবঙ্গের পাহাড় পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করার কথা, ঠিক তখনই এক গভীর অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঘনীভূত হয়েছে। পাহাড় ও সমতলের গাড়িচালকদের দীর্ঘদিনের শীতল বিরোধ এবার প্রকাশ্য সংঘাতে রূপ নিয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পে।
পাহাড়ের সংযুক্ত চালক সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সমতল এলাকা থেকে আসা পর্যটকবাহী গাড়িগুলো সরাসরি টাইগার হিল, রক গার্ডেন ও পিস প্যাগোডার মতো জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে চলে যাচ্ছে। এতে পাহাড়ের স্থানীয় চালকদের রোজগার মার খাচ্ছে। তাঁদের দাবি, সমতলের গাড়িগুলো নির্দিষ্ট পয়েন্টে পর্যটক নামিয়ে দেবে এবং সেখান থেকে স্থানীয় পাহাড়ি গাড়িতে পর্যটকরা সাইট সিয়িং করবেন। এই দাবি আদায় করতে গিয়ে পাহাড়ের চালক সংগঠনগুলো সমতলের গাড়ির ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
পাহাড়ের এই ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তীব্র পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে সমতলের গাড়িচালক সংগঠনগুলো। আজ থেকে সমতল এলাকা (শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন অঞ্চল) থেকে দার্জিলিংয়ের কোনও পাহাড়ি গাড়িকে যাত্রী বা পর্যটক তুলতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সমতলের চালক নেতা সমীর পান্ডে অভিযোগ করেছেন, পাহাড়ে গেলে তাঁদের চালকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, "পাহাড়ে সমতলের গাড়ি ঢুকতে না দিলে, সমতলেও পাহাড়ের গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না।"
এই অচলাবস্থায় সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন সাধারণ পর্যটকরা। জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির পক্ষে সম্রাট সান্যাল ও দীপক মণ্ডল জানিয়েছেন, টাইগার হিলের মতো পয়েন্টে যদি পর্যটকরা যেতে না পারেন, তবে গোটা ভ্রমণের আনন্দই মাটি হয়ে যাবে। এর ফলে প্রচুর বুকিং বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা পাহাড়ের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পারে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ময়দানে নেমেছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তিনি ইতিমধ্যে জিটিএ (GTA) প্রধান অনীত থাপার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে একটি মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে পাহাড়ের চালক সংগঠনের মুখপাত্র রাহুল শারসা স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁরা আলোচনার পক্ষে থাকলেও বাণিজ্যিক স্বার্থে সমতলের গাড়ির সাইট সিয়িং কোনওভাবেই বরদাস্ত করবেন না।
ইতিমধ্যেই উত্তেজনার আঁচ পৌঁছেছে দার্জিলিং থানায়। একাধিক অভিযোগ ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। উৎসবের এই মরসুমে পর্যটনের এই ‘লাইফলাইন’ যদি সচল না হয়, তবে কেবল আর্থিক ক্ষতিই নয়, বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে উত্তরবঙ্গের ভাবমূর্তিও বড়সড় ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার, প্রশাসন কতটা দ্রুত এই ‘গাড়ি-সংঘাত’ মিটিয়ে পাহাড়ের পথে চাকা ঘোরানোর নিশ্চয়তা দিতে পারে।

0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊